'অনুপ্রাণিত হও, কিন্তু নকল কোরো না'

মুর্তজা বশীর  ছবি: খালেদ সরকার
মুর্তজা বশীর ছবি: খালেদ সরকার


কেমন আছেন? ছবি আঁকছেন তো? নারী নিয়ে একটা প্রদর্শনী করার কথা ছিল না এ মাসে?

জন্মদিনের দিন, ১৭ আগস্ট, একসঙ্গে এতগুলো প্রশ্ন করলাম তাঁকে। শনিবার ঠিক বেলা একটায়। তখনো তাঁর দুপুরের খাওয়ার সময় হয়নি। বাড়িতে তাঁর দুই মেয়ে, সাহায্যকারীরা। বাড়তি কেউ নেই। তাই আমাদের কাছে পেয়ে একটু খুশিই হলেন মনে হলো।

‘শোনো, ভেতর থেকে আসে না। ভেতর থেকে না এলে আঁকব কী? আঁকলেই তো পয়সা। কিন্তু ভেতর থেকে তো আসতে হবে। তবে আঁকতে না পারায় এক দিক থেকে ভালো হয়েছে। পরিকল্পনা বদলে ফেলেছি। পিকাসো যখন মারা গেল, আমি তখন প্যারিসে। পিকাসো রাতের বেলা একটা ছবি আঁকল, পরদিনই মারা গেল। তখন ওখানে পত্রিকায় ছবি দিয়েছিল। একটা বাচ্চার পোর্ট্রেট। পত্রিকায় লিখল, পিকাসো সম্ভবত আরেকটা সিরিজের দিকে যাচ্ছিল। আমি নারী নিয়ে কাজ না করায় মনে হচ্ছে, সামনে বোধ হয় আমার আরেকটা সিরিজ হচ্ছে।’

কী ধরনের সেটা?

‘মিনিমাল আর্ট বলতে যা বোঝায়। এটা হলো, হলুদ যদি দিতে হয়, খাঁটি হলুদ, অন্য কোনো হলুদ নয়। টোন ছাড়া। সবুজ হবে খাঁটি সবুজ। একেবারে ফ্ল্যাট। আমার এখন মাথায় এল যে আমি এভাবে কাজ করব। তাহলে একটি অন্য ধরনের সিরিজ হবে। আমার সমস্যা যেটা হয়েছে, এই ঘর থেকে ওই ঘরে যাচ্ছি, তাতে শারীরিক কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাতে অক্সিজেনটা ঠিকভাবে পাচ্ছি না। একটু ঠিক হয়ে নিই, তারপরই আঁকতে বসব। এ মাসেই তো আমার প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি আঁকতে পারিনি।’

আমাদের এখানে চারুকলার কী অবস্থা দেখছেন?

‘আমাদের এখানে কিন্তু শিল্পসমালোচনা হয় না। আর্ট ক্রিটিসিজম বলতে যা বোঝায়, এটা বাংলাদেশে হয় না। আর্ট অ্যাপ্রিসিয়েশন হয়। তুমি জয়নুল আবেদিনের সমালোচনা করতে পারবে? তুমি আমার সমালোচনা করতে পারবে? তোমার সাহস হবে না। কিন্তু বিলেতে, ইউরোপে জন বার্জারের একটা বই আছে দ্য সাক্সেস অ্যান্ড ফেলিউর অব পাবলো পিকাসো। অনেক ছবি তিনি বাতিল করে দিয়েছেন। তুমি এখানে জয়নুল আবেদিনের ছবি খারিজ করে দিতে পারবে? আমার সমালোচনা করবে? তার আগে ভাববে, আরে বশীর ভাই আবার মাইন্ড করবে না তো! তোমার বলার ইচ্ছা থাকলেও তোমার সাহস হবে না। আর্ট ক্রিটিসিজম বলতে যা বোঝায়, তার বিকাশ হয়নি এখানে।’

আমাদের তরুণ শিল্পীদের কী বলবেন?

আটাশিতে পা দেওয়া মুর্তজা বশীরের ততক্ষণে খাবার সময় হয়ে গেছে। কিন্তু তাঁকে যেন কথায় পেয়ে বসেছে। মেয়েরা তাঁকে দিচ্ছেন খাবার তাগিদ। এসব অগ্রাহ্য করে তিনি বললেন, ‘আমাদের দেশে একটা সমস্যা কী, জানো, আজকাল তো ইন্টারনেটের যুগ, তুমি তো সবখানের সব ছবি দেখছ, তাই এখান থেকে একটু, ওখান থেকে একটু—এ রকম করে নিয়ে তুমি আঁকতে পারছ। তাই নিজস্ব ভাষা যেটা, সেটা গড়ে উঠছে না। এখনকার তরুণেরা খুবই সৃজনশীল, কিন্তু ভাষাটা তো তৈরি করতে পারছে না। আমি যখন চট্টগ্রামে মাস্টারি করতাম, তখন ছাত্রদের বলতাম, বই দেখো, অনুপ্রাণিত হও, কিন্তু নকল কোরো না।’