বন্যাকবলিতদের পাশে কৃষকদের ফুড ব্যাংক

চৌহালীর বরাংগাইল গ্রামে ফুড ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে।  প্রথম আলো
চৌহালীর বরাংগাইল গ্রামে ফুড ব্যাংকের সদস্যদের কাছ থেকে চাল সংগ্রহ করা হচ্ছে। প্রথম আলো

বন্যা হলে যেকোনো এলাকায় খাদ্যসংকট প্রকট আকার ধারণ করে। চারদিকে পানি থাকায় বন্যাকবলিতদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। সরকারিভাবে বরাদ্দ করা ত্রাণও যথাসময়ে পাওয়া যায় না। এসব সমস্যা মাথায় রেখে বন্যার্তদের সহায়তা করার জন্য সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে স্থাপন করা হয়েছে ফুড ব্যাংক। বন্যা শুরু হলে এই ফুড ব্যাংক থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের বন্যাকবলিত পাঁচটি উপজেলার মধ্যে চৌহালীর চরাঞ্চলের অনেক মানুষের ঘরে খাবার ছিল না। চাহিদার তুলনায় সরকারি ত্রাণ কম সরবরাহ করায় এসব চরে খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছিল। বন্যায় আক্রান্ত এসব চরের মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে চৌহালী উপজেলার বরংগাইল গ্রামে স্থাপিত ফুড ব্যাংক। এই ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের মধ্যে অনেকেই দরিদ্র কৃষক। তাই বন্যার সময়ের অতীতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে তাঁরা ব্যাংকটি গড়ে তুলেছেন।

 ফুড ব্যাংক পরিচালনা কমিটির সভাপতি কৃষিশ্রমিক কোহিনুর খাতুন জানান, নিজেদের কথা চিন্তা করে তাঁরা এক হয়েছেন। অসহায়রাও যে বন্যা, দুর্যোগসহ যেকোনো বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে, তারই দৃষ্টান্ত হিসেবে দেড় বছর আগে ফুড ব্যাংক চালু করা হয়। গ্রামের ৪০ জন কৃষাণ ও কৃষাণী এই ব্যাংকের সদস্য। প্রতি মাসে প্রত্যেক সদস্য আধা কেজি থেকে এক কেজি করে চাল ফুড ব্যাংকে জমা দেন। দুর্যোগকালীন এলাকার অসহায় ও বিপদগ্রস্তদের মধ্যে এগুলো বিতরণ করা হয়। এই ব্যাংক থেকে উপজেলার ঘোরজান ইউনিয়নের দক্ষিণ বরংগাইল চরে দ্বিতীয় দফায় গত ২৪ জুলাই ২০টি পরিবারের মধ্যে ৮ কেজি করে ১৬০ কেজি চাল বিতরণ করা হয়েছে।

কোহিনুর খাতুন আরও বলেন, ‘আমরা গরিব বলে কি মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারব না? আমরা অসহায় দরিদ্র, কিন্তু আমাদের চাইতেও হতদরিদ্র মানুষ তো সমাজে রয়েছে। তাদের কথা চিন্তা করেই আমরা ফুড ব্যাংকটি গড়ে তুলেছি।’

ফুড ব্যাংকের এক উদ্যোক্তা বলেন, গত দু–তিন মাস আগে গ্রামের দুটি মেয়ের বিয়েতে ফুড ব্যাংক থেকে ১০০ কেজি চাল সহায়তা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া জমা হওয়া চাল বিক্রি করে ১৫ হাজার টাকা ব্যাংকে রাখা হয়েছে। এ টাকা দিয়েও মানুষের বিপদে সহায়তা করা হবে।

ফুড ব্যাংকের চাল পেয়ে গ্রামের জাহানারা খাতুন, ফুলবানু ও সুমি খাতুন বলেন, বন্যার পানি এখনো তাঁদের ঘরবাড়িতে রয়েছে। কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি। ফুড ব্যাংকের মালিকেরা দরিদ্র অসহায় হলেও ব্যাংক জমানো চাল থেকে তাঁদের আট কেজি করে দেওয়া হয়েছে। বন্যার পরে তাঁরাও ফুড ব্যাংকের সদস্য হবেন, যাতে  তাঁরাও দুর্যোগের সময় নিজেদের ও অন্যদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। 

ফুড ব্যাংকের এমন উদ্যোগকে এলাকার অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে চৌহালী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক সরকার বলেন, আসলেই এটি একটি মহৎ উদ্যোগ।