ঢাকা ও মুগদা মেডিকেলে খুব বেশি পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে

রাজধানীর মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খুব বেশি পরিমাণে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে এডিস মশা রয়েছে। অথচ সবচেয়ে বেশি ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা হচ্ছে এই হাসপাতালে। সরকারের রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার সর্বশেষ মশা জরিপে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

কীটতত্ত্ববিদেরা মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ শতাংশ পাত্রে (পরিত্যক্ত কৌটা, বোতল, বালতি, জগ, কার্নিশ ইত্যাদি) এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন। এই হাসপাতালের ভেতরে-বাইরে মশা জন্মানো ও বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে।

হাসপাতালটির পরিচালক আমিন আহমেদ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘এখানে মশা বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এই হাসপাতাল একটি ঝিলের ওপর। হাসপাতালের আশপাশে সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা হয়।’ তিনি আরও বলেন, হাসপাতাল ভবন ওপরের দিকে বাড়ানো হচ্ছে, বিভিন্ন তলায় পানি জমে থাকছে। এ ছাড়া এসির জমে থাকা পানিও পরিষ্কার করা হচ্ছে না। এই হাসপাতালে এ পর্যন্ত ৩০ জন নার্স ও ১২ জন চিকিৎসক ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। 

৩১ জুলাই থেকে ৪ আগস্ট পর্যন্ত রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা ঢাকার ১৪টি এলাকায় এ জরিপ করেছে। তারা বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা করে দেখেছে। এর মধ্যে ১২টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে লার্ভা পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, একটি এলাকায় ২০ শতাংশের বেশি পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেলে পরিস্থিতি ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়।

৮০ শতাংশের বেশি পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেছে পাঁচটি স্থানে। এগুলো হচ্ছে মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কমলাপুর বিআরটিসি বাস ডিপো, কমলাপুর রেলওয়ে কলোনি, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও শাহজাহানপুর বস্তি।

গাবতলী বাস টার্মিনাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও মিরপুর-১২–এর বিআরটিসি বাস ডিপোতে এডিস মশার ঝুঁকি একই পর্যায়ে। জরিপকারীরা দেখেছেন, এই তিন স্থানে ৬০-৮০ শতাংশ পাত্রে এডিসের লার্ভা আছে। মশার বংশবিস্তারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত পাত্র হচ্ছে পরিত্যক্ত টায়ার। 

নির্মাণাধীন ভবন বা অন্য অবকাঠামোর মশা বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। কারণ, এসব স্থানে পানি জমে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার জ্যেষ্ঠ কীটতত্ত্ববিদ ভুপেন্দর নাগপাল সম্প্রতি ঢাকা এসে একাধিক সভায় বলেছিলেন, নির্মাণাধীন ভবন বা অবকাঠামোর মশা নিধন করা সম্ভব হলে ঢাকার ডেঙ্গু ৪০ শতাংশ কমে যাবে। মশা নিধন করার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের। 

>

ঢাকার ১৪টি এলাকায় সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জরিপ
বিভিন্ন পাত্রে জমে থাকা পানিতে এডিস মশার লার্ভা পরীক্ষা
পরীক্ষায় ১২টি জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে লার্ভা পাওয়া গেছে

মেট্রোরেল প্রকল্প, মহাখালী কড়াইল বস্তি, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল ও রাজারবাগ পুলিশ লাইনের ২০-৬০ শতাংশ পাত্রে লার্ভা পেয়েছেন জরিপকারীরা। উত্তরা থেকে পল্লবী, মিরপুর, ফার্মগেট হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের কাজ চলছে। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা মিরপুর-১২তে মেট্রোরেল প্রকল্প এলাকায় মশা জরিপ করেছে। প্রকল্প এলাকাকে তারা এডিস মশার ঝুঁকিপূর্ণের তালিকায় রেখেছে।

মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সরকারি প্রতিষ্ঠান ঢাকা মাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। মশার লার্ভার ঝুঁকিপূর্ণ তালিকা সম্পর্কে জানতে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন সিদ্দিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি।

 রাজারবাগ পুলিশ লাইনে প্লাস্টিকের বালতি, প্লাস্টিকের ড্রাম, অব্যবহৃত টায়ার ও কর্ক শিট, ধাতব ড্রাম ও নারকেলের খোলায় ঝুঁকিপূর্ণ পর্যায়ে এডিস মশার লার্ভা পেয়েছেন জরিপকারীরা। রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা জরিপের ফলাফল দুই সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার রোগনিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক সানিয়া তাহমিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘জরিপের ফলাফল আমরা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।’

রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা বছরে তিনবার মশা জরিপ করে। বর্ষা মৌসুম শুরুর আগে, বর্ষার সময় ও মৌসুম শেষে। এ বছর মার্চে প্রথম জরিপ করে তারা বলেছিল, বর্ষার সময় মশা বাড়বে, সঙ্গে ডেঙ্গুর ঝুঁকিও বাড়বে। এর পরের নিয়মিত জরিপ করে ১৭-২৭ জুলাই। তাতে দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে মশা প্রায় ১৪ গুণ বেড়ে গেছে। এই সময়ে ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। তখনই রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা এই অতিরিক্ত তড়িৎ জরিপের সিদ্ধান্ত নেয়।

জরিপে দেখা গেছে, কালশী ইসিবি চত্বর ও ভাষানটেক বস্তির ২০ শতাংশের কম পাত্রে লার্ভা পাওয়া গেছে। এই দুটি এলাকাকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বলছে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। 

জরিপের ফলাফল বিষয়ে জানতে চাইলে ব্র্যাকের চেয়ারপারসন অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, জরিপের তথ্য থেকে বোঝা যাচ্ছে সচেতন হওয়া বা করার ব্যাপারটি মুখের কথাই হয়ে আছে। সরকার সবাইকে সচেতন হতে বলছে, কিন্তু সরকারের গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলো কেউ পরিষ্কার করছেন না বা মশামুক্ত করার উদ্যোগ নিচ্ছেন না। সক্রিয়তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সচেতনতাকে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। অন্যকে করতে বলার চেয়ে নিজে করে দেখানোটাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।