সংস্কারের তিন বছরেই খানাখন্দে ভরা

নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে কিছুদূর পরপর এ রকম খানাখন্দ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। গত রোববার শেরপুর এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে কিছুদূর পরপর এ রকম খানাখন্দ। ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন। গত রোববার শেরপুর এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

ময়মনসিংহের নান্দাইল-দেওয়ানগঞ্জ সড়কে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সংস্কারকাজ শুরু হয়। কাজের চুক্তিমূল্য ছিল ৬ কোটি ২৬ লাখ টাকা। ২০১৬ সালে সংস্কারকাজ শেষ হলে সড়কে পুরোদমে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। কিন্তু তিন বছর পার না হতেই ১৭ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সড়কটির বিভিন্ন স্থান খানাখন্দে ভরে গেছে।

এলাকার লোকজনের অভিযোগ, মানসম্মত কাজ না হওয়ায় সংস্কারকাজ টেকসই হয়নি। অন্যদিকে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) কর্তৃপক্ষ বলছে, তিন বছর পার হলে একটি সড়কে কিছু খানাখন্দ হতেই পারে। তবে বাস্তবে এসব খানাখন্দের কারণে মানুষের ভোগান্তি বেড়ে গেছে।

গত শনি ও রোববার এ প্রতিবেদক নান্দাইল সদর থেকে দেওয়ানগঞ্জ টেম্পোস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৭ কিলোমিটার সড়ক পরিদর্শন করেন। সড়কের পাঁচরুখি ও দেওয়ানগঞ্জ বাজারের কিছু অংশ কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে করা হয়েছে। ঢালাইয়ের স্থানগুলোতে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। তবে সড়কের বাকি অংশে কিছু দূর পরপর কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। সম্প্রতি বৃষ্টি হওয়ায় গর্তগুলো পানিতে টইটুম্বুর হয়ে রয়েছে। দূর থেকে মৃদু গতি নিয়ে আসা যানবাহনগুলো গর্তের পানিতে পড়ে খাবি খাচ্ছে। তখন গর্তের পানি চারপাশে গিয়ে ছিটকে পড়ছে। এক-দুই কিলোমিটার পরপর
এ ধরনের গর্ত তৈরি হওয়ায় জনভোগান্তি বেড়ে গেছে।

গত দুদিন সড়কের দুই পাশের তিনটি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের প্রায় ২৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে এ প্রতিবেদকের কথা হয়। তাঁরা জানান, সংস্কারকাজ শেষ হওয়ার কিছুদিন পর থেকে কার্পেটিং অসমতল হয়ে পড়ে। অনেকটা ঢেউখেলানোর মতো। ফলে সড়কে ২০ কিলোমিটারের বেশি গতিতে যানবাহন চালানো যায় না।

কয়েকজন সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলের চালক জানান, গতি বাড়ালেই যানবাহন লাফাতে শুরু করে। মনে হয় যেন ঘোড়ার ওপর সওয়ার হয়েছি। সোহাগ আকন্দ নামের একজন সরকারি চাকুরে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, এ ধরনের লাফানো সড়ক উপজেলার আর কোথাও নেই। ছয় কোটির বেশি টাকা খরচের পর উপজেলাবাসী এ ধরনের গতিহীন সড়ক প্রত্যাশা করেনি।

সড়কটির গুরুত্ব উল্লেখ করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) নান্দাইল সদরে স্থাপন করা একটি ফলকে বেশ কিছু তথ্য তুলে ধরেছে। সড়কটির দৈর্ঘ্য ১৭ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৭ দশমিক ৩২ মিটার। এটি নান্দাইলের সঙ্গে গফরগাঁও ও কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর উপজেলাকে যুক্ত করেছে। এ ছাড়া নান্দাইল সদরের সঙ্গে আচারগাঁও, শেরপুর ও খারুয়া—তিনটি ইউনিয়নকেও যুক্ত করেছে। পাশাপাশি ২টি গ্রোথ সেন্টার, ৪টি বড় বাজার, ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৭টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র এই সড়কের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।

সড়কটির বিষয়ে গতকাল সোমবার যোগাযোগ করা হলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী (এলজিইডি) মো. আবুল খায়ের মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সংস্কারকাজের পর সড়ক দিয়ে বালুবাহী ট্রাক ও ভারী যানবাহন চলাচল করে। এসব যানবাহনের ওজন সহ্য করার ক্ষমতা একটি গ্রামীণ সড়কের থাকার কথা নয়। এলজিইডি তো সড়কের গাড়ি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। এখন গুরুত্বপূর্ণ সড়কটি আরও প্রশস্ত ও ভারী যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। তাঁদের সে ধরনের পরিকল্পনা আছে।