সেই জজ মিয়া এখন কেমন আছেন

‘২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, তাঁদের সবাই কোনো না কোনো সহায়তা পেয়েছেন। আমি হামলায় আহত হইনি। কিন্তু ওই ঘটনায় আমিও বড়ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। জীবন বিপন্ন করে সত্য উদ্‌ঘাটনে সাক্ষ্য দিয়েছি। এখনো ভয়ে-আতঙ্কে কাটাই প্রতিদিন। অথচ সরকার থেকে পাইনি কোনো সহায়তা।’ এই বক্তব্য আলোচিত জজ মিয়ার।

গত সোমবার জজ মিয়ার সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। চাপের মুখে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা নিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি। তবে পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে তিনিই তুলে ধরেন প্রকৃত সত্য। বিনা অপরাধে পাঁচ বছর কারাভোগ করতে হয়েছিল তাঁকে।

জজ মিয়া এখন ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক। সামান্য আয়ে স্ত্রী ও এক সন্তানকে নিয়ে কোনোরকমে তাঁর সংসার চলে। গ্রামে থাকা মায়ের খরচও দিতে হয় তাঁকে।

ম্যাজিস্ট্রেটের সঙ্গে বিরিয়ানি খান জজ মিয়া
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় জড়িত থাকা নিয়ে কথিত জবানবন্দি দেন জজ মিয়া। ২০০৫ সালের ২৬ জুন ‘জবানবন্দি’ গ্রহণ করেন তৎকালীন ঢাকার মহানগর হাকিম জাহাঙ্গীর আলম। এ বিষয়ে জজ মিয়া বলেন, ‘জবানবন্দি নেওয়া শেষে ম্যাজিস্ট্রেট বলেন, “তুমি রাজসাক্ষী হবে। যদি সই না দাও তাহলে তুমি আসামি হবে, তোমার ফাঁসি হবে।” আমি সই দিই। এরপর ওই রুমে বিরিয়ানির প্যাকেট আনা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে আমি বিরিয়ানি খাই। তারপর আমাকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে নেয়। সেখান থেকে পরদিন কাশিমপুর কারাগারে নিয়ে যায়।’

জজ মিয়া। ফাইল ছবি
জজ মিয়া। ফাইল ছবি

জবানবন্দি মুখস্থ করার প্রশিক্ষণ
২০০৫ সালের ৯ জুন জজ মিয়াকে আটক করে সেনবাগ থেকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আবদুর রশিদ। জজ মিয়া জানান, তাঁকে আটকের ছয় দিন পর ঢাকার আদালতে হাজির করে রিমান্ডে নেওয়া হয়। ২১ দিন রিমান্ডসহ মোট ২৭ দিন সিআইডি কার্যালয়ে জজ মিয়াকে রাখা হয় তদন্ত কর্মকর্তা আবদুর রশিদের কক্ষে। তাঁর জন্য নতুন লেপ–তোশক ও বালিশ কেনা হয়। ভালো খাওয়া দেওয়া হয়। জজ মিয়ার বক্তব্য, ২৭ দিন ধরে তাঁকে মূলত ভয় দেখানো এবং জবানবন্দি মুখস্থ করানো হয়। কয়েক দিন পরপর এসপি রুহুল আমিনের কক্ষে পরীক্ষা নেওয়া হতো, জবানবন্দি ঠিকভাবে মুখস্থ হয়েছে কি না।

গ্রেপ্তার হওয়া সম্পর্কে জজ মিয়া প্রথম আলোকে জানান, তিনি তখন নোয়াখালীর সেনবাগ বীরকোট গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। একদিন সকালে গ্রামের চৌকিদার এসে জানায় থানা থেকে খবর পাঠিয়েছে, জজ মিয়াকে যেতে হবে। এরপর তিনি চৌকিদারের সঙ্গে সেনবাগ থানায় গেলে তাঁকে আটক করা হয়।