মন্দিরের পুকুর ভরাট করে বিপণিবিতান

ব্রাহ্মণবাড়িয়া
ব্রাহ্মণবাড়িয়া

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি প্রভাবশালী মহলের বিরুদ্ধে হিন্দু মন্দিরের পুকুর বালু ফেলে ভরাট করে সেখানে অস্থায়ী বিপণিবিতান (মার্কেট) নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পুকুরের জায়গাটি দখলের কৌশল হিসেবে এই বিপণিবিতানে কাপড়ের দোকান বসানো হয়েছে।

দলিলপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি মাঠ জরিপের ভিপি খতিয়ান ২২০ অনুসারে ৩৭৭১ দাগে ৩৭ দশমিক ২৫ শতক এবং এসএ দাগ ১৯৭২ ও বিএস ৩৭৫৬ দাগে ১৭ দশমিক ৫৬ শতক জায়গায় পুকুর রয়েছে। জেলা শহরের কান্দিপাড়ার প্রয়াত আনন্দ বাবু ও রাধিকা মোহন ১১৩৬ নম্বর সিএস খতিয়ানের ১১৪২ সিএস দাগে ৫২ দশমিক ৭৫ শতক জায়গা রাধাগোবিন্দ বিগ্রহ মন্দিরের নামে দান করেন। ১০৬৪ ও ১০৬৫ নম্বর খতিয়ানের ১৯৭২ এসএ দাগে পুকুরের ৫২ দশমিক ৭৫ শতক জায়গা মন্দিরের পক্ষে সেবায়েত রেবতী মোহন চৌধুরীর নামে লিপিবদ্ধ করা হয়। রেবতী মোহন চৌধুরী পরলোকগমন করার পর তাঁর নাতি আশীষ কুমার চৌধুরী সেবায়েতের দায়িত্বে রয়েছেন।

গত শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, কোর্ট রোড এলাকায় হিন্দু মন্দিরের ওই পুকুরের অধিকাংশ জায়গা বালু ফেলে ভরাট করা হয়েছে। পুকুরের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে গোলাপ রেস্টহাউসের তত্ত্বাবধানে টিনশেড দিয়ে অস্থায়ী বিপণিবিতান নির্মাণ করা হয়েছে। সেখানে হকাররা কাপড়ের দোকান নিয়ে বসেছেন। মাঝের অংশ টিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, ওই অংশ দিয়ে রাতে ট্রাকে করে বালু ফেলা হয়।

জানতে চাইলে কয়েকজন দোকানি বলেন, ‘আমরা হকার। আমাদের কোনো ভাড়া দিতে হবে না। আমাদের কাপড় বিক্রি করার নির্দিষ্ট কোনো জায়গা নেই। তাই এখানে বসেছি।’

পুকুর ভরাটের কাজ শুরু হয় কয়েক বছর আগে। পুকুরের পাড়ের বাসিন্দা গোলাপ মিয়া, জাহাঙ্গীর কবীর ও তাঁর ছেলে সোহেল কবীরের নেতৃত্বে পুকুরটি ভরাট করা হয়। ২০১৭ সালের ১৮ ডিসেম্বর পরিবেশ অধিদপ্তর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে পুকুরের প্রায় অর্ধেক বালু দিয়ে ভরাটের প্রমাণ পায়। গত বছরের ১৫ মার্চ পুকুর গোলাপ মিয়া ও সোহেল কবীরকে শুনানির নোটিশ দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর। কিন্তু তাঁরা কেউই যাননি।

এদিকে উত্তর দিকে পুকুর লাগোয়া অমরেন্দ্রনাথ লাল রায়সহ হিন্দু সম্প্রদায়ের ১১ জন ব্যবসায়ীর সাড়ে ১০ শতক জায়গা রয়েছে। চলতি বছরের ২৯ জুন গোলাপ, জাহাঙ্গীরসহ তাঁদের লোকজন ওই ১১ ব্যবসায়ীকে ভয় দেখিয়ে দখল করার হুমকি দেন। এই অবস্থায় ৩০ জুন অমরেন্দ্রনাথ লাল রায়সহ ১১ জন ব্যবসায়ী আদালতে ১৪৪ ধারা জারির জন্য আবেদন করেন।

ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে গোলাপ মিয়া, জাহাঙ্গীর কবীর ও তাঁর ছেলে সোহেল কবীরের পাওয়া যায়নি। তা ছাড়া মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তাঁরা ধরেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, ২০১৭ সালে একজন সরকারি কর্মকর্তা জালিয়াতির মাধ্যমে ওই পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তন করেছেন।

একজন আইনজীবী বলেন, জালিয়াতির মাধ্যমে যদি বিএস-এ কারও নাম সৃজন হয়ে যায় ও করণিক ভুল থাকে, সে ক্ষেত্রে গেজেট বিজ্ঞপ্তির আগে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট ম্যানুয়াল ১৯৩৫-এর ৫৩৩ ও ৫৩৪ বিধি অনুযায়ী তা সংশোধন করতে পারেন। এই বিধি অনুসারে সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা ভূমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে পারেন না।

বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন, ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০)-এর ৬ (ঙ) অনুযায়ী, জাতীয় অপরিহার্য স্বার্থ ছাড়া কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান কর্তৃক সরকারি বা আধা সরকারি, এমনকি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের বা ব্যক্তিমালিকানাধীন পুকুর ভরাট না করার বিধান রয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের জলাধার বা পুকুর ভরাট সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ভরাটকারীর বিরুদ্ধে আইনের ৭ ধারায় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের বিধান রয়েছে।

জেলা প্রশাসক হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, ‘যখনই আমরা সংবাদ পেয়েছি, ম্যাজিস্ট্রেট পাঠিয়ে ভরাট বন্ধ রাখার চেষ্টা করেছি। অস্থায়ী মার্কেট নির্মাণের বিষয়টি মাত্রই শুনলাম। সেখান থেকে হকারদের উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হবে।’