অস্ট্রেলিয়ায় বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান

জাতীয় শোক দিবসে অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু কর্নার চালু হয়েছে। এ কর্নারে বঙ্গবন্ধুর দুর্লভ ছবি, তাঁকে নিয়ে লেখা বই, তাঁর বক্তৃতার অডিও–ভিডিও প্রদর্শনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ফিজিতে বসবাসরত প্রবাসী তরুণ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি সেসব দেশের নাগরিকেরা যাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও আদর্শ সম্পর্কে জানার সুযোগ পায়, সে লক্ষ্যেই এ কর্নার চালু করেছে সেখানকার বাংলাদেশ হাইকমিশন।

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কায় বাংলাদেশ হাইকমিশন গতকাল এক ঘোষণায় জানিয়েছে, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি তহবিল থেকে দেশটির তিন ক্যানসার রোগীর এক বছরের চিকিৎসার পুরো খরচ বহন করবে। এই প্রথম বঙ্গবন্ধু স্মৃতি তহবিল থেকে বিদেশে জনহিতকর কাজে কোনো অর্থ দেওয়া হলো।

পৃথিবীর নানা প্রান্তের বাংলাদেশের হাইকমিশন ও দূতাবাসগুলো গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৪তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস পালন করেছে। দূতাবাস ও হাইকমিশনগুলোতে গতকাল জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। 

গতকাল ক্যানবেরায় বাংলাদেশ হাইকমিশন চত্বরে বঙ্গবন্ধু কর্নারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশিরা অংশ নেন। পরে আলোচনা সভায় প্রবাসীরা বলেন, শোষকের বিরুদ্ধে শোষিতের সংগ্রামের যে নেতৃত্ব বঙ্গবন্ধু দিয়েছিলেন, তারই আদর্শ বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে। অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন হাইকমিশনার সুফিউর রহমান। বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সব শহীদ সদস্যের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া ও মোনাজাত করা হয় অনুষ্ঠানে।

শ্রীলঙ্কায় হাইকমিশনার মো. রিয়াজ হামিদুল্লাহ হাইকমিশন চত্বরে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করার মধ্য দিয়ে জাতীয় শোক দিবসের কর্মসূচি শুরু করেন। এরপর বঙ্গবন্ধুসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালন করা হয়। পুষ্পার্ঘ্য দেওয়া হয় বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে।  

পরে বাংলাদেশ হাইকমিশনের সদস্যরা কলম্বো থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে মাতারায় ইনস্টিটিউট অব প্যালিয়াটিভ মেডিসিনে এক বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। ক্যানসার কেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ হাইকমিশন যৌথভাবে ওই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার ওই প্রতিষ্ঠানে তিনজন ক্যানসার রোগীর সারা বছরের চিকিৎসার জন্য বঙ্গবন্ধু স্মৃতি তহবিল থেকে তিন লাখ শ্রীলঙ্কান রুপি হস্তান্তর করেন। দুর্গত মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর সহমর্মিতার নিদর্শন হিসেবে এই সহায়তা দেওয়া হয়েছে। 

এদিকে ভারতের কলকাতা থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত কলকাতার ৮ স্মিথ লেনের সরকারি বেকার হোস্টেলের ২৪ নম্বর কক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় বেকার হোস্টেলের এই কক্ষে ছিলেন। 

১৯৯৮ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে বেকার হোস্টেলের ২৩ ও ২৪ নম্বর কক্ষ নিয়ে গড়া হয় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি কক্ষ। এই স্মৃতিবাহী কক্ষের সামনে স্থাপিত বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যেও মাল্যদান করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কলকাতায় বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসান, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর আতিউর রহমান, সাংসদ অ্যারোমা দত্ত প্রমুখ। 

দিল্লি থেকে আমাদের বিশেষ প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকালে হাইকমিশনে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করা হয়। শোক দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণী পাঠ করা হয়। বিকেলে হাইকমিশনের মৈত্রী হলে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রকাশিত হয় বিশেষ স্মরণিকা, ‘বঙ্গবন্ধু ফর এভার’। এই স্মরণিকায় বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নানা ছবির পাশাপাশি তাঁকে নিয়ে লেখা কয়েকটি নিবন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তথ্যচিত্র ‘বঙ্গবন্ধু ফর এভার ইন আওয়ার হার্টস’ প্রদর্শিত হয় অনুষ্ঠানে। পরে বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে অংশ নেন নেহরু মেমোরিয়াল মিউজিয়ামের পরিচালক শক্তি সিনহা, অধ্যাপক নন্দিতা বসু ও সাংবাদিক বিনয় কুমার। বক্তারা জানান, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সুন্দর সুসম্পর্ক গড়ে উঠেছে, তার ভিত বঙ্গবন্ধুরই গড়ে তোলা।