ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বরিশালে ডেঙ্গুতে ৪ জনের মৃত্যু

.
.

ময়মনসিংহ, ফরিদপুর ও বরিশাল জেলায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত চারজন মারা গেছেন। তাঁরা হলেন মো. রাসেল মিয়া (৩৫), আনোয়ার হোসেন (৪০), সুমাইয়া আক্তার (১৮) ও শেখ মো. দেলোয়ার হোসেন (৩৫)।

তাঁদের মধ্যে মো. রাসেল মিয়া ও আনোয়ার হোসেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, শেখ মো. দেলোয়ার হোসেন ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এবং সুমাইয়া আক্তার বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান।

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক লক্ষ্মী নারায়ণ মজুমদার বলেন, গতকাল রোববার রাত ৮টার দিকে মো. রাসেল মিয়া এবং রাত একটার দিকে আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু হয়। তাঁরা দুজনেই গতকাল সকালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে রাসেল মিয়া কিশোরগঞ্জ সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। অন্যদিকে আনোয়ার হোসেনের নেত্রকোনা সদর হাসপাতালে কয়েক দিন ধরে চিকিৎসা চলছিল। তাঁদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এখানে ভর্তি হওয়ার পর হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়। রাসেলের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার চরনিকি গ্রামে। তাঁর বাবার নাম মঞ্জু মিয়া। আনোয়ার নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার আবদুল লতিফের ছেলে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, আজ সোমবার পর্যন্ত ১ হাজার ৬০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে ৮৮৩ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছে এবং ৩ জন মারা গেছে।

এদিকে আজ সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেখ মো. দেলোয়ার হোসেন মারা গেছেন। ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল ইউনিয়নের গোলডাঙ্গীচর এলাকার শেখ শফিউদ্দিনের ছেলে দেলোয়ার শহরের পূর্বখাবাসপুর মসজিদের খাদেম ছিলেন। তিনি দুই ছেলের বাবা।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা জানান, দেলোয়ার হোসেন হাসপাতালের পুরুষ মেডিসিন ওয়ার্ডে মারা যান।

কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, বর্তমানে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের মধ্যে নিজ বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আজ সোমবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসেছে মোট ৭৬১ জন। তাদের মধ্যে নিজ বাড়িতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ২৪১ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় এ হাসপাতালে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও ৩৪ জন ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জনই ফরিদপুরে নিজ বাসা থেকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছে।

ফরিদপুরের সিভিল সার্জন এনামুল হক বলেন, গত ২০ জুলাই থেকে আজ পর্যন্ত ফরিদপুরের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মোট ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২২৪ জন। গতকাল পর্যন্ত ছিল ৩৪৬ জন। চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন ৭১২ জন। এ পর্যন্ত মারা গেছে ছয়জন। বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে ১৬০ জনকে। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরও ৫৭ জন ফরিদপুরের সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৩৪, ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ৪, ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮, বোয়ালমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৭, ফরিদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে ২ এবং আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১ জন করে রোগী ভর্তি হয়েছে।

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্র জানায়, সুমাইয়া আক্তার পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার ফজলুল হকের মেয়ে। ১৬ আগস্ট বিকেলে তাঁকে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ডেঙ্গু ছাড়াও সুমাইয়া ডায়রিয়ায় ভুগছিলেন। এ ছাড়া তাঁর প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছিল। একই সঙ্গে বারবার বমি করছিলেন তিনি। গতকাল রোববার রাতে অবস্থার আরও অবনতি হলে সুমাইয়াকে ডেঙ্গু ওয়ার্ড থেকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) স্থানান্তর করা হয়। পরে আজ বেলা দুইটার দিকে তিনি মারা যান।
শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক মো. বাকীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সুমাইয়া ঢাকা থেকে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু হাসপাতালে আসার আগেই তাঁর অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক ছিল। কারণ ডেঙ্গু ছাড়াও তাঁর ডায়রিয়া, বমি এবং প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যাচ্ছিল। সে জন্য এখানে ভর্তির শুরু থেকেই গুরুত্বের সঙ্গে তাঁর চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

সুমাইয়াসহ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২১ দিনের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে পাঁচজন রোগী মারা গেছে। আজ সোমবার পর্যন্ত এই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ২৬৯ জন ডেঙ্গু রোগী। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছে ৬৫ জন। এর আগে বরিশালের গৌরনদী উপজেলায় ৩০ জুলাই ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও এক রোগীর মৃত্যু হয়।