বেসরকারি হাসপাতালে ২৮ শতাংশ রোগী

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া ডেঙ্গু রোগীদের ২৮ শতাংশের চিকিৎসা দিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠানগুলোর মালিকেরা বলেছেন, রোগী সামাল দিতে নানা পথ বেছে নিতে হয়েছে। এখানে ব্যবসা বড় বিষয় ছিল না।

কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের মালিক এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, ডেঙ্গু রোগীর জন্য পৃথক ব্যবস্থা করতে হয়েছে। এতে অন্য রোগীদের অধিকার কিছুটা খর্ব হয়েছে। চাপ পড়েছে চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর।

ইউনাইটেড হাসপাতালের যোগাযোগ ও ব্যবসার প্রধান শাগুফা আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, ‘ডেঙ্গুর প্রকোপ আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে। চিকিৎসাসেবার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নতুন ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অনেক মানুষকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। ভবিষ্যতে এই অভিজ্ঞতা কীভাবে কাজে লাগানো যাবে, সেটাই বড় কথা।’ তিনি বলেন, চিকিৎসকদের ঈদের ছুটি বাতিল করা হয়েছিল। পরিস্থিতি সামাল দিতে তিন মাসের জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমারজেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী, এ বছর ১১টি সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত হাসপাতাল, সিভিল সার্জনদের দেওয়া তথ্য ও ঢাকার ৩০টি বেসরকারি হাসপাতালে মোট ৫১ হাজার ৪৭৬ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে। বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছে ১৪ হাজার ৬২৮ জন। অর্থাৎ মোট রোগীর এক–চতুর্থাংশের বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পাশে না দাঁড়ালে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া আমাদের জন্য কঠিন হতো। আমাদের আবেদন ও নির্দেশ তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতোই মেনে চলেছে। আশা করি তা অব্যাহত থাকবে।’

বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে এ পর্যন্ত ২৯৪ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয়েছে। গতকাল শনিবারও ৩৪ জন রোগী ভর্তি ছিল। হাসপাতালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আল এমরান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি হাসপাতালে শয্যার বাইরেও বাড়তি রোগী রাখতে পারে। শয্যা খালি না থাকলে তারা মেঝেতে রোগী রাখে। আমাদের সেই সুযোগ নেই। আমাদের অন্যভাবে পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে।’

আল এমরান চৌধুরী বলেন, তাঁদের হাসপাতালে শল্যচিকিৎসার জন্য আসা রোগীর ভর্তি কমানো হয়েছে। অন্য কিছু রোগীর ক্ষেত্রেও কমানো হয়েছে। এতে কিছু ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

প্রথম আলোর পক্ষ থেকে একাধিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের আর্থিক লাভ-লোকসানের বিষয়টি জানতে চাওয়া হয়। অনেকেই প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। একটি বড় হাসপাতালের একজন ব্যবস্থাপক বলেছেন, ‘হাসপাতালের ১০০ শতাংশ শয্যা রোগীতে পূর্ণ থাকছে। অসংখ্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছে। এতে অবশ্যই হাসপাতালের আর্থিক লাভ হচ্ছে। তবে অত্যন্ত দুঃখজনক কারণে এই আর্থিক লাভ।’ অন্যদিকে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চেয়ারপারনস প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, আর্থিক লাভ-লোকসান এখানে বড় বিষয় নয়। সব কিছুর আগে ডেঙ্গু রোগীকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

প্রীতি চক্রবর্তী বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে জটিল জরুরি রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু কোনো ডেঙ্গু রোগী যেন ফেরত না যায়, সে দিকে বিশেষ নজর ছিল। তাই কিছু ক্ষেত্রে অন্য রোগীকে জায়গা দেওয়া সম্ভব হয়নি।’

সরকারি হিসাবে এ পর্যন্ত ৪০ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। এর অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু ব্যবস্থাপনার গাইডলাইন মেনে চলছে, সরকারি অনুরোধে শয্যা বাড়িয়েছে কিছু প্রতিষ্ঠান, ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা-নিরীক্ষার নির্ধারিত মূল্য তারা মেনে চলছে, অনেকে ঈদের ছুটিও বাতিল করেছে।

তবে ঢাকার বাইরে বেসরকারি হাসপাতালগুলো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা দিচ্ছে কি না, তা সরকারি পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।