৭ বছর পর মা-বাবাকে পেলেন হারিয়ে যাওয়া খাদিজা

মা–বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে খাদিজা (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)।   ছবি: প্রথম আলো
মা–বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে খাদিজা (বাঁ থেকে দ্বিতীয়)। ছবি: প্রথম আলো

সাত বছর আগে হারিয়ে যাওয়া খাদিজা তাঁর মা–বাবাকে খুঁজে পেয়েছেন। রাজশাহীভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যাসোসিয়েশন ফর কমিউনিটি ডেভেলপমেন্ট (এসিডি) গতকাল শনিবার খাদিজাকে তাঁর মা-বাবার হাতে তুলে দিয়েছে। এত দিন পর খাদিজাকে ফিরে পেয়ে তাঁর মা–বাবা যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

খাদিজার পুরো নাম খাদিজা খাতুন। হারিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর বয়স ছিল ১২ বছর। তাঁকে ভারতে পাচার করা হয়েছিল। সেখানে উদ্ধার হওয়ার পর তাঁর স্থান হয় ভারতের মালদহে সরকারি এক সেফ হোমে। গত বছরের ১৯ এপ্রিল তাঁকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁর স্থান হয় রাজশাহীর মানবাধিকার সংস্থা এসিডির আশ্রয় নিবাসে। সেই থেকে খাদিজাকে নিবাসেই লালন-পালন করা হচ্ছিল।

খাদিজার বাবার নাম আবুল কাশেম ফকির, আর মা আনোয়ারা বেগম। তাঁদের বাড়ি ময়মনসিংহে। তবে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকার গুলশান-২–এর নুরের চালা এলাকায় তাঁরা বসবাস করছেন।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে খাদিজা যখন নিখোঁজ হন, তার আগে তিনি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করতেন। পড়ালেখার পাশাপাশি পাশের একটি পরিবারের সন্তানকে দেখাশোনার কাজ করতেন খাদিজা। একদিন ওই বাড়িতে কাজের উদ্দেশে গিয়ে তিনি নিখোঁজ হন।

খাদিজা জানান, সেদিন এক প্রতিবেশী ভাই তাঁকে ডেকে ভয় দেখিয়ে নিয়ে যান। তারপর তাঁকে আর ফিরতে দেননি। একটি জায়গায় দর-কষাকষির সময় তাঁর মনে হয়, প্রতিবেশী তাঁকে বিক্রি করে দিচ্ছেন। বুঝতে পেরে তিনি দৌড় দেন। এ সময় ট্রাফিক পুলিশের এক সদস্য তাঁকে উদ্ধার করে সেফ হোমে দিয়ে আসেন। পরে তিনি বুঝতে পারেন, তিনি ভারতে পাচার হয়ে এসেছেন। ওই সেফ হোমেই তাঁর ছয় বছর কাটে।

গতকাল সন্তানকে পাওয়ার পর আনোয়ারা বেগম বলেন, ‘মেয়েকে পেয়ে মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি।’ খাদিজা জানান, ‘কোনো দিন ভাবতেও পারিনি বাবা-মাকে ফিরে পাব। পরিবারকে ফিরে পেয়ে এত খুশি হয়েছি, যা কাউকেই বোঝাতে পারব না। আমি এসিডির প্রতি চিরকৃতজ্ঞ। এ ঋণ আমি কোনো দিন শোধ করতে পারব না।’