সাপুড়ে নিয়ে মেয়রের সাপ ধরার অভিযান

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় নগরজুড়ে চলছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান। প্রতিদিনই কোনো না কোনো এলাকায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর উপস্থিতিতে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান হচ্ছে। পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাতে গিয়ে বিষধর সাপের সন্ধান মেলে। আজ সোমবার সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পরিচ্ছন্নতা অভিযান থেকে সাপুড়ে দিয়ে ছয়টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা সাপের মধ্যে দুটো বিষধর গোখরাও রয়েছে।

আজ সাপ উদ্ধারের ঘটনাটিকে মেয়র রসিকতার সুরে ‘সাপ উদ্ধার অভিযান’ অভিহিত করে বলেন, ‘এ যেন কেঁচো খুঁড়তে সত্যি সত্যি সাপ বের হয়ে এল।’

নগরীর ব্যস্ত এলাকা জিন্দাবাজারের কাস্টমস কার্যালয় ও মাতৃমঙ্গল হাসপাতালসংলগ্ন এলাকা থেকে সাপুড়ে জীবিত অবস্থায় ছয়টি সাপ উদ্ধার করে। মেয়রের উপস্থিতিতে সাপুড়ে মো. বোরহান উদ্দিন জালালীসহ সাত সদস্যের একদল সাপুড়ে সাপগুলো ধরতে সক্ষম হয়।

সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, ঝোপঝাড় ও অপরিচ্ছন্ন এলাকায় প্রায় পক্ষকাল ধরে চলছে সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা অভিযান। এর সুবাদে জিন্দাবাজার এলাকার কাস্টমস অফিস ও মাতৃমঙ্গল হাসপাতাল এলাকায়ও চলছিল অভিযান। একই সঙ্গে সড়ক সম্প্রসারণের একটি প্রকল্পের কাজ চলার সময় নির্মাণশ্রমিকেরা সাপের উপদ্রব আঁচ করতে পেরে মেয়রকে অবহিত করেন। আজ সোমবার সকালে মেয়র সাপুড়ে দলকে নিয়ে সেখানে গিয়ে সাপ উদ্ধার করেন।

মেয়র প্রথম আলোকে জানান, ওই স্থানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও উন্নয়নকাজ একই সঙ্গে চলছিল। এ জন্য সাপের উপস্থিতির বিষয়টি অনুমান করেছিলেন শ্রমিকেরা। তাঁদের কথাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে সাপুড়ে দিয়ে অভিযান চালাতে গিয়ে ধরা পড়ল ছয়টি সাপ। ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় মেয়রের নেতৃত্বে অধিকাংশ পরিচ্ছন্নতা অভিযান হচ্ছে। পাশাপাশি সড়ক বড় করার উন্নয়ন প্রকল্পেও মেয়রের নেতৃত্বে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান হয়।

সাপ উদ্ধারের পর সেখানে পরিচ্ছন্নতা অভিযান ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ অব্যাহত রাখা হয়। সাপ ধরার সময় স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত, সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, নির্বাহী প্রকৌশলী আলী আকবরসহ সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতা দপ্তরের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

সাপুড়ে দলের সাপ ধরার কসরত চালানোর সময় সেখানে উৎসুক মানুষের ভিড় ছিল। সাপুড়ে দল সেখানে অনুসন্ধান চালিয়ে সাপের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত হয়। ঘণ্টাখানেকের চেষ্টায় এক-এক করে ছয়টি সাপ জ্যান্ত ধরতে সক্ষম হন তাঁরা। এর মধ্যে দুটো ছিল গোখরা। বাকি চারটিও বিষধর সাপ বলে জানিয়েছেন সাপুড়ে দলপ্রধান মো. বোরহান উদ্দিন জালালী। অভিযান শেষে তিনি বলেন, ঘটনাস্থলে ‘কড়ি চালান’ দিয়ে বুঝতে পারি একাধিক বিষধর সাপ আছে এখানে। প্রথমে দুটো গোখরা সাপ ধরি। এরপর আরও চারটি সাপ জীবিত ধরতে সক্ষম হই। এ সাপগুলোর প্রজাতি তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত নই, তবে চারটি সাপই বিষধর।

কড়ি চালান বুজরুকি: অধ্যাপক ফিরোজ জামান
আজ সিলেটে ‘কড়ি চালান দিয়ে’ সাপ ধরার যে কথা সাপুড়ে দলের প্রধান বোরহান উদ্দিন জালালী বলেছেন, তাকে ‘বুজরুকি’ বলেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ ফিরোজ জামান। তিনি আজ রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাপুড়ে নিজে থেকে এখানে সাপ ছেড়ে দিতে পারেন। বা তিনি আগে থেকেই এখানে সাপের অস্তিত্বের বিষয়ে জানেন। আর সাপ ধরতে হয়তো তিনি দক্ষ। সেই দক্ষতার বলেই সাপ ধরেছেন। কড়ি চালান একেবারে অবৈজ্ঞানিক বিষয়।’