শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে নৌচলাচল ব্যাহত, দুর্ভোগে যাত্রীরা

বৈরী আবহওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত নৌচলাচল বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। প্রথম আলো ফাইল ছবি
বৈরী আবহওয়ায় শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত নৌচলাচল বন্ধ ছিল। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বৈরী আবহাওয়ার কারণে মুন্সিগঞ্জের লৌহজংয়ের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের শিবচরের কাঁঠালবাড়ি ঘাটে সব ধরনের নৌযান চলাচল বাধাগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত নৌ চলাচল বন্ধ থাকায় ঘাট এলাকায় যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র যানজটের।

ঘাট-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার সকালে হঠাৎ ঝোড়ো হাওয়া শুরু হয়। এতে নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ দেখা যায়। সকাল পৌনে ৯টার দিকে মাঝপদ্মায় যাত্রীবাহী স্পিডবোট উল্টে গিয়ে এক শিশু নিখোঁজ হয়। দুর্ঘটনা এড়াতে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ রাখা হয়। এর কিছুক্ষণ পর ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে ঘাট এলাকায় যানবাহন ও যাত্রীদের জটলা সৃষ্টি হয়। বিকেল পৌনে ৫টা পর্যন্ত ৬০০ যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় ছিল। স্বাভাবিক সময় এই পথে ১৭টি ফেরি ও ৮৭টি লঞ্চ ও আড়াই শতাধিক স্পিডবোট চলাচল করে। পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বিকেল পৌনে চারটার দিকে আটটি ফেরি দিয়ে স্বল্প আকারে চলাচল শুরু হয়।

বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. আলীমুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বৈরী আবহাওয়ার কারণে ১৭টি ফেরির মধ্যে মাত্র ৮টি ফেরি ব্যবহার করা হয়েছে। প্রচুর বৃষ্টি এবং নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ ও স্রোত থাকায় ফেরিগুলো খুব সাবধানে চলাচল করতে হচ্ছে। ফেরি চলাচলে স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশ সময় লাগছে। তাই ঘাট এলাকায় দুর্ভোগ বেড়েছে। তিনি বলেন, লঞ্চ ও স্পিডবোট বন্ধ থাকায় যাত্রীদের ভয়ংকর চাপ বেড়েছে ফেরিঘাটে। ফেরি দিয়ে যানবাহন পার করা যাচ্ছে না। যাত্রীরা সকাল থেকে পদ্মা পাড়ি দেওয়ার অপেক্ষায় আছেন। তাই ঘাটে ফেরি থামা মাত্রই যাত্রী উঠে কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। যানবাহনের চালকদেরও দুর্ভোগ বাড়ছে।

মো. শিহাব সরকার নামে এক যাত্রী বলেন, ‘ঈদের সময় ঘাটে প্রচুর দুর্ভোগ ছিল। তাই ঈদের পর বরিশালে গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিই। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকার যাত্রাবাড়ী থেকে শিমুলিয়া ঘাটে আসি। সাধারণত লঞ্চেই পদ্মা পাড়ি দিই। নৌযান চলাচল বন্ধ থাকায় প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা ঘাটেই বসেছিলাম। ফেরি চলাচল শুরু হলে লঞ্চের অপেক্ষায় না থেকে ফেরিতেই উঠে যাই।’

শফিকুল ইসলাম নামের এক যাত্রী বলেন, ‘সচরাচর স্পিডবোটেই পদ্মা পার হন তিনি। নদীতে প্রচণ্ড ঢেউ। সকালে স্পিডবোট দুর্ঘটনায় একজন নিখোঁজ আছে। তাই ফেরিতে করেই নদী পার হচ্ছি। আমার মতো সব যাত্রীই এখন ফেরি দিয়ে পদ্মা পার হচ্ছে।’

যশোরগামী প্রাইভেট কারের চালক রাসেল শিকদার বলেন, ‘যাত্রীদের চাপের কারণে গাড়ি নিয়ে ফেরিতে ওঠা যাচ্ছে না। তাই ড্রাইভারকে গাড়িতে রেখেই ফেরিতে উঠছি।’

হা-মীম পরিবহনের চালক সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘এমনিতেই ঘাটে ফেরি কম। তার মধ্যে প্রতিটি ফেরিতেই মানুষ। গাড়ি তো দূরে থাক, মানুষের কারণে পা ফেলা যায় না। আমার বাসের যাত্রীরা বাস রেখেই ফেরিতে চলে গেছে।’

শিমুলিয়া ঘাটের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক (টিআই) মো. হিলাল উদ্দিন বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ছয় ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধই ছিল। এ কারণে ঘাটে যানবাহনের চাপ অনেক বেড়ে গেছে। ফেরিতে যানবাহন উঠতে না পারায় চাপের মাত্রা আরও অনেক বেশি বেড়েছে। ঘাটে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ছয় শতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় আছে।