জমজমাট 'দাওয়াতি কাবাডি' খেলা

সুনামগঞ্জে দাওয়াতি কাবাডি খেলা। গতকাল সদর উপজেলার জগজ্জীবনপুর গ্রামের মাঠে।  ছবি: খলিল রহমান
সুনামগঞ্জে দাওয়াতি কাবাডি খেলা। গতকাল সদর উপজেলার জগজ্জীবনপুর গ্রামের মাঠে। ছবি: খলিল রহমান

সুনামগঞ্জের হাওর এলাকায় এখন ভরা বর্ষা। চারদিকে থইথই পানি। এই সময় গ্রামের মানুষের তেমন কোনো কাজ থাকে না। তাই গ্রামের মানুষ দাওয়াতি কুস্তি, কাবাডি, গান-বাজনা, কেচ্ছার আসর নিয়েই এ সময়ে ব্যস্ত থাকে। এক গ্রামের মানুষ আরেক গ্রামের মানুষকে দাওয়াত করে এনে খেলার আয়োজন করে বলেই এসব খেলাকে দাওয়াতি কুস্তি কিংবা দাওয়াতি কাবাডি খেলা বলা হয়। উৎসবের আমেজে এসব খেলা হয়।

সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কাঠইর ইউনিয়নের জগজ্জীবনপুর গ্রামের মাঠে গতকাল সোমবার দিনভর এমনই জমজমাট দাওয়াতি কাবাডি খেলা অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় জগজ্জীবনপুর, মদনপুর, কান্দাগাঁও—এই তিন গ্রামের মানুষ মিলে এই খেলার আয়োজন করে। তারা দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসে ছাতক উপজেলার চরমহল্লা ইউনিয়নের জলালীপুর, শেওতারচর, দুর্লবপুর গ্রামের মানুষকে। দুই এলাকার ৫০টি দল দিনভর খেলায় অংশ নেয়। সকালে ছাতক উপজেলার লোকজন চলে আসে সুনামগঞ্জে। দাওয়াতি লোকজনের খাবারদাবারের জন্য জবাই করা হয় দুটি গরু। গ্রামের ঘরে ঘরে গরুর মাংস দেওয়া হয়। এরপর প্রতিটি ঘরে ভাগ করে দেওয়া হয় দাওয়াতি লোকজনকে। দুপুরে খেলার বিরতির সময় এসব লোকজনকে দাওয়াত খাওয়ানো হয়।

স্থানীয় লোকজন জানান, জগজ্জীবনপুর গ্রামের মাঠে দাওয়াতি এই কাবাডি খেলা ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে হয়ে আসছে। যে বছর হাওরের বোরো ধান ভালো হয়, সে বছর খেলার আয়োজনও থাকে বড়। এই আয়োজনে আশপাশের গ্রামগুলোতেও উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে। এসব খেলায় কোনো পুরস্কার থাকে না। তবে যাদের দাওয়াত দিয়ে আনা হয়, তাদের উপহারসামগ্রী দেওয়া হয়। গতকালের খেলায় একটি খাসি উপহার দেওয়া হয়।

ছাতক উপজেলা থেকে আসা দলগুলোর সমন্বয়কারী আজাদুর রহমান বলেন, ‘ তাদের দাওয়াত ও আদর-আপ্যায়নে আমরা খুশি। এখন সুনামগঞ্জের মানুষকে আমরা দাওয়াত দিয়ে ছাতকে নেব।’

  আয়োজকেরা জানান, গ্রামের মানুষ চাঁদা তুলেই প্রতিবছর এই খেলার আয়োজন করে। এতে গ্রামে গ্রামে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য বাড়ায়। মানুষে মানুষে ভাবের আদান-প্রদান হয়। আবার এই দেখা-সাক্ষাৎ থেকে গ্রামে গ্রামে আত্মীয়তার সম্পর্কও গড়ে ওঠে।