পোড়া বস্তিতে হাতড়ে বেড়াচ্ছে ওরা

রাজধানীর মিরপুর ৭ নম্বরের বস্তিতে পোড়া ধ্বংসস্তূপ হাতড়ে বেড়াচ্ছে সব–হারানো মানুষ। সেখানেই খুঁজে ফিরছে কিছু অবশিষ্ট আছে কি না। বেশির ভাগ ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারেনি বাসিন্দারা। হাজারো ঘর পুড়ে গেছে। ওপরে শুধু টিন দেখা যাচ্ছে। ঈদের কারণে বস্তিতে থাকা বেশির ভাগ বাসিন্দা গ্রামের বাড়িতে চলে গিয়েছিল। আগুনের খবর পেয়ে অনেকে ফিরে এসেছে ঢাকায়। পোড়া বস্তিতে ঘর খুঁজছে তারা।

আগুন লাগার প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার সার্ভিস। পুলিশ বলছে, এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। তারা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আগুন লাগার খবর শুনে কাছাকাছি জেলার অনেকে আজ শনিবার ভোর থেকে এলাকায় এসেছে। তারা এখন তাদের ঘর খোঁজার চেষ্টা করছে। কিন্তু সেখানে এখন শুধু নষ্ট হয়ে যাওয়া টিন পড়ে আছে। তার মধ্যেই সেখানে তারা নিজেদের অবশিষ্ট জিনিসপত্র খুঁজছে। কিন্তু পাচ্ছে না কিছুই। ভয়াবহ আগুনে সেখানে বেঁচে যাওয়ার মতো কিছু নেই।

নরসিংদীর মনোহরদী থেকে এসেছেন সুমাইয়া (২৫)। বলেন, ঈদের ছুটিতে স্বামী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে বাড়ি গিয়েছিলেন। তিনি গৃহকর্মীর কাজ করেন। তাঁর স্বামী একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। বস্তির সাত নম্বর রোডের নয় নম্বর গলিতে তাঁর ঘর ছিল। আগুন লাগার খবর রাতে শুনেই স্বামীকে নিয়ে ভোরে এসে পৌঁছেছেন। পৌঁছেই ঘরের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু যাবেন কোথায়? কোথাও ঘর বলে কিছু নেই। সব সমান হয়ে গেছে। তিনি ঈদের আগে কাপড়চোপড়সহ যেসব জিনিস সঙ্গে নিয়ে গেছেন, তা ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। এখন কোথায় থাকবেন, তা জানেন না। তাঁদের স্কুলে থাকতে দেওয়া হবে বলে শুনেছেন। কিন্তু এখনো কেউ কোথাও যায়নি। এখনো সবাই বস্তির আশপাশেই আহাজারি করছে।

বস্তির বাসিন্দা শামীম হাসান বলেন, ‘আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেছে। সকাল থেকে ঘর খোঁজার চেষ্টা করেছি। ঈদে বউ আর বাচ্চা জামালপুরে বাড়ি গেছে। আগুন লাগার কথা শুনে দৌড়ে বেরিয়ে এসেছি। কিছু সঙ্গে আনতে পারিনি।’

পুড়ে গেছে সব ঘর। ছবি: আশরাফুল আলম
পুড়ে গেছে সব ঘর। ছবি: আশরাফুল আলম

বস্তির পাশেই দুই নম্বর রোডের বাসিন্দা দিলদার আহমেদ বলেন, আগুন দেখে তাঁরা ভয় পেয়েছিলেন। আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছিল। বস্তির পাশাপাশি মসজিদসহ আশপাশের চারটি বাড়িতে ওই আগুন ছড়াতে দেখেন তিনি। সরেজমিনে দেখা যায়, বস্তির পাশে একটি বাড়ি ও মসজিদ আগুনে বেশি পুড়ে গেছে।

স্থানীয় অনেক লোক বলছেন, মিরপুর ৭ নম্বরের বস্তিটি অবৈধ। এখানে বেশির ভাগ বাড়ি টিন ও কাঠের। একেকটি বাড়ি টিন দিয়েই তিন-চারতলা করা হয়েছে। গা ঘেঁষাঘেঁষি করে তৈরি করা এসব ঘরের কারণে আগুন দ্রুত ছড়িয়েছে। বস্তির আশপাশের বাড়িগুলোতেও আগুন নিয়ে আতঙ্ক ছড়ায়।

স্থানীয় বাসিন্দা খায়রুল বাশার বলেন, বস্তির পাশেই তাঁদের বাসা। তাঁরা আগুন ছড়িয়ে পড়ার ভয়ে ছিলেন। দ্রুত বাড়ি ছেড়ে সবাই বাইরে চলে আসেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আগুন নেভানো সম্ভব হওয়ায় তাঁরা রক্ষা পেয়েছেন।

ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ২৪টি ইউনিট কাজ করেছে। র‍্যাব, পুলিশ, ওয়াসা ও স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী জাহিদ হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, শর্টসার্কিট সার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে। পরে তদন্ত করে বিস্তারিত বলা যাবে।

পুড়ে গেছে সব ঘর। ছবি: আশরাফুল আলম
পুড়ে গেছে সব ঘর। ছবি: আশরাফুল আলম

আগুনের খবর পেয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সাংসদ ইলিয়াস মোল্যা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান ঘটনাস্থলে যান। তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনকে সহায়তা আশ্বাস দেন।

সাংসদ ইলিয়াস মোল্যা বলেন, ৫০ থেকে ৬০ হাজার লোক বস্তিতে থাকত। সবাই ঈদে বাড়ি গিয়েছিল। কিন্তু ফিরে এসে কেউ কিছু পায়নি। এখানে যা ছিল সব শেষ হয়ে গেছে।

পুলিশ সূত্র বলছে, এ ঘটনায় চারজন আহত হয়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। কেউ নিখোঁজ নেই।