কুমিল্লার রসমালাই

কুমিল্লার রসমালাই।  ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লার রসমালাই। ছবি: প্রথম আলো

শতবর্ষের ঐতিহ্য নিয়ে আছে কুমিল্লার মিষ্টির রাজা রসমালাই। জেলা শহরের নামকরা মিষ্টির দোকানগুলোতে রসমালাই কেনার জন্য প্রতিদিনই উপচে পড়া ভিড় থাকে। তবে কুমিল্লার মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ের কদর বেশি। এর সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও। রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিনদেশি ও দেশি আমন্ত্রিত অতিথিদের আপ্যায়ন করা হয় নগরের মনোহরপুর এলাকার মাতৃভান্ডারের রসমালাই দিয়ে। পাশাপাশি একই এলাকার ভগবতী প্যাড়া ভান্ডার, শীতল ভান্ডার, পোড়াবাড়ি, জেনিস, জলযোগ, কুমিল্লা মিষ্টি ভান্ডারের রসমালাইয়ের চাহিদা বেশি। কুমিল্লায় অতিথি আপ্যায়নে রসমালাই সব সময় থাকে। আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে এই জনপদের মানুষ রসমালাইকেই বেশি গুরুত্ব দেন। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯০০ সালের দিকে কুমিল্লা অঞ্চলে রসমালাই তৈরি শুরু হয়। ১৯৩০ সালে কুমিল্লা মাতৃভান্ডার রসমালাই বানিয়ে নাম করে। মুক্তিযোদ্ধা প্রয়াত শংকর সেনগুপ্তের হাত ধরে এটি বিকশিত হয়। বর্তমানে তাঁর ছেলে অনির্বাণ সেনগুপ্ত ব্যবসা পরিচালনা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ওই শিক্ষার্থী কোনো চাকরিতে না গিয়ে বংশপরম্পরায় পরিবারের এই ব্যবসায় নামেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিদিনই রসমালাইয়ের চাহিদা থাকে বেশি। কিন্তু দুধের জোগান কম হলে, রসমালাইও কম তৈরি হয়। বেশি হলে বেশি পরিমাণে বানানো যায়। মান ও গুণ ধরে রাখার জন্য আমরা সব সময় চেষ্টা করি। আমাদের কোনো শাখা নেই। মহাসড়কের পাশে আমাদের নাম ব্যবহার করে যাঁরা রসমালাই বিক্রি করছেন, তার সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই।’

কীভাবে রসমালাই বানানো হয় তা নিয়ে রেসিপি দিয়েছেন কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর এলাকার ভগবতী প্যাড়া ভান্ডারের ৪৭ বছরের কারিগর রতন চন্দ্র ঘোষ। তিনি রসমালাইয়ের প্রস্তুতপ্রণালি সম্পর্কে বলেন, ‘প্রথমে বিভিন্ন গোয়ালার কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করা হয়। এরপর ওই দুধ চুলার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বাল দেওয়া হয়। অন্তত দুই ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর দুধ ঘন হয়ে ছানায় রূপ নেয়। এরপর ছানা কেটে ছোট ছোট দানাদার মিষ্টির মতো বানানো হয়। পরে রসের মধ্যে দিয়ে সেটি রসমালাইতে পরিণত করা হয়। দুধের ঘনত্ব যত বেশি হবে, রসমালাই তত বেশি সুস্বাদু হবে। 

কুমিল্লার রসমালাইয়ের পরিচিতি কেবল বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত
গীতা পাসি কুমিল্লায় এসে মাতৃভান্ডার থেকে রসমালাই নিয়ে গেছেন। প্রতি কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৬০ টাকা।