গাড়ি উঠলেই সেতু কাঁপে

বগুড়ার শেরপুর-ধুনট পাকা সড়কের  মাঠপাড়া গ্রামের গাড়ামারা খালের ওপর নির্মিত বেইলি সেতু।  ছবি: প্রথম আলো
বগুড়ার শেরপুর-ধুনট পাকা সড়কের মাঠপাড়া গ্রামের গাড়ামারা খালের ওপর নির্মিত বেইলি সেতু। ছবি: প্রথম আলো

পুরোনো সেতুর পাটাতন খুলে পড়েছে কিছু অংশে। যানবাহন উঠলেই কেঁপে উঠছে সেতু। যে কোনো সময় তা ভেঙে নিচে পড়ে প্রাণহানি ঘটতে পারে। তবে বিকল্প পথ না থাকায় ধুনট-শেরপুর সড়কের ৫টি বেইলি সেতুর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন এই ভাবেই পারাপার হচ্ছে কয়েক হাজার যাত্রী।

বগুড়া সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্রে জানা যায়, ধুনট সদর থেকে শেরপুর উপজেলা পর্যন্ত সড়কের দৈর্ঘ্য ২১ কিলোমিটার। এ সড়কের পশ্চিমভরণশাহী, মাঠপাড়া, পারুলি, বৈলকান্দি ও শুবলি খালের ওপর প্রায় ২০ বছর আগে ৫টি সেতু নির্মাণ করা হয়। এ পথে প্রতিদিন যাত্রীবাহী শত শত যানবাহন ও ট্রাক চলাচল করে। তবে অতিরিক্ত মালবাহী ট্রাক চলাচলে সেতুগুলো বেশ আগেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। কয়েকবার সেতুর কিছু অংশ ভেঙে যান চলাচল বন্ধও হয়ে যায়। তখন সেতু সংস্কার করে চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। ওই সময় এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেতু হিসেবে চিহ্নিত করে সতর্ক নোটিশও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি, ৭ টন ওজনের অধিক ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দেয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা তোয়াক্কা না করে অতিরিক্ত মাল বোঝাই করে প্রতিনিয়ত অসংখ্য যান পারাপার হচ্ছে এর ওপর দিয়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রতিদিনই বাস, ট্রাক অতিরিক্ত যাত্রী ও মাল নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করছে। এভাবে পার হতে গিয়ে একাধিকবার সেতুর পাটাতন ভেঙে খালের পানিতে ট্রাক পড়ে গেছে। বারবার বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে ধুনট-শেরপুর সড়কের যোগাযোগ ব্যবস্থা। পরে কর্তৃপক্ষ কোনো রকম জোড়াতালি দিয়ে সেতুগুলো মেরামত করেছে। তবে এতে কোনো কাজ হয়নি। সংস্কারের পরও সেতুগুলো ঝুঁকিপূর্ণ থেকেছে। সূত্রটি আরও জানায়, বেইলি সেতু নির্মাণের জন্য ট্রানজাম ও স্টিল টেকিং (পাটাতন) নির্মাণ সামগ্রী দেশের বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। কিন্তু সেতু নির্মাণের সময় ওই সামগ্রী আমদানি বন্ধ ছিল। তাই পুরোনো উৎপাদন সামগ্রী দিয়েই নতুন সেতু নির্মাণ করায় কম সময়ের মধ্যে সেতুগুলো এমন অবস্থায় দাঁড়িয়েছে।

গতকাল সরেজমিনে মাঠপাড়া সেতুতে দেখা যায়, সেতুর অধিকাংশ পাটাতনের ঝালাই খুলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। খুলে যাওয়া পাটাতন আবা সেতুর ওপর বসিয়ে যানবাহন পারাপার করছে চালকেরা। বড় ও ভারী যান চলাচরের সময় বিকট শব্দ হচ্ছে সেতুতে। মনে হয় যে কোনো সময় সেতু ভেঙে পড়বে। দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা নিয়ে ওই সেতুগুলোর ওপর দিয়েই যাত্রীরা চলাচল করছেন। এ সময় কথা হয় ধুনট-শেরপুর সড়কের যাত্রী মো. সোনাউল্লার সঙ্গে। তিনি জানান, ২১ কিলোমিটার সড়কে বাসের ভাড়া ১৫ টাকা। সিএনজির ভাড়া ৩০ টাকা। তবুও সেতুর ওপর দিয়ে বাস চলাচলের ভয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে সিএনজিতেই যাতায়াত করছেন তিনি।

ট্রাক চালক আব্দুল করিম বলেন, শেরপুর-ধুনট উপজেলায় যোগাযোগে ওই সড়ক ছাড়া বিকল্প কোনো সড়ক নেই। তাই ধুনটের যমুনা নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্পের কাজে পাথর ওই সড়ক দিয়ে বহন করতে হয়। এ ছাড়া ব্যবসায়ী ও ঠিকাদারদের রড, সিমেন্ট, বালুও পরিবহন করতে হয়। তাই বাধ্য হয়েই ক্ষতিগ্রস্ত ওই সেতুগুলোর ওপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

 বাস চালক শুকুমার বলেন, প্রতিদিন সেতুর ওপর দিয়ে ১০-১২ বার যাওয়া আসা করা হয়। সেতুর কাঁপুনিতে অনেক সময় যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করে ওঠে। এ কারণে সেতুর ওপর খুব সাবধান হয়ে ধীরে ধীরে বাস চালাতে হয়। তা ছাড়া, যাত্রীরা এখন বাসে উঠতে সাহস পায় না। সিএনজি, অটোরিকশা ও ভটভটিতে করে যাতায়াত করেন। এতে তাঁদের প্রতিদিনের আয় অনেক কমে গেছে বলে জানান তিনি।

বগুড়া সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুজ্জামান বলেন, নিয়ম অমান্য করে অতিরিক্ত মালামাল নিয়ে ট্রাক পারাপার করায় বেইলি সেতুগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মেরামতের পর আবারও একই অবস্থা। এ কারণে সেতুগুলো অপসারণ করে ঢালাই সেতু নির্মাণের জন্য মন্ত্রনালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। তবে এখনো অনুমোদন পাওয়া যায়নি। অনুমোদন পেলেই ঢালাই সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হবে।