সেই বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু-স্মরণ

বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে মাল্যদান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যে মাল্যদান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস কলকাতায় যথাযোগ্য মর্যাদায় উদ্‌যাপিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল আটটায় বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার ৮ স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে মাল্যদান করা হয়। মাল্যদান করেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানসহ উপহাইকমিশনের কর্মকর্তা ও কলকাতার বিশিষ্টজনেরা। একই সঙ্গে বেকার হোস্টেলের এই স্মৃতিবাহী কক্ষের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যেও মাল্যদান করা হয়।

কলকাতায় সোনালী ব্যাংক, বিমান বাংলাদেশসহ কয়েকটি সামাজিক–সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকেও মাল্যদান করা হয় বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে। আরও মাল্যদান করেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতিউর রহমান, বাংলাদেশের সাংসদ অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ।
এরপর এখানে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর নিহত পরিবারবর্গের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনায় বিশেষ মোনাজাত করা হয়। উপস্থিত অতিথিরা ঘুরে দেখেন বঙ্গবন্ধুর কক্ষ।
এর আগে সকালে কলকাতা উপহাইকমিশনে অর্ধনমিতভাবে উত্তোলন করা হয় জাতীয় পতাকা। এ সময় রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়।
সকাল ১০টায় উপহাইকমিশনে আয়োজন করা হয় স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির। এখানে কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশনের কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ কলকাতায় পাঠরত বাংলাদেশের ছাত্রছাত্রীরা স্বেচ্ছায় রক্তদান করেন। এঁদের মধ্যে ছিলেন উপহাইকমিশনের হেড অব চ্যান্সারি জি এম জামাল হোসেন, কাউন্সিলর (কনস্যুলার) মো. বসির উদ্দিন, প্রথম সচিব (প্রেস) মো. মোফাকখারুল ইকবাল প্রমুখ।

আজ সন্ধ্যা ছয়টায় কলকাতার কলামন্দিরের কলাকুঞ্জ সভাগৃহে ‘জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। আলোচনা সভায় অংশ নেবেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আতিউর রহমান, পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ আমজাদ আলিসহ বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের বিশিষ্টজনেরা।

বঙ্গবন্ধুর কক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি
বঙ্গবন্ধুর কক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান ও কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান। ছবি: ভাস্কর মুখার্জি

১৯১০ সালে কলকাতায় প্রতিষ্ঠিত হয় এই বেকার হোস্টেল। এটি সরকারি ছাত্রাবাস। বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে ডিগ্রি পড়ার সময় এই বেকার হোস্টেলে ছিলেন ১৯৪২ থেকে ৪৭ সাল পর্যন্ত। উচ্চমাধ্যমিক পাস করে তিনি ১৯৪২ সালে ভর্তি হয়েছিলেন এ কলেজে। ছিলেন ২৪ নম্বর কক্ষে। সেদিনকার এই ইসলামিয়া কলেজের নাম পরিবর্তন করে এখন নামকরণ করা হয়েছে মৌলানা আজাদ কলেজ। ১৯৪৬ সালে বঙ্গবন্ধু ইসলামিয়া কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক হন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এই ইসলামিয়া কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও ইতিহাসে স্নাতক হয়েছিলেন।
১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ। এই স্মৃতি কক্ষে এখনো রয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যবহৃত খাট, চেয়ার, টেবিল এবং আলমারি। তৎকালীন বাংলাদেশ সরকারের অনুরোধে পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু ২৪ নম্বরের পাশের ২৩ নম্বর কক্ষটিকে যুক্ত করে স্মৃতি কক্ষ গড়ার উদ্যোগ নেন। ১৯৯৮ সালের ৩১ জুলাই বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন উচ্চশিক্ষামন্ত্রী অধ্যাপক সত্যসাধন চক্রবর্তী।

এই বেকার হোস্টেলে ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রথম বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছিল। সেই ভাস্কর্য উন্মোচন করেছিলেন তৎকালীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। কিন্তু সেই ভাস্কর্যে বঙ্গবন্ধুর মুখমণ্ডল যথাযথভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি কলকাতার সেই ভাস্কর সেদিন। এ নিয়ে পরবর্তী সময়ে আপত্তি ওঠায় সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রকৃত অবয়ব ফুটিয়ে তুলে নতুন একটি ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। তাঁরই উদ্যোগে এবং প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এখানে পুরোনো ভাস্কর্য সরিয়ে নতুন ভাস্কর্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধুর নতুন একটি ভাস্কর্য ঢাকা থেকে এনে ৩ আগস্ট তা স্থাপন করা করা হয়।