পটিয়ায় সাবেক ওসির সম্পদ দুদকের জালে

নিজের টাকায় ভাইয়ের নামে ফ্ল্যাট কিনেও শেষরক্ষা হলো না। একই সঙ্গে ভাইকে প্রায় ৭০ লাখ টাকা দিয়েও লুকানো গেল না। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) জালে আটকা পড়েছে এক পুলিশ কর্মকর্তার অবৈধভাবে উপার্জিত এই অর্থসম্পদ।

পুলিশ কর্মকর্তার নাম মো. রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরী। চট্টগ্রামের পটিয়া থানায় ওসি হিসেবে দুই বছর আগে কর্মরত ছিলেন তিনি। স্ত্রীর করা নির্যাতনের মামলায় সাময়িক বরখাস্ত হয়ে বর্তমানে তিনি রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত আছেন।

ফ্ল্যাটটি ক্রোক করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেছে দুদক। চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত এরই মধ্যে ক্রোকের আদেশও দিয়েছেন।

অভিযোগের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তা রেফায়েত উল্লাহ গতকাল বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ভাইয়েরা পোলট্রি ব্যবসা করেন। ব্যবসার টাকায় এসব কিনেছেন। নিজের হিসাব নম্বর থেকে চেক দেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ভাইয়ের সঙ্গে ভাইয়ের লেনদেন থাকতে পারে।’ ফ্ল্যাট কেনা ও নগদ অর্থ সবই নিজের বৈধ উপার্জন বলে দাবি করেন রেফায়েত।

দুদক চট্টগ্রামের সহকারী পরিচালক মো. হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পুলিশ কর্মকর্তা মো. রেফায়েত উল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সাল থেকে দুদকে অভিযোগ আসতে থাকে। পরে অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য তাঁকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনুসন্ধানে দুর্নীতির মাধ্যমে পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়।

>

নিজের টাকায় ভাইয়ের নামে ফ্ল্যাট কেনার অভিযোগ
দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রোকের নির্দেশ আদালতের

এই দুদক কর্মকর্তা বলেন, রেফায়েত উল্লাহ ২০১৭ সালের ২৬ জানুয়ারি ছয়টি চেকের মাধ্যমে এবি ব্যাংক চট্টগ্রামের সিডিএ অ্যাভিনিউ শাখার মাধ্যমে মো. ইলিয়াছ নামের এক ব্যক্তিকে ফ্ল্যাট কেনা বাবদ ৪১ লাখ ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। ওই বছরের ১৩ মার্চ নগরের চান্দগাঁও এলাকায় ১ হাজার ৪৫০ বর্গফুটের ওই ফ্ল্যাট নিবন্ধন করেন তাঁর ভাই আফতাব উল্লাহ চৌধুরীর নামে। পরের বছরের ২২ জুলাই আফতাব তাঁদের আরেক ভাই হাফিজ উল্লাহ চৌধুরীর নামে হেবা দান করে দেন। এ ছাড়া ২০১৭ সালের মার্চ মাসে দুটি পে-অর্ডারের মাধ্যমে ৬৯ লাখ ৪৫ হাজার টাকা ভাই আফতাব উল্লাহর নামে দিয়ে দেন রেফায়েত উল্লাহ।

দুদক কর্মকর্তা আরও বলেন, অবৈধভাবে আয় করা সম্পদ গোপন করার জন্যই মূলত ভাইদের নামে ক্রয় করেন ওসি রেফায়েত। দুদকের অনুসন্ধানে তা বেরিয়ে এসেছে। এই অবস্থায় পুলিশ কর্মকর্তা তাঁর ভাইয়ের নামে নেওয়া ফ্ল্যাটটি অন্যত্র হস্তান্তর, বন্ধক বা বেহাত করার চেষ্টা করছেন বলে জানতে পারে দুদক। তাই ফ্ল্যাটটি ক্রোকপূর্বক দুদককে রিসিভার নিয়োগ দেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হয়। এতে বলা হয়, অভিযোগ নিষ্পত্তির আগে বর্ণিত সম্পত্তি হস্তান্তর বা স্থানান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।