রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরে চলছে নানা অপপ্রচার

এক দিন পরই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে।  ছবি: প্রথম আলো
এক দিন পরই শুরু হচ্ছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে রয়েছে উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা। সম্প্রতি জাদিমোরা শালবন রোহিঙ্গা শিবিরে। ছবি: প্রথম আলো

২২ আগস্ট রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঘিরে কক্সবাজারের টেকনাফের বিভিন্ন শিবিরে একটি মহল অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে এ চক্রের কাউকে এখনো শনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। 

এ অবস্থায় শিবিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। 

কক্সবাজার র‌্যাব-১৫ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক উইং কমান্ডার আজিম আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, সরকারের নির্দেশে রোহিঙ্গা শিবিরে র‌্যাবের দুটি টহলদল কাজ করছে। সাদাপোশাকে গোয়েন্দাদের নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে শিবিরে কোনো ধরনের গুজবে কান না দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে।

প্রথম দিনে ৩৫৪০ জন রোহিঙ্গাকে নৌপথে নিজ দেশে প্রত্যাবাসন করার কথা রয়েছে। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এদের মধ্যে বড় অংশটি হবে টেকনাফের জাদিমোরা শালবন শিবিরের বাসিন্দা।

অডিও ও প্রচারপত্র
গতকাল বেলা ১১টার দিকে জাদিমোরা শালবন শিবিরে গিয়ে দেখা গেছে, কয়েকটি দোকানের সামনে কিছু রোহিঙ্গা জড়ো হয়ে মুঠোফোনে একটি অডিও বার্তা শুনছে। মিয়ানমারের ভাষায় ৩ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের এই অডিওতে এক জায়গায় রোহিঙ্গাদের উদ্দেশে বলা হয়েছে, ‘আপনাদের বলা উচিত, আমরা মিয়ানমারে ফিরে যাব না। মিয়ানমারে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। সর্বোপরি জাতিসংঘ কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। আমাদের জোর করে প্রত্যাবাসন করা যাবে না।’

এ ছাড়া শিবিরে রোহিঙ্গাদের হাতে হাতে পাওয়া গেল এক পৃষ্ঠার রঙিন প্রচারপত্র। প্রচারপত্রে প্রত্যাবাসনবিরোধী বার্তা রয়েছে। এ সম্পর্কে শালবন রোহিঙ্গা শিবিরের বাসিন্দা করিম উল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এতে লেখা আছে, প্রত্যাবাসনকারী রোহিঙ্গাদের প্রথমে এনবিসি কার্ড (ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড) নিতে হবে। এ কার্ডের অর্থ হলো আমরা বাংলাদেশি নাগরিক। আমাদের নিয়ে মংডুর নাকফুরা শিবিরে রাখা হবে, সেখান থেকে ছয় মাসের জন্য আইডিবি ক্যাম্পে নেওয়া হবে।’

করিম উল্লাহ বলেন, ‘নাগরিকত্ব ও সম–অধিকার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত যাবে না। প্রয়োজনে বাংলাদেশে আমাদের গুলি করে হত্যা করা হোক, তবু আমরা যাব না। মিয়ানমার সরকার মিথ্যাবাদী। তাদের বিশ্বাস করা যাচ্ছে না।’

প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক
গতকাল দুপুরে টেকনাফে জাদিমোরা শালবন শিবিরে প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক হয়। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের সহকারী মো. খালেদ হোসেনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শিবিরের রোহিঙ্গা চেয়ারম্যান, দলনেতা, ব্লক মাঝিসহ মাস্টার, ইমাম, মুরব্বি, এনজিওকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। মো. খালেদ হোসেন বলেন, ‘রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে তাদের বিভিন্ন সমস্যার কথা শুনেছি। বিশেষ করে, প্রত্যাবাসন নিয়ে শিবিরে যাতে গুজব, অপপ্রচার সৃষ্টি না হয়, সেদিকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ সরকার জোর করে কোনো রোহিঙ্গাকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠাবে না, সে বিষয়ে তাদের আশ্বস্ত করা হয়েছে। 

কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) ইকবাল হোসেন অপপ্রচারে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।