চার জঙ্গিকে আটক করেছে র‍্যাব

রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে জঙ্গি সংগঠনের চারজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে জঙ্গি সংগঠনের চারজনকে আটক করার কথা জানিয়েছে র‌্যাব। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর হাতিরঝিল থেকে ‘আল্লাহর দল’ ওরফে ‘আল্লাহর সরকার’ নামে এক জঙ্গি সংগঠনের চারজনকে আটক করেছে র‍্যাব। র‍্যাব জানিয়েছে, আটক চারজনের সঙ্গে জেএমবির সম্পৃক্ততা ছিল।

আজ সোমবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, র‍্যাব-৩-এর একটি দল গতকাল রোববার রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অভিযান চালিয়ে হাতিরঝিল এলাকা থেকে জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ এর চারজনকে আটক করে। আটককৃতরা হলেন পাবনার ইব্রাহিম আহমেদ (৪৬) ও মো. শফিকুল ইসলাম (৩৮), গাইবান্ধার আবদুল আজিজ (৫০) এবং কুড়িগ্রামের মো. রশিদুল ইসলাম (২৮)।

র‍্যাব-৩-এর অধিনায়ক ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক (গণমাধ্যম) লে. কর্নেল এমরানুল হাসান সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আটক চারজনের কাছে থেকে মোবাইল ফোন, পেনড্রাইভ ও হার্ড ড্রাইভ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জঙ্গি সংগঠন ‘আল্লাহর দল’ ওরফে ‘আল্লাহর সরকার’ এর সদস্য বলে স্বীকার করেন। তাঁরা বিভিন্ন চাঞ্চল্যকর ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ১৯৯৫ সালে জঙ্গি মতিন মেহেদী ওরফে মুমিনুল ইসলাম ওরফে মতিন মাহবুব ওরফে মেহেদী হাসান ওরফে মতিনুল হকের নেতৃত্বে ‘আল্লাহর দল’ নামের এই জঙ্গি সংগঠন গড়ে ওঠে। ২০০৪ সালের শেষের দিকে জঙ্গি সংগঠনটি জেএমবির সঙ্গে যোগ দেয়। ২০০৫ সালে সারা দেশে সিরিজ বোমা হামলার পর জেএমবি দুর্বল হয়ে পড়ে। তখন মেহেদী জেএমবি ত্যাগ করে ‘আল্লাহর দলকে’ পুনঃ জাগরণের চেষ্টা করেন। মতিন মেহেদী ২০০৭ সালে গ্রেপ্তার হন। তবে এখনো তাঁকেই আমির মানা হয়। যদিও গতকাল গ্রেপ্তার হওয়া ইব্রাহিম আহমেদ হিরো ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করছিলেন। ২০১৪ সালে কৌশলগত কারণে র‍্যাব জানায়, দলটির নাম পরিবর্তন করে ‘আল্লাহর সরকার’ নামকরণ করা হয়। সশস্ত্র সংঘাত ও নাশকতার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে উৎখাত করে উগ্রবাদী শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশে এ সংগঠন করা হয়।

র‍্যাব সংবাদ সম্মেলনে জানায়, অপব্যাখ্যার মাধ্যমে উদ্বুদ্ধ হয়ে বিভিন্ন ধর্মীয় রীতিনীতিগুলো ভিন্নভাবে পালন করত এই সংগঠন।

আটক হওয়া ইব্রাহিম আহমেদ এইচএসসি পাস করেছেন এবং পেশায় একজন মোটর পার্টস ব্যবসায়ী। ১৯৯৭ সালে মাহমুদ ওরফে ভাগনে মাহমুদের মাধ্যমে ‘আল্লাহর দলে’ যোগ দেন। তিনি জানান, জঙ্গি সংগঠনটির কার্যক্রম পাবনা জেলা থেকে শুরু হয়েছিল এবং বর্তমানে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ বেশ কয়েকটি জেলাতে রিক্রুটিং কার্যক্রম রয়েছে।

আটককৃত আবদুল আজীজ গাইবান্ধার একটি কলেজ থেকে বিকম পাস করেছেন এবং পেশায় একজন প্রাইভেট টিউটর। তিনি সংগঠনটির আর্থিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করেন। পাবনার একটি স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন শফিকুল ইসলাম সুরুজ। তিনি এ বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ঢাকা জেলার নায়ক হিসেবে কাজ করছেন। রশিদুল ইসলামকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। একটি কম্পিউটার দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন। প্রায় ৪ বছর ধরে তিনি কুড়িগ্রাম জেলার নায়ক হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন। র‍্যাব জানায়, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

আটককৃতরা জিজ্ঞাসাবাদে জানান, বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তর ও বাহিনীর অবকাঠামোর আদলে ‘আল্লাহর দলের’ অবকাঠামো করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সংগঠনটিতে সদস্যদের সশস্ত্র প্রশিক্ষণের ঝামেলা এড়াতে বিভিন্ন বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত, চাকরিচ্যুত সদস্যদের যুক্ত করার চিন্তা ছিল। সদস্য সংগ্রহের জন্য তাঁরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহারের পাশাপাশি প্রত্যন্ত অঞ্চল হতে রিক্রুটিং এর মাধ্যমে সংগঠনটির কাঠামো মজবুত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যোগাযোগের ক্ষেত্রে তাঁরা চিরকুট ও লোক মারফত দূত ব্যবহার করে থাকে। সংগঠনের সদস্যরা জঙ্গি মতিন মেহেদীকে আমির মেনে শপথ বাক্য পাঠ করার মাধ্যমে দলে নতুন সদস্য নেওয়া হয়।

র‍্যাব জানায়, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ, নজরদারি ও আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে সংগঠনের আর্থিক বিষয়াদি সম্পর্কে নানাবিধ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যায়। তাঁরা ব্যক্তি পর্যায়ে চাঁদা, জাকাতের অর্থ জঙ্গিবাদে ব্যবহার করে। এ ছাড়া তাদের নামে-বেনামে কিছু ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আর্থিক মূলধনের একটি বিরাট অংশ নামে বেনামে বিশেষ করে মহিলাদের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে গচ্ছিত রয়েছে বলে জানা যায়।

র‍্যাব জানিয়েছে, ‘আল্লাহর দলের’ পরিকল্পনা ছিল সিনেমার স্টাইলে তাদের আমির মেহেদী মতিনকে কারাগার থেকে মুক্ত করার। প্রিজনভ্যানে হামলা করে মুক্ত করার ও রেকি করা বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন আটককৃতরা।