গৃহবধূর ওপর এ কেমন বর্বরতা

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

স্বামীর পিটুনির তীব্রতায় জ্ঞান হারান স্ত্রী। জ্ঞান ফিরলে আবার পিটুনি। এভাবে সারা রাত পেটানো হয়। এতেই ক্ষান্ত হননি স্বামী। আহত অবস্থায় তাঁকে ঘরে ফেলে রেখে তালাবদ্ধ করে চলে যান। পরে খবর পেয়ে ওই গৃহবধূর বাবা এসে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করান।

কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। গৃহবধূর নাম রেবেকা সোলতানা (৩০)। গত শুক্রবার রাত ১১টা থেকে পরদিন ভোর ৬টা পর্যন্ত স্বামী সাইফুদ্দিন খালেদ এ বর্বরতা চালান বলে অভিযোগ করেছেন গৃহবধূ ও তাঁর পরিবার। বর্তমানে তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

সাইফুদ্দিন খালেদ ২০০৩-২০১২ সাল পর্যন্ত পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। ওই নারীর দুই সন্তান রয়েছে। বড় সন্তান তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে, ছোট সন্তানের বয়স চার বছর।

২০০৭ সালের ১৯ এপ্রিল রেবেকা সোলতানা ও সাইফুদ্দিন খালেদের বিয়ে হয়। রেবেকার বাড়ি চন্দনাইশ উপজেলার বরমা ইউনিয়নের কেশুয়া গ্রামে। সাইফুদ্দিন খালেদ পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকার মৃত আনোয়ারুল আজিমের ছেলে।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রেবেকা সোলতানা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইফুদ্দিন খালেদ মাদকাসক্ত। তিনি নিয়মিত বাড়ির টংঘরে বসে আরও কয়েকজনকে নিয়ে মাদক সেবন করেন। প্রতিদিনের মতো গত শুক্রবার রাতেও বাড়ির টংঘরে বসে মাদক সেবন করছিলেন। রাত ১১টার দিকে তিনি ভাত খেতে চেয়েছেন। তাঁর জন্য ভাত দেওয়ার এক ফাঁকে আবারও টংঘরে গিয়ে বসে পড়েন সাইফুদ্দিন। ওই সময় টংঘরে গিয়ে ভাত দেওয়ার কথা বললে ‘তুই এখানে কেন এসেছিস’ বলে গালাগাল শুরু করেন। এরপর ঘরের ভেতরে নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে মারধর করতে থাকেন। একপর্যায়ে কোদালের দাঁড় (বড় লাঠি) নিয়ে পেটান। পিটুনিতে অজ্ঞান হয়ে গেলে পানি ঢেলে জ্ঞান ফিরলে আবারও পেটান। এভাবে ভোর ছয়টা পর্যন্ত পেটানোর পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দিয়ে বের হয়ে যান সাইফুদ্দিন। যখন তিনি ঘর থেকে বের হয়ে যাচ্ছিলেন তখন আমার জ্ঞান ছিল না। দুটো ছোট ছোট বাচ্চার সারা রাতের কান্না-চিৎকারও তাকে নিবৃত্ত করতে পারেনি।’

রেবেকার বাবা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘রেবেকার বড় সন্তান তেহসিফ বিন খালেদ (১১) আমাকে ফোন করলে আমি শনিবার সকাল ১০টায় পশ্চিম গোঁয়াখালী এলাকার ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। আমি পৌঁছার খবর পেয়ে সাইফুদ্দিনও বাড়িতে পৌঁছে। আমি ঘরের তালা ভেঙে রেবেকাকে বের করতে চাইলে সাইফুদ্দিন বাধা দেয়। একপর্যায়ে লাঠি নিয়ে আমাকে মারতে তেড়ে আসে। পরে স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় সন্ধ্যা সাতটায় ঘরের দরজা খুলে দিতে সম্মত হয় সাইফুদ্দিন। এরপর রেবেকাকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই।’

হারুনুর রশিদ বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আমার মেয়ে বেঁচে নেই। শরীরের এমন কোনো স্থান নেই, যেখানে লাঠির আঘাত পড়েনি। কিছুক্ষণ পর পর সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিল। পুরো শরীর কালচে আকার ধারণ করেছে।’

রেবেকার কথা বলতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন ফুফাতো বোন জিন্নাত আরা বেগম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রেবেকা যে বেঁচে আছে, সেটা দেখে আমি বিস্মিত হই। পুরো গ্রামে কী কেউ-ই ছিল না।’

পেকুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাইফুদ্দিন খালেদের নির্যাতন সইতে না পেরে এর আগেও তাঁর এক স্ত্রী তালাক দিয়ে চলে গেছেন। তিনি দিনের পুরো সময় মাদকাসক্ত থাকেন। এ কারণে ২০১২ সালের পরে গঠিত উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে তাঁকে রাখা হয়নি।’

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগে নেতা সাইফুদ্দিন খালেদ মুঠোফোনে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, মারধরের বিষয়টি অনেকটা সাজানো। এখানে অনেক গভীরের কিছু বিষয় আছে। তিনি স্ত্রীর বিরুদ্ধে পরকীয়ার অভিযোগ তোলেন।

জানতে চাইলে পেকুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জাকির হোসেন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্যাতিত নারীর ছবি দেখেছি, কী বর্বরতা! ওই নারীর আত্মীয়স্বজন সবাই চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজে চট্টগ্রামে অবস্থান করছেন। তাঁদের থানায় আসতে বলা হয়েছে।