ঠাকুরগাঁও শহরে ঢুকতেই নাকে লাগে দুর্গন্ধ

ঠাকুরগাঁও শহরের প্রবেশপথে সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার গম গবেষণা উপকেন্দ্রের সামনে। ছবি: প্রথম আলো
ঠাকুরগাঁও শহরের প্রবেশপথে সড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। গত বৃহস্পতিবার গম গবেষণা উপকেন্দ্রের সামনে। ছবি: প্রথম আলো

ঠাকুরগাঁও জেলা শহরের সড়ক ও মহাসড়কের পাশে যেখানে–সেখানে ময়লা, আবর্জনা ফেলছে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ। এতে শহরে ঢোকার দুটি পথসহ কয়েকটি স্থান ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। দুর্গন্ধ নাকে নিয়ে শহরে ঢুকতে হচ্ছে লোকজনকে। শহরে চলতেও হচ্ছে নাক চেপে।

পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, নির্ধারিত জায়গা না থাকায় বাধ্য হয়ে তারা সড়কের পাশে আবর্জনা ফেলছে। অথচ এটি ‘ক’ শ্রেণির পৌরসভা। ১৯৫৮ সালের ১ মার্চ পৌরসভা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৭ সালে এটি ‘ক’ শ্রেণিতে উন্নীত হয়। প্রতিষ্ঠার ৬০ বছরেও আবর্জনা ফেলার নির্ধারিত স্থান করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের চিকিৎসক মো. শাহজাহান নেওয়াজ বলেন, ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেসব জায়গায় মানুষের নিয়মিত চলাচল আছে, সেখানে আবর্জনা ফেলা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

শহরের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, শহরের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সংগ্রহ করা গৃহস্থালির ময়লা-আবর্জনা মাস দুয়েক ধরে শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়ামের সামনে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে ও গম গবেষণা উপকেন্দ্রের সামনেসহ কয়েকটি সড়কে ফেলছে পৌর কর্তৃপক্ষ। এসব স্থান আবর্জনায় স্তূপ হয়ে গেছে। ময়লার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে পথচারীদের নাক চেপে চলাচল করতে হচ্ছে।

গত শনিবার ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম ও গম গবেষণা উপকেন্দ্র এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, চালকেরা আবর্জনাভর্তি ভ্যান নিয়ে মহাসড়কের পাশে ফেলছেন। মানুষ নাক চেপে এলাকা পার হচ্ছে।

বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক ব্যক্তি ভ্যানে আবর্জনা এনে গম গবেষণা উপকেন্দ্রের সামনের সড়কের পাশে ফেলছিলেন। আশরাফুল ইসলাম পরিচয় দিয়ে তিনি বলেন, ‘অফিস থেকে যেখানে ময়লা ফেলতে বলছে, আমরা সেখানেই ময়লা ফেলি।’ এ সময় গম গবেষণা উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী জাহেদুল ইসলাম বলেন, ‘দুর্গন্ধে এখানে দায়িত্ব পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’

হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শারমিন সুলতানা বলে, স্কুল যাতায়াতের সময় আবর্জনার পচা গন্ধ নাকে লাগে। অনেক সময় বমি চলে আসার উপক্রম হয়।

পৌরসভার ময়লা-আবর্জনা অপসারণে নিয়োজিত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গৃহস্থালির ময়লা অপসারণের জন্য ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে জলবায়ু তহবিলের আওতায় ‘ক্লিন ঠাকুরগাঁও, গ্রিন ঠাকুরগাঁও’ নামে প্রকল্প চালু করে পৌরসভা। এর নকশা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করে তা দিয়ে বায়োগ্যাস তৈরি করার কথা। বাসাবাড়ি থেকে ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের দায়িত্ব পায় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ইকো সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও)। আর বায়োগ্যাস তৈরির কাজটি রাখা হয় পৌরসভার হাতে। এত দিনেও বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট তৈরি না হওয়ায় ময়লা-আবর্জনা শহরের সড়ক-মহাসড়কের পাশে যেখানে-সেখানে ফেলা হচ্ছে।

ওই প্রকল্পের ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের কাজের সমন্বয়কারীর দায়িত্বে থাকা তারেক হাসান বলেন, প্রকল্পের লোকজন পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ড থেকে প্রতিদিন কয়েক টন ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহ করেন। ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর মহাসড়কের পাশে শহীদ মোহাম্মদ আলী স্টেডিয়াম, গম গবেষণা উপকেন্দ্র, রোড এলাকার শুক নদ ও সেনুয়া নদী এলাকায় এসব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘ময়লা-আবর্জনা সংগ্রহের দায়িত্ব আমাদের হলেও ডাম্পিংয়ের জায়গা পৌরসভার নির্ধারণ করে দেয়। আমরা যে কটি জায়গায় ময়লা-আবর্জনা ফেলছি, সেগুলোও পৌরসভা নির্ধারণ করে দিয়েছে।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ বলেন, খুব ছোট এলাকা নিয়ে ঠাকুরগাঁও পৌরসভা গঠিত। এই শহর পরিচ্ছন্ন রাখা খুব একটা কঠিন নয়। উল্টো যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলে পৌরসভাই পরিবেশের দূষণ ঘটাচ্ছে। শহরের প্রবেশমুখে তো নয়ই, বাইরে কোনো জায়গায়ই ময়লা-আবর্জনা ফেলা উচিত নয়।

জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র মির্জা ফয়সল আমিন বলেন, পৌরসভার নির্ধারিত আবর্জনা ফেলার স্থান ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন জায়গায় আবর্জনা ফেলতে হচ্ছে। তবে আবর্জনা ফেলার স্থান নির্মাণসহ আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পরিকল্পনা রয়েছে। সেটা বাস্তবায়িত হলে এ সমস্যা থাকবে না।