দানের পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

বগুড়ার মহাস্থানগড় মাজারের প্রায় পৌনে এক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে রূপালী ব্যাংক মহাস্থানগড় শাখার সাবেক ব্যবস্থাপকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে দুটি আলাদা মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। আজ সোমবার সংস্থাটির সমন্বিত কার্যালয় বগুড়ায় এই মামলা করেন সহকারী পরিচালক রবীন্দ্রনাথ চাকী।

মামলার আসামিরা হলেন, রূপালী ব্যাংক মহাস্থান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক (বর্তমানে সাময়িক বরখাস্ত) জোবায়নুর রহমান, মহাস্থানগড় হাটের ইজারাদার জাহিদুর রহমান এবং একই এলাকার পানের দোকানদার ফজলুর রহমান ওরফে মন্টু। মহাস্থান বাজারে রূপালী ব্যাংকের নিচে মেসার্স ইয়া রাব্বি স্টোর নামে একটি পানের দোকান রয়েছে ফজলুরের। আর জাহিদুর মেসার্স জাহিদ কনস্ট্রাকশনের মালিক।

দুটি মামলার একটিতে আসামি করা হয়েছে জোবায়নুর ও জাহিদুরকে। মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার মহাস্থানগড় শাখায় ‘মহাস্থান বাজার মসজিদ কমিটি’ নামের একটি হিসাব আছে। এই হিসাব নিয়ন্ত্রণ করেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং মসজিদ কমিটির একজন প্রতিনিধি। ব্যাংকের বিধি অনুযায়ী এই হিসাব থেকে অন্য হিসাবে টাকা স্থানান্তর করতে হলে হিসাব নিয়ন্ত্রণকারীদের অনুমোদন লাগবে। কিন্তু মহাস্থান বাজার মসজিদ কমিটির হিসাব থেকে ২০১৭ সালের ২৬ জুলাই ৪৯ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে মো. জাহিদুরের হিসাব নম্বরে স্থানান্তর করা হয়। জাহিদুর ওই টাকা একই দিন ব্যাংক থেকে তুলে নেন। ব্যাংকের চেকে জাহিদুর স্বাক্ষর করে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিয়েছেন। অথচ টাকা স্থানান্তরের বিষয়টি হিসাবের নিয়ন্ত্রণকারীদের কেউ জানেন না। জালিয়াতির এই পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক জোবায়নুর রহমান।

আরেক মামলার আসামি ব্যাংক কর্মকর্তা জোবায়নুর এবং পান ব্যবসায়ী মো. ফজলুর রহমান। এই মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মহাস্থান বাজার মসজিদ কমিটি’র হিসাব থেকে ২০১৮ সালের ২ জানুয়ারি ৩৫ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফজলুরের হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। একই দিন ওই ব্যাংকে থেকে চেকের মাধ্যমে সব টাকা তুলে নেন ফজলুর রহমান। চেকে তিনি স্বাক্ষর করেন।

সূত্র জানায়, টাকা আত্মসাতের বিষয় দুটি জানাজানি হলে জেলা প্রশাসক তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন। তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসককে (রাজস্ব)। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনেও দুই জালিয়াতির বিষয় প্রমাণিত হয়। ২০১৮ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি জমা দেওয়া ওই তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, ‘মহাস্থান বাজার মসজিদ কমিটির হিসাব থেকে মোট ৮৪ লাখ ৬০ হাজার টাকা জালিয়াতির মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে। এই জালিয়াতচক্রকে সহায়তা করেছেন ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপক জোবায়নুর রহমান। আর জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে টাকা আত্মসাৎ করেছেন জাহিদুর ও ফজলুর রহমান।

রূপালী ব্যাংক মহাস্থান শাখার ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা আত্মসাতের ঘটনায় করা আরও একটি মামলার আসামি ব্যাংক কর্মকর্তা জোবায়নুর ও মহাস্থান হাটের ইজারাদার জাহিদুর রহমান। ওই মামলায় অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে গত বছরের ১১ ফেব্রুয়ারি।