মওদুদের কঠোর সমালোচনায় রাজ্জাক

মওদুদ আহমেদ ও আবদুর রাজ্জাক। ফাইল ছবি
মওদুদ আহমেদ ও আবদুর রাজ্জাক। ফাইল ছবি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার বিচারে বাধা সৃষ্টি করার অভিযোগ এনে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদের কঠোর সমালোচনা করেছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেছেন, ‘ব্যারিস্টার মওদুদ যখন আইনমন্ত্রী ছিলেন তখন বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেননি। পরে আইন করে বিচার বন্ধ করেছিলেন। সে আইন বাতিল করা হয়েছে, তারপরও তাঁরা এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করেননি।’

বিএনপির নেতা মওদুদের কথা উল্লেখ করে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘তারা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ছিল, বঙ্গবন্ধুর আলোতে আলোকিত ছিল। জাতীয় পার্টি করেছে, যখন এরশাদ এসেছে। পরে একনায়ক এরশাদ চলে যাওয়ার পর গণতন্ত্রের লেবাস পরে বিএনপিতে চলে গিয়েছিল।’

আজ রোববার সচিবালয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে ঈদ-পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় সভা হয়। সেখানেই এসব কথা বলেন কৃষিমন্ত্রী।

বিএনপির নেতা মওদুদসহ তাঁর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ যুগের শয়তান হিসেবে উল্লেখ করে আবদুর রাজ্জাক বলেন, ‘মওদুদেরা হলেন এ দেশের “জিনিয়াস এভিল”। এই শয়তানদের জন্য দেশটা পিছিয়ে গেছে। যে আদর্শে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেটি অব্যাহত থাকলে দেশ এগিয়ে যেত, সে জন্য আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় থাকতে হবে, তা নয়। সকল মানুষের জন্য ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গড়ে তুলতে হবে।’

কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ড ছিল আন্তর্জাতিক চক্রান্ত, যার পেছনে ছিল পাকিস্তান ও তাদের এ দেশের দোসরেরা। ইতিহাসের সবকিছু জানা যায় না, তবে কিছু জানা যায়। জানা যাওয়ার মধ্যে অন্যতম একটি হলো জিয়াউর রহমান সরাসরি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত ছিলেন। তিনি অনেককে উসকে দিয়ে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত করেন।’

আবদুর রাজ্জাক বলেন, খালেদা জিয়া বঙ্গবন্ধুর বিচার নিয়ে অনেক টালবাহানা করেছেন। প্রেক্ষাপট সব সময় এক থাকে না। ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধু–কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার শুরু হয়। এখন শুধু বাকি পলাতকদের বিভিন্ন দেশ থেকে এনে বিচার কার্য সম্পন্ন করা।

এবারের বন্যা প্রসঙ্গে কৃষিমন্ত্রী রাজ্জাক বলেন, পদ্মা, মেঘনা, যমুনার অববাহিকায় বসবাসরত এ দেশের মানুষ প্রকৃতির সঙ্গে সংগ্রাম করে বেঁচে রয়েছে যুগ যুগ ধরে। এবারের বন্যায়ও তা–ই করেছে। আল্লাহর রহমতে এবারের বন্যায় ফসলের তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি হয়েছে বীজতলার, সেখানে চাষিদেরও ছিল, সরকারের ছিল। তবে আমনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, তা অর্জন হবে।

আবদুর রাজ্জাক বলেন, পানির কারণে যেসব জায়গায় ধান চাষ করা যাবে না, সেসব জায়গায় রবি শস্য আবাদ করা হবে। কৃষকদের বিনা মূল্যে বীজ, সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণ দেওয়া হবে। পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে যাতে করে কৃষক চাষাবাদ করতে পারেন, সে জন্য সব জেলায় ইতিমধ্যে মাসকালাই বীজ প্রেরণ করা হয়েছে চাষের জন্য।

কৃষিমন্ত্রী বলেন, এবারের ঈদ খুব সুন্দর হয়েছে, আনন্দের হয়েছে। যদিও যোগাযোগ–ব্যবস্থা একটু অসুবিধা করেছে। এটুকু অসুবিধায় এ দেশের মানুষ অভ্যস্ত। ভবিষ্যতে এ অসুবিধা থাকবে না। বাংলাদেশের মানুষ দুর্যোগ দুর্বিপাক মোকাবিলা করে মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকার জাতি। তারা শত কষ্টের মধ্যেও হাসতে জানে, আনন্দ করতে জানে। তারা সবকিছু মোকাবিলা করে। এর ফলে তাদের আনন্দে ঘাটতি থাকে না। নানা সমস্যার মধ্যেই কাজ করতে হয় তাদের।

সভাপতির বক্তৃতায় কৃষিসচিব মো. নাসিরুজ্জামান বলেন, ‘এবারের বন্যায় ১০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়নি। ক্ষতি যা হয়েছে বীজতলা, কিছু পাট ও সবজির। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি আমরা সহজে পুষিয়ে নিতে পারব।’

যুগ্ম সচিব হাসানুজ্জামান কল্লোল ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে দাঁড়িয়ে এক মিনিটি নীরবতা পালন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, অধীন দপ্তরের প্রধান, মন্ত্রণালয়ের সব স্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করেন কৃষিমন্ত্রী।