গাজীপুর নগরের যত্রতত্র বদ্ধ পানি

গাজীপুর নগরের কুনিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে জমে আছে পানি। শনিবার সকালে তোলা।  ছবি: আল-আমিন
গাজীপুর নগরের কুনিয়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে জমে আছে পানি। শনিবার সকালে তোলা। ছবি: আল-আমিন

হাসপাতালগুলোতে যখন ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর ভিড়, নগরবাসী যখন ডেঙ্গু আতঙ্কে ভীত, ঠিক তখনই গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকার সড়ক, ঝোপঝাড় ও বাসাবাড়ির সামনে জমে আছে বৃষ্টি ও নালার পানি। তাতে ভাসছে মশার লার্ভা। কিন্তু সেই পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের মাথাব্যথা নেই বলে মনে করছেন নগরবাসী।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোথাও তিন দিনের বেশি পানি জমে থাকলে সেখানে এডিস মশা জন্মাতে পারে। একটি স্ত্রী মশা একসঙ্গে ১০০ থেকে ২০০টি ডিম পাড়ে। আর এসব মশা বেঁচে থাকে দুই সপ্তাহ থেকে এক মাস পর্যন্ত। ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া ও ম্যালেরিয়া গবেষক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, সাধারণত আবদ্ধ পানিতে মশা, মাছি, ব্যাকটেরিয়া, পোকামাকড়সহ নানা ধরনের রোগজীবাণু ছড়ায়। সে ক্ষেত্রে পানিগুলোতে কীটনাশক প্রয়োগ অথবা চলাচলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। কারণ, চলন্ত পানিতে মশা ডিম পাড়ে না।

৫ আগস্ট সকালে টঙ্গী কলেজগেট এলাকায় ডেঙ্গু প্রতিরোধে সচেতনতামূলক পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ও শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর জানান, নগরবাসীকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে ৫৭টি ওয়ার্ডে একযোগে কাজ শুরু করেছেন তাঁরা। ইতিমধ্যে মশকনিধনে আন্তর্জাতিক মানের ওষুধ আনাসহ দলমত–নির্বিশেষে কাজ করছেন তাঁরা। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। এখনো নগরের যত্রতত্র জমে আছে পানি। সেখান থেকে বাড়ছে মশার উপদ্রব।

গত শনি ও রোববার দুই দিন নগরের বিভিন্ন ওয়ার্ডের সড়ক, বিপণিবিতান, বাসার সামনে, ঝোপঝাড় এমনকি হাসপাতালের সামনে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। কোথাও কোথাও এসব পানিতে ভাসছিল মশার লার্ভা। কিছু জায়গায় গিজগিজ করছে মশা। স্থানীয় লোকজনের অনেকেই মশার হাত থেকে রক্ষা পেতে দিনেও জ্বালিয়ে রেখেছেন মশার কয়েল।

শনিবার সকালে টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন অংশে পানি জমে আছে। বিশেষ করে ৫০ শয্যার পুরোনো ভবনের সামনে দু-তিন জায়গায় এবং ভবনটির পূর্ব ও পশ্চিম পাশে ঝোপের মতো স্থানে জমে আছে পানি। সেখানে পড়ে আছে ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন ময়লা-আবর্জনা। একইভাবে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে নালার পানি জমে স্যাঁতসেঁতে হয়ে আছে। সেখানে গিজগিজ করছে মশা। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন বলেন, বৃষ্টি হলেই এখানে পানি জমে। তখন চলাচল করাই কষ্ট হয়ে যায়। তা ছাড়া থানার পেছনে কেবিএস সড়ক, ন্যাশনাল টিউব সড়ক ও ফাইসন্স সড়কের বিভিন্ন অংশ ও নালায় পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। সেসব পানিতে ভাসছে পশুর বর্জ্য ও নানান আবর্জনা।

এ ছাড়া শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে চান্দরা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন অংশে, এরশাদ নগর এলাকার বিভিন্ন ব্লক, বোর্ডবাজার এলাকা, ইশড্ডা এলাকা, খাইলকৈর, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের হরিণাচালাসহ বিভিন্ন এলাকায় একই চিত্র দেখা যায়। এর মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের। সংস্কারের নামে দীর্ঘদিন খুঁড়ে রাখা গর্তে জমে আছে বৃষ্টির পানি। টঙ্গী বাজার থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটারে এমন গর্ত দেখা যায় ২০-২৫টি।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ভাষ্য, ঝোপঝাড় পরিষ্কার বা জমে থাকা পানি নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশন থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এ কারণে সন্ধ্যা হলেই মশার উপদ্রব বাড়ে। ডেঙ্গু জ্বরের আতঙ্কে অনেকে দিনেও ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ রাখেন। তা ছাড়া মশারি ও কয়েল জ্বালিয়েও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। ইশড্ডা এলাকার এক নারী দোকানি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘সিটি করপোরেশনের লোকজন আইবো মানুষ মরার পর। এখন মশা নিয়া তাগোর কোনো মাথাব্যথা নাই।’

যোগাযোগ করা হলে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শহর গড়ে উঠতে ৩০ বছর সময় লাগে। আমি কাজ করছি মাত্র ৯ মাস। তা ছাড়া যেখানে কর্মী দরকার ১০ হাজার, সেখানে আমাদের লোক আছে মাত্র ৩০০ জন। এরপরও আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি সমস্যাগুলো সমাধানের। আমাদের সময় দিতে হবে।’

হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীর ভিড়

নগর এলাকার প্রধান দুটি সরকারি হাসপাতাল হলো টঙ্গীর শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতাল ও শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। হাসপাতাল দুটিতে প্রতিদিনই ভর্তি হচ্ছে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী।

জানা যায়, জুলাই মাস থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছে ১৭০ জন। বর্তমান ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১৭। একইভাবে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এ পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হয় ৩৮০ জন। বর্তমানে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৩২। হাসপাতালের আবাসিক কর্মকর্তা (আরএমও) প্রণয় ভূষণ দাস বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হচ্ছে। এর মধ্যে কাউকে কাউকে প্রয়োজনে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়।