ভাঙছে সেন্ট মার্টিন, উৎকণ্ঠায় বাসিন্দারা

সেন্ট মার্টিনে সাগরের পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গাছপালা। ভাঙনের মুখে রয়েছে ঘরবাড়ি। সম্প্রতি সৈকতের পশ্চিম পাড়ে।  প্রথম আলো
সেন্ট মার্টিনে সাগরের পাড় ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে গাছপালা। ভাঙনের মুখে রয়েছে ঘরবাড়ি। সম্প্রতি সৈকতের পশ্চিম পাড়ে। প্রথম আলো

বঙ্গোপসাগরের প্রবল জোয়ারে ভাঙছে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ। গত দুই মাসে বিলীন হয়েছে দ্বীপের উত্তর ও পশ্চিম অংশের প্রায় ৩০০ নারকেলগাছ। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে পুলিশ ফাঁড়ি, কবরস্থান, দোকানপাট, হোটেল–মোটেলসহ নানা অবকাঠামো। এ নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছে দ্বীপের প্রায় ১০ হাজার মানুষ।

দ্বীপের বাসিন্দারা বলছেন, গত এক দশকে সমুদ্রের এমন উত্তাল রূপ তাঁরা দেখেননি। অতীতে বড় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে দেশের বিভিন্ন উপকূল যখন লন্ডভন্ড হয়েছে, তখনো সেন্ট মার্টিনে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তুলনামূলক কম।

কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা প্রথম আলোকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে সমুদ্রের জোয়ারের উচ্চতা বেড়ে সেন্ট মার্টিনসহ উপকূলের বেড়িবাঁধ ভাঙছে।

সেন্ট মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, সেন্ট মার্টিনের আয়তন ছিল ৯ বর্গ কিলোমিটার। এখন দ্বীপটি বিলীন হতে হতে সাড়ে ৭ বর্গকিলোমিটারে ঠেকেছে। জোয়ারের ধাক্কায় আরও ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। উপড়ে পড়ছে নারকেলগাছ। নানা চেষ্টা করেও জোয়ারের প্লাবন ঠেকানো যাচ্ছে না। দ্বীপের ১০ হাজার বাসিন্দাকে রক্ষা করতে হলে চারদিকে স্থায়ী পাথরের প্রতিরক্ষা বাঁধ দিতে হবে। টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য দ্বীপের মানুষ মানববন্ধন করেছে, প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।

দ্বীপের বাসিন্দারা বলেন, গত এক দশকে একাধিক ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও জোয়ারের ধাক্কায় প্রায় ৫০ একর বালুচর, কবরস্থানের কিছু অংশ, একটি মাদ্রাসা, শতাধিক বসতঘর বিলীন হয়েছে। আরও শতাধিক পরিবার ভাঙনের কবলে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, জোয়ারের ধাক্কায় দ্বীপের উত্তর পাশে পুলিশ ফাঁড়ির কিছু বিলীন হয়েছে। পাশের প্রাসাদ প্যারাডাইস হোটেল, কবরস্থান ও গ্রামের ১০-১৫ একর জমিও সাগরে মিশে গেছে। অর্ধভাঙা অবস্থায় পড়ে আছে ১১টি বসতঘর। এ ছাড়া ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে উপড়ে পড়া নারকেলগাছ।

এদিকে, পূর্ব পাশের বাজারের পাঁচটি দোকান ও তিনটি শুঁটকি মহালও বিলীন হয়ে গেছে। পশ্চিমে সাহিত্যিক হ‌ুমায়ূন আহমেদের সমুদ্রবিলাস, হোটেল অবকাশ, পান্না রিসোর্টসহ আশপাশের কিছু স্থাপনা ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে।

জেটিঘাটের দোকানদার আলী আহমদ বলেন, গত বর্ষার চেয়ে এবার সমুদ্রের পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। এ কারণে দোকানপাট-ঘরবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে।

উত্তরপাড়ার গৃহবধূ জমিলা বেগম (৫২) বলেন, বসতভিটা সমুদ্রে বিলীন হওয়ায় গত দুই মাসে পাঁচবার ঘর পরিবর্তন করতে হয়েছে। সাত ছেলেমেয়ে নিয়ে উৎকণ্ঠায় আছেন। এই ঘরটি ভেঙে গেলে মাথা গোঁজার ঠাঁই হবে না।

ইউপি সদস্য হাবিব উল্লাহ খান বলেন, বর্ষা এলে আতঙ্ক বাড়ে দ্বীপের বাসিন্দাদের। গতবার ভাঙনের কবলে ঘরবাড়ি হারিয়েছে শতাধিক মানুষ। এবার আরও শতাধিক পরিবার আতঙ্কে আছে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো রবিউল হাসান বলেন, ভাঙনের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে কিছু কিছু এলাকায় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি বিভিন্ন দপ্তরের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।