দাউদকান্দিতে সড়কের পিচ উঠে গর্ত, কাদা

কানড়া–চারপাড়া–দশপাড়া সড়কে গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চারপাড়া এলাকায় ।  ছবি: প্রথম আলো
কানড়া–চারপাড়া–দশপাড়া সড়কে গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার চারপাড়া এলাকায় । ছবি: প্রথম আলো

কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কানড়া-চারপাড়া-জায়গীর-দশপাড়া সড়ক দীর্ঘদিন সংস্কার করা হয় না। সড়কটির পিচ উঠে বিভিন্ন স্থানে গর্ত ও খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। একটু বৃষ্টি হলে এসব গর্তে পানি জমে। সড়কটি কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায়। তখন এই সড়কে যানবাহন চলাচল মুশকিল হয়ে পড়ে।

সড়কটি সংস্কারের দাবিতে এই সড়কে চলাচলকারী বিভিন্ন যানবাহনের চালকেরা গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে বেলা পৌনে ১টা পর্যন্ত সড়কের চারপাড়া এলাকায় মানববন্ধন করেন। কর্মসূচি চলাকালে চালকেরা বলেন, সড়কটি দ্রুত সংস্কার করতে হবে। তা না হলে এই সড়কে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারবে না।

স্থানীয় লোকজন বলেন, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) দাউদকান্দি কার্যালয় ১৯৯২ সালে পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের তিন কিলোমিটার অংশ পাকা করে। এরপর থেকে আর সড়টির সংস্কার হয়নি। অথচ এই সড়ক দিয়ে উপজেলার বারপাড়া ইউনিয়নের কানড়া, জায়গীর, চণ্ডীপাশা, রাঙ্গাশিমুলিয়া, চারপাড়া, সাতপাড়া, বেকীসাতপাড়া ও ইছাপুর গ্রামের ছয় হাজার মানুষ ছাড়াও জায়গীর কামিল মাদ্রাসা, দশপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সুন্দলপুর উচ্চবিদ্যালয়, গৌরীপুর সুবল আফতাব উচ্চবিদ্যালয়, গৌরীপুর বিলকিস মোশাররফ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, বারপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, গৌরীপুর সরকারি কলেজ, গৌরীপুর আকবর আলী খান কারিগরি বাণিজ্যিক কলেজ, গৌরীপুর অক্সফোর্ড ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও চারপাড়া আল-আজহার স্ট্যান্ডার্ড স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত যাওয়া-আসা করেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশার চালক কানড়া গ্রামের আমিরুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি হলে এ সড়কের গর্তে পানি আটকে কাদা কাদা হয়ে যায়। তখন এই সড়কে অটোরিকশা চালানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। 

কানড়া গ্রামের বাসিন্দা নূরুজ্জামান খান, কানড়া মুকুল নিকেতন স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ মকবুল হোসেন, স্থানীয় বারপাড়া বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক হান্নান খন্দকার, চারপাড়া গ্রামের গৃহবধূ নয়নমণি, রাঙ্গাশিমুলিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আলমাছ মিয়া ও দিনমজুর ঝারু মিয়া বলেন, সড়কটি সংস্কারের অভাবে এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এটি শিগগিরই সংস্কার করা দরকার।

চণ্ডীপাশা গ্রামের দোকানদার আবদুর রশিদ, জায়গীর গ্রামের কবির হোসেন, কানড়া গ্রামের লোকমান হোসেন বলেন, ভাঙা ও কাদায় ভরা এই সড়ক দিয়ে তাঁদের দোকানের মালামাল আনতে গেলে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হয়। তারপরও অনেক সময় গাড়ি মেলে না। তখন কাঁধে ও পিঠে করেই মালামাল আনেন। 

রাঙ্গাশিমুলিয়া গ্রামের গৃহবধূ জান্নাত আক্তার ও চারপাড়া গ্রামের গৃহবধূ জোসনা বেগম বলেন, সড়কের অবস্থা এতই করুণ হয়ে পড়েছে যে বৃষ্টির দিনে আশপাশের কোনো গ্রামের কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নেওয়ার জন্য গাড়ি পাওয়া যায় না।

জায়গীর গ্রামের ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, সড়কের চারপাড়া থেকে জায়গীর পর্যন্ত এক কিলোমিটারের অবস্থা খুবই নাজুক। এই সড়কে শুষ্ক মৌসুমে ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। কিন্তু বর্ষা মৌসুমে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না। তখন গ্রামবাসীর কষ্টের সীমা থাকে না। আশপাশে কোনো খাল না থাকায় নৌকাযোগেও যাতায়াতের ব্যবস্থা নেই।

এই সড়কে চলাচলকারী ব্যক্তিগত গাড়ির চালক পারভেজ হোসেন ও সোহেল মিয়া বলেন, সড়কের চারপাড়া থেকে কানড়া পর্যন্ত দুই কিলেমিটার ভাঙা অংশে নিজেদের টাকায় বালু ফেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বালু ফেলার পর বৃষ্টি হলে বালু চলে গিয়ে আবার গর্তের সৃষ্টি হয়।

স্কুলছাত্র তাপস দেবনাথ ও ওমর ফারুক বলে, বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কে কাদা জমে। তখন রিকশা কিংবা অটোরিকশার চালকেরা এ সড়ক দিয়ে যেতে চান না। গ্রামবাসী, ব্যবসায়ী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা কাদাপানি পার হয়ে যাতায়াত করে।

বাসরা গ্রামের গৃহবধূ রিনা আক্তার বলেন, ‘চারপাড়া গ্রামে আমার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। সড়কের এ করুণ অবস্থার কথা মনে হলে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি আসার সাহস পাই না।’

বারপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মনির হোসেন তালুকদার বলেন, ১৯৯২ সালে নির্মিত সড়কটিতে এ পর্যন্ত সংস্কারে ছোঁয়া লাগেনি। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হলে এই সড়কের ইছাপুর এবং কানড়া হয়ে মাইক্রোবাস, প্রাইভেট কার, অটোরিকশা দাউদকান্দি টোল প্লাজা পর্যন্ত চলাচল করত। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে সড়কে অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়ে কাদাপানিতে একাকার হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে একটি মোটরসাইকেল পর্যন্ত চলাচল করতে পারে না। গর্তে ভরা সড়কটি সংস্কার ও পাকাকরণের ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশলীকে ঢাকায় তালিকা পাঠিয়ে কাজ করার জন্য বারবার তাগাদা দিয়েছেন।

এলজিইডি দাউদকান্দি উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহসান আলী বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে গত বছর তালিকা পাঠিয়েছেন। কিন্তু বরাদ্দের অভাবে কাজটি শুরু করা যাচ্ছে না।