তিন দফা দরপত্র দিয়েও ইজারাদারমিলছে না

মহামায়া ইকোপার্কের ভেতরের মায়াবী হ্রদ আর সবুজ পাহাড় চোখ জুড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের। গত রোববার সকালে মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে।  প্রথম আলো
মহামায়া ইকোপার্কের ভেতরের মায়াবী হ্রদ আর সবুজ পাহাড় চোখ জুড়ায় দূর-দূরান্ত থেকে আসা পর্যটকদের। গত রোববার সকালে মিরসরাইয়ের মহামায়া হ্রদে। প্রথম আলো

তিনবার দরপত্র দিয়েও কাঙ্ক্ষিত দর না পাওয়ায় ইজারা দেওয়া যাচ্ছে না হ্রদ আর পাহাড়ে ঘেরা অন্যতম আকর্ষণীয় বিনোদনকেন্দ্র মহামায়া ইকো পার্ক। গত ৩০ জুন আগের ইজারাদারের মেয়াদ শেষ হওয়ায় নতুন করে পার্কটি ইজারা দিতে দরপত্র আহ্বান করেছিল বন বিভাগ। ইজারা না হওয়ায় গত দেড় মাস ধরে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এই পার্ক। বন বিভাগের লোকবল কম থাকায় এখন ব্যবস্থাপনা সংকটেও পড়েছে বিনোদনকেন্দ্রটি। সঙ্গে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

মহামায়া ইকো পার্কটি চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ঠাকুরদীঘি এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে দেড় কিলোমিটার পূর্বে সুবিশাল হ্রাদ আর সবুজ পাহাড়ে ঘেরা এই বিনোদনকেন্দ্র। এতে দেখা মেলে হরিণ, বানর, অজগর সাপসহ নানা প্রজাতির পাখি। বিশেষ করে শামুকখোল পাখির বিচরণক্ষেত্র এই পার্ক।

বন বিভাগ সূত্র জানায় ২০০৯-১০ অর্থবছরে মহামায়া এলাকায় বর্ষায় পাহাড়ি ঢল ঠেকিয়ে পানি সংরক্ষণ করে শুকনো মৌসুমে কৃষি জমিতে তা সরবরাহের জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে বন বিভাগের জায়গায় একটি প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। পরে সেখানে বাঁধ ও স্লুইসগেট তৈরিসহ পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ১৯ দশমিক ৭৮ একর জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডকে। বাঁধ দেওয়ার পর এখানে পাহাড়ের কোলে কোলে সৃষ্টি হয় প্রায় ১১ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের একটি কৃত্রিম হ্রদ। এই হ্রদের সঙ্গে আরও ১ হাজার ২০০ হেক্টর জায়গাজুড়ে ২০১৩ সালে এখানে বন বিভাগ তৈরি করে একটি বাণিজ্যিক ইকো পার্ক। সময়ের সঙ্গে যা নজর কাড়ে দেশের ভ্রমণপ্রিয় মানুষের।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, ২০১৩ সাল থেকে দরপত্রের মাধ্যমে এক বছর মেয়াদে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়া শুরু হয় মহামায়া ইকো পার্কটি। প্রথম বছর হ্রদ, গেট, গাড়ি পার্কিং ও খাবারের ক্যানটিনসহ পার্কটি ২১ লাখ ৬০ হাজর টাকায় ইজারা নেয় স্থানীয় প্রতিষ্ঠান মেসার্স আহসান ট্রেডিং। এরপর প্রতিবছরই ইজারা দর বেড়েছে পার্কটির। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ বছরে ভ্যাটসহ ১ কোটি ২ লাখ ৬৩ হাজর ৭৫০ টাকায় ইকো পার্কটি ইজারা নেয় চট্টগ্রাম শহরের ক্রিয়েটিভ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ৩০ জুন তাদের এক বছরের ইজারা মেয়াদ শেষ হয়।

এরপর পার্কটি নতুন করে ইজারা দেওয়ার জন্য ২৯ মে, ১২ জুন ও ২৮ জুলাই তিন দফা দরপত্র আহ্বান করে বন বিভাগ। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় ইজারা দেওয়া যায়নি পার্কটি। সর্বশেষ ৭ আগস্ট চতুর্থবারের মতো দরপত্র আহ্বান করেছে বন বিভাগ। এদিকে এই পার্ক ব্যবস্থাপনার জন্য পর্যাপ্ত লোকবলও নেই বন বিভাগের। এতে গত দেড় মাসে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে এর রাজস্ব আদায়। সঙ্গে বাড়ছে পর্যটকদের নিরাপত্তাহীনতাসহ নানা অসুবিধা।

নতুন করে ইকো পার্কটি ইজারা না নেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে গতবারের ইজারাদার ক্রিয়েটিভ ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের পরিচালক মো. মকসুদ আলী বলেন, ‘ইজারা মূল্যের তুলনায় আয় কম হওয়ায় আমরা পার্কটিতে মুনাফা করতে পারছি না। তাই এবার আর ইজারা দরপত্রে অংশ নিচ্ছি না। প্রতি মাসে গড়ে ৮ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছিল না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইকো পার্কটির বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক মিরসরাই রেঞ্জের বন কর্মকর্তা গাজী হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরপত্রের বিষয়টি আমাদের বিভাগীয় কার্যালয় থেকে সম্পন্ন হয়। ইজারাদার না থাকায় এখন পার্কটি আমরা পরিচালনা করছি। দুজন বনপ্রহরী ও একজন মালিসহ পুরো পার্কটির জন্য লোকবল আছেন মাত্র তিনজন। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কষ্টসাধ্য। আগের তুলনায় রাজস্ব কমেছে কিছুটা। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে গত দেড় মাসে আমরা এখান থেকে ২ লাখ ১৪ হাজার টাকার রাজস্ব জমা দিয়েছি সরকারকে। অবশ্য এই আয় ইজারাদারের চেয়ে কম।’

ইকো পার্কটি ইজারা না হওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. বখতিয়ার নূর সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামায়া ইকো পার্কটি ইজারা দেওয়ার জন্য তিন দফা দরপত্র আহ্বান করেও গতবারের চেয়ে কম দাম উঠেছে। সরকারি সম্পদ ইজারা দেওয়ার ক্ষেত্রে দর আগেরবারের চেয়ে বেশিই হওয়ার নিয়ম। তাই সরকারি রাজস্বের কথা ভেবে আমরা এখনো পার্কটি ইজারা দিইনি। সর্বশেষ ৭ আগস্ট চতুর্থবারের মতো দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এবারও কাঙ্ক্ষিত দর না পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’