সরকারি ১৭ রাবারবাগানে বছরে ১০ কোটি টাকা লোকসান

রাবার গাছ।  ফাইল ছবি
রাবার গাছ। ফাইল ছবি
>একটি রাবারগাছের অর্থনৈতিক জীবনচক্র ২৮-৩০ বছর। এসব গাছ কেটে নতুন বাগান সৃজন করা হচ্ছে না। লোকসানের এটিই বড় কারণ।

টানা ছয় বছর ধরে লোকসান গুনছে সিলেটের শাহজীবাজার রাবারবাগান। গত অর্থবছরে এই বাগানের লোকসান হয়েছে ৬ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। ২ হাজার ১০৪ একর আয়তনের সরকারি এই বাগানটিতে গাছ আছে মোট ২ লাখ ৪০ হাজার ১০৬টি। এর মধ্যে উৎপাদনশীল আছে মাত্র ৬১ হাজার ৩৮৪টির।

এই বাগানটির মতো বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের অধীনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৭টি রাবারবাগান আছে। এগুলোর বেশির ভাগই টানা লোকসান দিয়ে যাচ্ছে। সবগুলো বাগান মিলিয়ে বছরে গড়ে ১০ কোটি টাকা করে লোকসান গুনছে। বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের এক প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। ওই প্রতিবেদনে গত ছয়টি অর্থবছরের লাভ–ক্ষতির হিসাব দেওয়া হয়। সম্প্রতি প্রতিবেদনটি পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে তোলা হয়।

এই ১৭টি বাগানে এখন মোট গাছ আছে ৩৬ লাখ ৭৮ হাজার ৫৩৪টি। এর মধ্যে ৭ লাখ ৩৪ হাজার অর্থাৎ মোট গাছের ২০ শতাংশ অর্থনৈতিক জীবনচক্র হারিয়েছে। একটি রাবারগাছের অর্থনৈতিক জীবনচক্র ধরা হয় ২৮–৩০ বছর। এসব গাছ কেটে নতুন করে বাগান সৃজন করা হচ্ছে না। লোকসানের পেছনে বড় কারণ এটি। এ ছাড়া পর্যাপ্ত ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের অভাব, আন্তর্জাতিক বাজারে রাবারের দাম কমে যাওয়া, রাবারের ওপর ১৫ শতাংশ শুল্কারোপ, কারখানার কার্যকারিতা হ্রাস পাওয়াকে লোকসানের কারণ হিসেবে দেখিয়েছে বনশিল্প করপোরেশন।

বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসবের বাইরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক বাজারের চাহিদা বিবেচনায় নিয়ে পদক্ষেপ নিতে না পারা, প্রশিক্ষণের অভাব, বাগান থেকে রাবার চুরির কারণেও লোকসান বাড়ছে।

বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের মহাব্যবস্থাপক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) গিয়াস উদ্দিন মোগল প্রথম আলোকে বলেন, সবগুলো বাগান মিলিয়ে ৮ থেকে ১০ লাখ গাছ জীবনচক্র হারিয়েছে। এ গাছগুলো কেটে নতুন বাগান সৃজন করা প্রয়োজন। কিন্তু পুরোনো গাছগুলো একসঙ্গে কেটে প্রসেসিং করার সক্ষমতা তাঁদের নেই। যে কারণে তাৎক্ষণিক নতুন বাগান সৃজন করা যাচ্ছে না। এ ছাড়া এখন উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে গেছে। এসব কারণে রাবার শাখা লোকসানে থাকলেও সার্বিকভাবে বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন লাভে আছে।

রাষ্ট্রায়ত্ত ১৭টি রাবারবাগানের মধ্যে সিলেট অঞ্চলে আছে চারটি বাগান। এই অঞ্চলের শাহজীবাজার, ভাটেরা, সাতগাঁও, রুপাইছড়া—এই চারটি বাগানই টানা লোকসান গুনছে এবং এখানে লোকসানের পরিমাণও বেশি। চট্টগ্রাম অঞ্চলে আছে আটটি বাগান। এর মধ্যে তাঁরাখো, রাঙ্গামাটিয়া, কাঞ্চননগর, ডাবুয়া ও রামু রাবারবাগান টানা লোকসান দিয়েছে। চট্টগ্রাম অঞ্চলের দাঁতমারা রাবারবাগান টানা লোকসানে থেকে গত বছর ৬১ লাখ টাকা লাভ করে। এ ছাড়া গত অর্থবছরে চট্টগ্রামের হলদিয়া ৩ লাখ ও রাউজান রাবারবাগান ৩৭ লাখ টাকা করে লাভ করে। আর টাঙ্গাইল, শেরপুর অঞ্চলের পাঁচটি বাগানের মধ্যে পীরগাছা, চাঁদপুর, সন্তোষপুর ও কর্ণঝোড়া রাবারবাগান বিগত বছরগুলোতে লাভে থাকলেও গত বছর লোকসান দিয়েছে। গত অর্থবছরে এই অঞ্চলের কমলাপুর রাবারবাগান ২৩ লাখ টাকা লাভ করে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১৯৬১–৬২ সালে বন বিভাগ রাবার চাষ ও উন্নয়ন কার্যক্রম বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করে। শুরুতে চট্টগ্রামের রাউজান ও কক্সবাজারের রামুতে রাবার চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে আরও ১৬টি বাগান করা হয়। মোট ১৭টি বাগানে ৩৩ হাজার ৩৪ একর ভূমিতে রাবারগাছ লাগানো হয়। রাবারের কষ ও রাবারের সিট তৈরি করে বাজারজাত করা হয়। এর মধ্যে কনডম তৈরির জন্য রাবারের কষ কিনে থাকে এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেড। আর রাবারের সিট দেশে–বিদেশে বিক্রি করা হয়। প্রাথমিকভাবে প্রক্রিয়াজাত করা এই কাঁচা রাবার স্যান্ডেল, চাকার টায়ার, টিউব, হোস পাইপ, পাটকলের স্পেয়ার পার্টসসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করার কাজে ব্যবহৃত হয়। আর রাবারগাছ জীবনচক্র হারানোর পর তা দিয়ে আসবাব তৈরি করা হয়।