ঢাকার বাইরে এখনো ডেঙ্গু রোগী বেশি

বরিশালের ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক মনে করছে না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। দক্ষিণাঞ্চলের এই বিভাগকে নজরদারির আওতায় নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। এ বছর এ অঞ্চলে ডেঙ্গু রোগী ভর্তি বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে আইইডিসিআর এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এদিকে ঢাকার তুলনায় অন্য জেলায় ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে নতুন করে ভর্তির সংখ্যা এখনো বেশি। গত সোমবারও ঢাকায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৭৫০ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ৮২২ জন। এর আগের দিন রোববারও ঢাকায় ভর্তি হয়েছিল ৭৫৭ জন আর ঢাকার

বাইরে ভর্তি হয় ৮৫৮ জন। শনিবার ঢাকায় ভর্তি হয় ৭৩৪ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয় ৯৭২ জন। কিছু দিন ধরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে ঢাকার বাইরে।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম ও খুলনায় আমাদের নিয়মিত সার্ভিল্যান্স চলে। বরিশালে কেন ডেঙ্গু রোগী বাড়ল, তা আমরা দেখতে চাই। এডিস মশার পরিস্থিতিও আমরা দেখব।’

বরিশাল বিভাগের বরগুনা, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, ভোলা, পটুয়াখালী ও বরিশাল জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে এ বছর ১৯ আগস্ট পর্যন্ত ২ হাজার ৭২২ জন রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে শুধু শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেই ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ২৮০ জন। ঢাকার বাইরের অন্য কোনো হাসপাতালে এত বেশি ডেঙ্গু রোগী এ বছর ভর্তি হয়নি।

>

গত সোমবারও ঢাকায় নতুন করে ভর্তি হয়েছে ৭৫০ জন আর ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছে ৮২২ জন।

আরবান হেলথ সার্ভের পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা শহরের বস্তিতে বরিশাল বিভাগের মানুষ প্রায় ২৫ শতাংশ। অন্য কোনো বিভাগের মানুষের হার এত না। মীরজাদী সেব্রিনা বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্তদের ৭০-৮০ শতাংশের ভ্রমণের ইতিহাস আছে। বাকিরা স্থানীয়ভাবে আক্রান্ত হয়েছে।’

আইইডিসিআরের সূত্র জানিয়েছে, বরিশাল সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতিটি থেকে ১০টি করে বাড়িতে জরিপ করা হবে। প্রতি পরিবার থেকে একজনের রক্তের নমুনাও সংগ্রহ করা হবে। এ ছাড়া মশার লার্ভাও সংগ্রহ করে ঢাকায় আনা হবে।

এডিসের দুটি প্রজাতি আছে। একটি হলো এডিস ইজিপটাই, অপরটি এডিস অ্যালবোপিকটাস। ডেঙ্গু সংক্রমণ ঘটে মূলত এডিস ইজিপটাইয়ের মাধ্যমে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে এডিস অ্যালবোপিকটাস কোনো ভূমিকা রাখছে কি না, তাও খতিয়ে দেখবে আইইডিসিআর।

আইইডিসিআরের পরিচালক বলেন, এই সপ্তাহের শেষ দিকে গবেষক দল বরিশালে যাবে। এখন থেকে বরিশাল আইইডিসিআরের নিয়মিত নজরদারির মধ্যে থাকবে। এরপর আইইডিসিআর ময়মনসিংহে কাজ করবে।

ঢাকার বাইরে ভর্তি বেশি

সরকারের স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য বলছে, সোমবার ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ৫৭২ জন। আর চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছে ১ হাজার ৮৩৫ জন। তিন দিন ধরে ডেঙ্গু নিয়ে নতুন করে ভর্তির সংখ্যা কমে আসছে। গত শনিবার ভর্তি হয়েছিল ১ হাজার ৭০৬ জন, রোববার এটি কমে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬১৫ জনে।

সরকারি হিসাব বলছে, গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৫৬ হাজার ৩৬৯ জন। এর মধ্যে চিকিৎসা নিয়ে বাসায় ফিরেছে ৪৯ হাজার ৮৫৯ জন। সারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছে ৬ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ভর্তি ৩ হাজার ৪১৩ জন ও ঢাকার বাইরে ৩ হাজার ৫৭ জন।

প্রথম আলোর সংশ্লিষ্ট জেলার প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, গতকাল ফরিদপুর, ঢাকা ও শরীয়তপুরে একজন করে মারা গেছেন। এর আগে সোমবার ঢাকার বাইরে ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে ডেঙ্গুতে। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ডেঙ্গুতে মোট ১৬০ জনের মৃত্যুর তথ্য পেয়েছে প্রথম আলো। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট জেলার সিভিল সার্জন ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে প্রথম আলো মৃত্যুর এ হিসাব পেয়েছে। আর সরকারি হিসাবে মৃত্যু ৪০ জনের।

সোমবার রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নারায়ণগঞ্জের ফাতেমা আক্তার (২১)। গত রোববার রাতে ফাতেমা মিটফোর্ড হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ডেঙ্গুতে ফাতেমার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।

ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত সাহেব আলী (৪৫) সোমবার রাত নয়টার দিকে মারা যান। তাঁর বাড়ি রাজবাড়ী সদর উপজেলার রামকান্তপুর ইউনিয়নের মাটিপাড়া গ্রামে। এ তথ্য জানিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক কামদা প্রসাদ সাহা বলেন, ফরিদপুরে ডেঙ্গুতে এ নিয়ে মারা গেছেন সাতজন।

জ্বর নিয়ে শনিবার রাতে শরীয়তপুরের হাজি আলী আজম জেনারেল হাসপাতালে যান সুরাইয়া আক্তার (৩২)। তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হলেও বাসায় থেকে তিনি চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অবস্থার অবনতি হলে সোমবার রাত সাড়ে তিনটার দিকে ওই হাসপাতালের চিকিৎসক আনোয়ার হোসেনকে বাসায় ডেকে নেওয়া হয়। চিকিৎসক সুরাইয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। বিষয়টি আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেছেন।