ভিডিও চিত্রে শনাক্ত ৪০ হামলাকারী

সিলেট
সিলেট

সিলেট নগরের একটি রেস্তোরাঁয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের তিন নাগরিকের ওপর হামলাকারী ৪০ জনকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। ৪০ জনই মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দের অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মী। ঘটনার ভিডিও চিত্র পর্যবেক্ষণ করে গতকাল সোমবার ভোরে সুনামগঞ্জ থেকে দুজন ছাত্রলীগ কর্মীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে।

পুলিশ জানায়, ৬ আগস্ট রাতে হামলাকারীরা পালিয়ে যায়। তবে ঘটনাস্থলে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায় সংরক্ষিত ভিডিও চিত্র দেখে হামলাকারী শনাক্ত হওয়ায় আসামি ধরার অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। প্রথম দফায় দুজনকে ধরার পর গত রোববার রাতে সুনামগঞ্জ শহরের আলীপাড়ায় অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। দীপু রায় (২২) ও সাগর তালুকদার ওরফে রানা (২১) নামের এ দুজনকে সুনামগঞ্জ শহরের আলীপাড়া আবাসিক এলাকার পল্লবী-২৩ নম্বর বাসার মনির ভিলা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকালে দুজনই মাতাল অবস্থায় ছিলেন। সিলেট কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ওবায়দুল্লাহের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

পুলিশ সূত্র জানায়, ৬ আগস্ট রাত পৌনে ১২টার দিকে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের তিন নাগরিক দেশে থাকা তাঁদের আত্মীয়দের নিয়ে সিলেট নগরের জল্লারপাড় এলাকার একটি রেস্তোরাঁয় খাবার খেতে যান। এ সময় সেখানে থাকা কয়েকজন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী তাঁদের পোশাক নিয়ে কটূক্তি করেন। কটূক্তির প্রতিবাদ করায় তাঁদের ওপর হামলা ও তাঁদের ব্যবহৃত গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত তিনজনের চাচাতো ভাই মো. জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে ৭ আগস্ট সিলেট কোতোয়ালি থানায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত ৩০-৪০ জনকে আসামি করে মামলা করেন। ঘটনার রাতেই একজনকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে সিসিটিভির ভিডিও চিত্র দেখে আসামিদের শনাক্ত করে অভিযান চালায়।

সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. সেলিম মিঞা বিষয়টি নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে জানান, গ্রেপ্তার হওয়া এ দুজনের মধ্যে একজন এজাহারভুক্ত। অন্যজন ভিডিও চিত্র দেখে শনাক্ত করা। এভাবে মামলার ৪০ আসামিকে গ্রেপ্তারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। গতকাল ভোরে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে দুপুরে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। হামলাকারীদের অনেকেই এখন এলাকা ত্যাগ করেছেন জানিয়ে ওসি জানান, ভিডিও চিত্র দেখে আরও বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা সূত্রের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

তদন্ত–সংশ্লিষ্ট পুলিশ সূত্র জানায়, হামলাকারী ৪০ জনই স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি পিযুষ কান্তি দের অনুসারী। পিযুষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্রবাজি ও সন্ত্রাসের অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। অনুসারীদের পলাতক অবস্থার মধ্যে পিযুষও অনেকটা আত্মগোপনে রয়েছেন।

গতকাল বিকেলে পিযুষের মুঠোফোনে ফোন দিলে ওপাশ থেকে রিসিভ হয়। পরিচয় দেওয়ার পর সংযোগ কেটে দেওয়া হয়। এরপর আরও দুবার চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। হামলার শিকার তিন তরুণই বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক। তাঁরা এবারই প্রথম মা–বাবার দেশ হিসেবে বাংলাদেশে এসেছিলেন ঈদ উদ্‌যাপন করতে। হামলার ঘটনায় তিনজনই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। এঁদের একজন গতকাল যুক্তরাজ্যে ফিরে গেছেন। বাকি দুজন চলতি সপ্তাহে যুক্তরাজ্যে যাবেন বলে  জানা গেছে।