মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে বাতি জ্বলবে কবে?

উড়ালসড়কের মৌচাক পয়েন্টে সিগন্যালের বাতিগুলো জ্বলছে না। তার মধ্যেই চলাচল করেছে যানবাহন। গত সোমবার বিকেলে।  প্রথম আলো
উড়ালসড়কের মৌচাক পয়েন্টে সিগন্যালের বাতিগুলো জ্বলছে না। তার মধ্যেই চলাচল করেছে যানবাহন। গত সোমবার বিকেলে। প্রথম আলো

বৈদ্যুতিক তার চুরির পর মগবাজার-মৌচাক উড়ালসড়কে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বাতি জ্বলছে না। ঠিক কবে নাগাদ বাতি জ্বলবে, তা–ও বলতে পারেননি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এমনকি মৌচাক পয়েন্টে সংকেতবাতিও কাজ করছে না। প্রায় সাড়ে ৮ কিলোমিটার দীর্ঘ এই উড়ালসড়কে কোনো নিরাপত্তারক্ষীও থাকেন না।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্র জানায়, বৈদ্যুতিক তার চুরি হওয়ায় উড়ালসড়কে বাতি অকেজো হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত উড়ালসড়কের বিভিন্ন অংশে চার দফায় তার চুরি হয়। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন এই তার বেশ দামি। বাতির ব্যবস্থাসহ সার্বিক কাজের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব অনেক দিন ধরে ঝুলে আছে। এখন পর্যন্ত টাকার সংস্থান হয়নি।

গত সোমবার রাতে উড়ালসড়কের সোনারগাঁও প্রান্ত, বাংলামোটর, সাতরাস্তা, হলি ফ্যামিলি প্রান্ত, মগবাজার, মৌচাক, মালিবাগ, শান্তিনগর, রাজারবাগ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পুরো উড়ালসড়ক অন্ধকারাচ্ছন্ন। কোথাও বাতি জ্বলছে না। গাড়ির হেডলাইটের আলোতেই চলাচল করছে সব গাড়ি। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সাতরাস্তা থেকে হলি ফ্যামিলি প্রান্ত ঘুরে খুব কম যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়।

সোমবার রাতে মৌচাক পয়েন্টের উড়ালসড়কের ওপরে একটি মোটরসাইকেল দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। সে সময় একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশার গতি রোধ করেন মোটরসাইকেলের চালক ও তাঁর সঙ্গী। শান্তিনগর প্রান্তে নামার পর স্থানীয় দুজন দোকানি বলেন, বাতি ও নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় উড়ালসড়কে ওপরে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।

সোমবারই বিকেলে মৌচাক সিগন্যাল পয়েন্ট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেখানে তিনটি স্থানে খুঁটি ও সংকেতবাতি আছে। কিন্তু জ্বলছে না। কোনো ট্রাফিককর্মীও নেই। রাজারবাগ থেকে কিছু গাড়ি বাংলামোটর, কিছু গাড়ি মালিবাগের দিকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে শান্তিনগর থেকে এবং মালিবাগ থেকেও আসা–যাওয়া করছে। সেখানে প্রায় আধা ঘণ্টা দাঁড়িয়ে রামপুরার ৯টি বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন আসতে দেখা যায়। একই সঙ্গে রামপুরা ও রাজারবাগ থেকেও গেছে। সংকেতবাতি ও ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় যেকোনো সময় যানবাহনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে পারে।

জানতে চাইলে ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বাতির জন্য তার কেনা, নিরাপত্তাব্যবস্থা করাসহ বিভিন্ন কাজের জন্য একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। মন্ত্রণালয় অনুমোদন করলে তা একনেকে যাবে। একনেকে অনুমোদন হওয়ার পর কাজ শুরু করা যাবে। প্রকল্পে খরচ হবে ৪৯ কোটি টাকা। কবে অনুমোদন হবে বা কাজ শুরু হবে, তা তিনি বলতে পারছেন না।

মৌচাক সিগন্যাল পয়েন্টে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জানান প্রধান কর্মকর্তা।

এলাকাটি ডিএমপির ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের অধীনে। উপকমিশনার (পূর্ব) শাহেদ আল মাসুদ বলেন, সংকেতবাতি কাজ করছে না। এ ছাড়া লোকবলের কারণে সার্বক্ষণিকভাবে ট্রাফিক পুলিশ বা কর্মী বহাল করা যায়নি। তবে যখন যানবাহনের আধিক্য থাকে এবং ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা জরুরি হয়ে পড়ে, তখন একজন কর্মী নিয়োজিত থাকেন।

উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)। এটি নির্মাণে প্রায় ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা খরচ হয়। ২০১৭ অক্টোবরে উড়ালসড়কের পুরো কাজ শেষ হলে এর ওপর থেকে এলজিইডির দায়িত্বও শেষ হয়। পরে সার্বিক দেখভালের জন্য ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়। কিন্তু এক বছরেরও বেশি সময়ে তা সম্ভব হয়নি।