বাজেট অনুমোদন ছাড়াই খরচ করছে ডিএসসিসি

আইন অনুযায়ী, জুন মাসের মধ্যে বাজেট অনুমোদন করতে হয়। কিন্তু জুন শেষে জুলাইও পার হয়ে গেছে। চলে গেছে আগস্ট মাসের ২০ দিন। কিন্তু এখনো চলতি অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন করেনি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। অথচ বিভিন্ন খাতে বিপুল অর্থ ব্যয় করছে সংস্থাটি। বাজেট অনুমোদন ছাড়া এভাবে অর্থ ব্যয়কে আর্থিক শৃঙ্খলার ব্যত্যয় ও বেআইনি বলে মনে করছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞরা।

ডিএসসিসির কর্মকর্তারা বলছেন, গত মাসেই খসড়া বাজেট চূড়ান্ত করেছিলেন তাঁরা। জুলাইয়ের তৃতীয় সপ্তাহে বাজেট ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু ডেঙ্গু পরিস্থিতির কারণে ঘোষণা করা হয়নি। বাজেট নিয়ে তাঁরা বসার সময়ই পাচ্ছেন না।

এ বিষয়ে ডিএসসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা খাদেমুল করিম গত সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এ কারণে যাঁরা বাজেট ঘোষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত, তাঁরাও মাঠপর্যায়ে কাজ করেছেন। তাই বাজেট ঘোষণা করা যায়নি। তবে স্বল্প সময়ের নোটিশে বাজেট অনুমোদনের প্রস্তুতি আছে তাঁদের।

ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রতি মাসে সংস্থার রুটিন ব্যয় ৩০ থেকে ৩৫ কোটি টাকা। এ ছাড়া ঈদুল আজহা উপলক্ষে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খাতে বড় অঙ্কের টাকা খরচ হয়েছে। চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে মশকনিধন কার্যক্রমেও ব্যয় হচ্ছে অনেক টাকা। সব মিলিয়ে গত ৫০ দিনে অন্তত ৮০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।

বাজেট অনুমোদন না হলেও তাঁরা কীভাবে এই টাকা খরচ করছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসসিসির একজন কর্মকর্তা বলছেন, বাজেট অনুমোদন না হলেও অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় করা যায়। অত্যাবশ্যকীয় ব্যয় ধরেই তাঁরা এসব টাকা খরচ করেছেন।

তবে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাজেটবহির্ভূত খরচ আর্থিক অনিয়ম। এটা বেআইনি। কারণ ১ জুলাই থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত অনুমোদিত বাজেটের টাকা খরচ করতে হয়। তাহলে এখন ডিএসসিসি কোন অর্থবছরের টাকা খরচ করছে, এটা অস্পষ্ট।’ তিনি বলেন, ‘সিটি করপোরেশন ছোট কোনো প্রতিষ্ঠান নয়। এটা সরকারি প্রতিষ্ঠান, যেটি আইনের মাধ্যমে চলে। তাই তাদের কিছু আইনকানুন অনুসরণ করতে হবে। এসব অনুসরণ না করার কারণে আর্থিক ব্যয়ের শৃঙ্খলা ভঙ্গ হয়েছে।’

ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বাজেটবহির্ভূত ব্যয়ের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

আর এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সোমবার ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি খুদে বার্তা পাঠিয়ে সংস্থার জনসংযোগ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন।

পরে যোগাযোগ করা হলে ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার রায় প্রথম আলোকে জানান, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠলে বাজেট ঘোষণা করা হবে।

নীরবে বাজেট অনুমোদন ডিএনসিসির

অনেকটা নীরবেই গত মাসে নতুন অর্থবছরের (২০১৯-২০) বাজেট অনুমোদন করেছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)। ১৭ জুলাই বোর্ড সভায় এই বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসির প্রধান হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।

সোমবার বিকেলে নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বাজেট অনুমোদন ছাড়া টাকা খরচ করা যায় না। অর্থ ব্যয়ে যাতে কোনো ধরনের অনিয়ম না হয়, তাই তাঁরা বোর্ড সভায় বাজেট অনুমোদন করেছেন। তবে ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে ব্যস্ততার কারণে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করা হয়নি।

ডিএনসিসি সূত্র জানায়, নতুন অর্থবছরে (২০১৯-২০) ৩ হাজার ৫৭ কোটি টাকার বাজেট অনুমোদন করা হয়েছে। নতুন অর্থবছরে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রায় ৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে মশার ওষুধ কেনার পেছনে ব্যয় করা হবে ৩০ কোটি টাকা। মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে বিশেষ কর্মসূচিতে এবারই প্রথম ১ কোটি টাকা খরচ হবে। একই সঙ্গে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা আছে ডিএনসিসির।