গাজীপুরে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশের টুকরাভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে পালালেন স্বামী: এসপি

স্ত্রীর জমানো ৪০ হাজার টাকা চেয়েছিলেন স্বামী। স্ত্রী সেই টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানানোয় খাবারে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অচেতন করে তাঁকে খুন করেন স্বামী। পরে লাশ টুকরা টুকরা করে নদীতে ফেলে পালিয়ে যান। পালিয়ে গিয়েও অবশ্য বাঁচতে পারেননি, পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন তিনি। ঘটনাটি ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলায়।

গাজীপুরের পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার আজ বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান। গ্রেপ্তার ব্যক্তির নাম মো. মামুন (২৫)। তিনি গাজীপুরের কাপাসিয়া উপজেলার বড়বাড়ী গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে। নিহত নারীর নাম সুমি আক্তার (২৭)। তিনি নেত্রকোনার পূর্বধলা উপজেলার দেবকান্দা গ্রামের নিজাম উদ্দিনের মেয়ে।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, সুমি একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করে ৪০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। মামুন সেই টাকা চাইলে সুমি তা দিতে অস্বীকৃতি জানান। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে ৮ আগস্ট রাতের খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে সুমিকে অচেতন করেন মামুন। রাত একটার দিকে শ্বাসরোধে সুমিকে হত্যা করেন। পরে ধারালো একটি চাকু দিয়ে মৃতদেহ টুকরা টুকরা করেন। এরপর ঘরের ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ারে লাশের পাঁচটি টুকরা পলিথিনে পেঁচিয়ে রেখে বাকি টুকরাগুলো ব্যাগে ভরে ঘর থেকে বেরিয়ে যান মামুন। পরে কাপাসিয়ার সিংহশ্রী এলাকায় শীতলক্ষ্যা নদীতে লাশের টুকরাভর্তি ব্যাগটি ফেলে দিয়ে গা ঢাকা দেন মামুন।

পুলিশ সুপার শামছুন্নাহার আরও জানান, অভিযান চালিয়ে গতকাল সাভারের কবিরপুর এলাকা থেকে মামুনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের পর পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করে প্রাথমিক বর্ণনা দেন মামুন। ড্রয়ার থেকে উদ্ধার করা মাংসের টুকরাগুলো পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

এর আগে গতকাল সুমির ছোট বোন বৃষ্টি আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, অফিস থেকে ঈদের ছুটি পেয়ে গত বৃহস্পতিবার রাতে বাবার বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল সুমির। কিন্তু সেদিন বাবার বাড়িতে না যাওয়ায় সুমির স্বামী মামুনকে ফোন করেন তিনি। জানতে চাইলে মামুন বলেন, সুমি তাঁর বাবার বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। শনিবারও সুমির কোনো খোঁজ না পাওয়ায় তিনি শ্রীপুরের ভাড়া বাড়িতে এসে সুমির খোঁজ করেন। কিন্তু এসে মামুনকে বাড়িতে পাননি। মামুনের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। গত সোমবার সন্ধ্যায় আবারও বোনের বাড়িতে এসে খোঁজ করেন বৃষ্টি। এ সময় ঘরের ড্রেসিং টেবিল থেকে দুর্গন্ধ পেলে ড্রয়ার খুলতেই পলিথিনে মোড়ানো কয়েকটি মাংসের টুকরা দেখতে পান তিনি।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা গেছে, পলিথিনে থাকা মাংসের টুকরাগুলো একজন নারীর শরীরের অংশ।

গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) গোলাম সবুর প্রথম আলোকে বলেন, ঘর থেকে লাশের টুকরা উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। লাশের বাকি অংশ উদ্ধারে নদীতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।