ঘৃতকুমারী চাষ লাভজনক, সমস্যা বিপণনে

>লাভজনক হলেও বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার কৃষকেরা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন না। বাজারজাতকরণের সুযোগ না থাকায় এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলায় ঘৃতকুমারী চাষ করে ব্যাপক লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু বাজারজাতের ব্যবস্থা না থাকায় অনেকেই এই ফসল আবাদে আগ্রহী হয়ে উঠছেন না।

অন্য ফসলের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি লাভবান হওয়ায় উপজেলার কয়েকজন কৃষক ঘৃতকুমারী চাষ করছেন। তাঁদেরই একজন শাজাহানপুরের আমরুল ইউনিয়নের মারিয়া গ্রামের কৃষক জাহিদুল ইসলাম।

এক যুগ আগে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করেন জাহিদুল ইসলাম। শুরু করেছিলেন ১২ শতক জমি দিয়ে। প্রথমে নাটোর থেকে তিনি চারা সংগ্রহ করেছিলেন। এই চারা পরিচর্যা করতে সময় লেগেছিল বছর তিনেক। এখন তিনি চাষ করেন এক বিঘার বেশি জমিতে। তবে বর্তমানে তিনি নিজেই চারা তৈরি করেন। চাষের পরিধিও বাড়িয়েছেন।

বগুড়া-ঢাকা মহাসড়কের আরিয়া বাজার থেকে এক কিলোমিটার পূর্ব দিকে করতোয়া নদী। এ নদীর পূর্ব তীরের মারিয়া গ্রামের কয়েক বিঘা জমিতে ঘৃতকুমারী চাষ করেছেন জাহিদুল ইসলাম। এখানে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু হয় প্রায় এক যুগ আগে।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, জাহিদুল ঘৃতকুমারীর জমির আগাছা পরিষ্কার করছেন। কদিন আগেই চারা ও বড় ঘৃতকুমারীর গাছে চুন ছিটিয়েছেন। নিয়মিত আগাছা পরিষ্কার, চুন ছিটানো ও বিভিন্ন প্রকার সার দেওয়াই এই ফসল উৎপাদনের প্রধান কাজ। চুনের পানি দিলে গাছের পাতায় কোনো দাগ হয় না। তবে বড় পরিসরে কাজে লাগে প্রসাধনসামগ্রী তৈরিতে। কিন্তু দেশে এখনো কোনো কারখানা তৈরি হয়নি।

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান আনোয়ারুল ইসলাম জানান, ঘৃতকুমারী বৈজ্ঞানিক নাম Aloe Vera। লিলি প্রজাতির উদ্ভিদ। এদের ভেষজ গুণ আছে।

ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করার বিষয়ে জাহিদুল জানান, তাঁর বড় ভাইয়ের পরামর্শে ঘৃতকুমারীর চাষ শুরু করার সময় এলাকার লোকজন বিরূপ মন্তব্য করছিলেন। এতে তিনি কান দিতেন না। তিন বছর পর এর উৎপাদন শুরু হয়। চারা ছোট থাকায় প্রথমে সমস্যায় পড়েছিলেন জাহিদুল। উৎপাদন হওয়ার পর থেকে অন্য কোনো ফসলের দিকে তাঁকে আর ঝুঁকতে হয়নি।

এই ফসল অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে বেশি ফলনশীল বলে জানান জাহিদুল। প্রথম প্রথম ঘৃতকুমারীর দাম কম ছিল। তবে সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাজারে ঘৃতকুমারীর দাম বেড়েছে। অন্য যেকোনো ফসলের চেয়ে ঘৃতকুমারী থেকে বেশি আয় হয়। এ কারণে তাঁকে ঘৃতকুমারী চাষ ছাড়তে হয়নি।

জাহিদুল আরও বলেন, এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫০ মণ ঘৃতকুমারী উৎপাদিত হয়। সময়ভেদে ৫ থেকে ২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। মূলত ছয় মাস ভরা মৌসুম। এ সময় দাম বেশি থাকে। তবে সবই বিক্রি করা হয় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাছে। গড় হিসাব করলে দেখা যায়, এক বিঘায় ঘৃতকুমারী চাষ করলে বছরে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা আয় হয়। অন্য কোনো কৃষি আবাদ করে এই পরিমাণ টাকা আয় করা সম্ভব নয়।

ওই গ্রামের আরেক ঘৃতকুমারীচাষি ওবায়দুর রহমান। তিনি অবশ্য জাহিদুলের কাছ থেকে চারা নিয়ে ঘৃতকুমারী চাষ শুরু করেন ১৫ শতক জমিতে। এখন তিনি দুই বিঘার বেশি জমিতে এই উদ্ভিদ চাষ করেন। ওবায়দুর জানান, বাজার ভালো থাকলে ঘৃতকুমারী চাষের মতো লাভবান হওয়ার কোনো ফসল আপাতত এই অঞ্চলে আর নেই। কিন্তু বাজার ব্যবস্থাপনা খারাপ। সরাসরি বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ঘৃতকুমারী বিক্রি করার সুযোগ নেই। বিভিন্ন এলাকার বিউটি পারলার, নাটোরের কিছু ব্যবসায়ী ও শরবত বিক্রয়কারীরা তাঁদের কাছ থেকে ঘৃতকুমারী কেনেন।

এই বিষয়ে জাহিদুল বলেন, ‘শুনেছি ঘৃতকুমারী দিয়ে নানা হারবাল ওষুধ তৈরি করা হয়। কিন্তু তাঁদের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। বড় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে এই এলাকার বেশির ভাগ মানুষই ঘৃতকুমারী চাষ করতেন।’

একই গ্রামের আমিরুল ইসলাম নামের এক কৃষক বলেন, সরকার বাজার তৈরি করলে তাঁরা ঘৃতকুমারী চাষে আগ্রহী। বাজার না থাকলে ঘৃতকুমারী এমন জিনিস, যা বাড়িতে রেখে খাওয়াও যাবে না।

ঘৃতকুমারী হারবাল চিকিৎসায় প্রয়োজনীয় বলে জানান বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান মো. আনোয়ারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ঘৃতকুমারীর পাতার শাঁস পোড়াস্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য, চর্মরোগ, যকৃতের রোগের চিকিৎসায়ও ঘৃতকুমারীর পাতা ও শাঁস ব্যবহার করা হয়।