দেশে অর্থনৈতিক বিকাশের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি: দুদক চেয়ারম্যান

জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি ফিলিয়াট ম্যাটসেজার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি: সংগৃহীত
জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি ফিলিয়াট ম্যাটসেজার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল দুদক কার্যালয়ে সংস্থাটির চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। ছবি: সংগৃহীত

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক বিকাশের প্রধান অন্তরায় দুর্নীতি। তাত্ত্বিকভাবে অনেকে বলেন, অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতিও বিকশিত হয়। কমিশন এই দুর্নীতিকেই নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূলে নিরলসভাবে কাজ করছে। দুর্নীতিবাজদের আইন-আমলে আনা অব্যাহত রয়েছে।

আজ বুধবার দুদক কার্যালয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) প্রতিনিধি ফিলিয়াট ম্যাটসেজার নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল দুদক চেয়ারম্যানের সঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে এক বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে ফিলিয়াট ম্যাটসেজা দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমসহ সার্বিক কার্যক্রমের বিষয়ে জানতে চান।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনের এনফোর্সমেন্ট ইউনিট প্রায় প্রতিদিনই একাধিক স্থান বা সংস্থায় দুর্নীতি হওয়ার আগেই তা প্রতিরোধে অভিযান পরিচালনা করছে। এমনকি আজই কমপক্ষে ১০টি স্থানে এসব অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। এ অভিযান অব্যাহত রাখা হবে।
তিনি আরও বলেন, কমিশনের প্রায় ৭০ ভাগ মামলায় অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে। তবে কমিশন শতভাগ মামলায় শাস্তি প্রত্যাশা করে।

ইকবাল মাহমুদ বলেন, দুদক দুর্নীতি দমন, প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের সব কার্যক্রম সমগুরুত্বে পরিচালনা করছে। প্রতিকারমূলক কার্যক্রমের ফলাফল স্বয়ংক্রিয়ভাবেই প্রতিরোধমূলক কাজেই পরিগণিত হয় বলে অনেকেই মনে করেন। কারণ দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত এবং প্রসিকিউশনের মাধ্যমে অপরাধীদের শাস্তি হলে তা দুর্নীতি প্রতিরোধেও বিশেষ ভূমিকা রাখে।

তিনি বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে নৈতিক মূল্যবোধে জাগ্রত করার লক্ষ্যে দেশের স্কুল, মাদ্রাসাসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ২৮ হাজার সততা সংঘ গঠন। সততা সংঘের প্রতিটি কমিটিকে বছরে প্রায় ৪ হাজার ২০০ টাকা দেওয়া হচ্ছে জানিয়ে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, সততা সংঘের সদস্যরা এই সামান্য অর্থ দিয়ে বছরব্যাপী দুর্নীতি প্রতিরোধ ও উত্তম চর্চার বিকাশে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, নাটকসহ বিভিন্ন সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

ইকবাল মাহমুদ আরও বলেন, দুর্নীতি প্রতিরোধে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জেলা, উপজেলা, নগর-মহানগর পর্যায়ের স্বচ্ছ এবং সৎ মানুষদের নিয়ে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটিও দুর্নীতি প্রতিরোধে নিজ নিজ উদ্যোগে উত্তম চর্চার বিকাশে বহুমুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

তিনি বলেন, সরকারি সেবা প্রদানের প্রক্রিয়াকে পদ্ধতিগত সংস্কারের মাধ্যমে ঘুষ, দুর্নীতি, দীর্ঘসূত্রতা এবং জনহয়রানি লাঘবের লক্ষ্যে কমিশন ২৮টি প্রাতিষ্ঠানিক টিম গঠন করেছে। এসব টিম সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিদ্যমান আইন, বিধি, পরিচালনাপদ্ধতি, সরকারি অর্থ আত্মসাৎ-অপচয়ের দিকসমূহ পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে এসব প্রতিষ্ঠানের জনসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সফলতা ও সীমাবদ্ধতা, আইনি জটিলতা, সেবাগ্রহীতাদের হয়রানি ও দুর্নীতির কারণসমূহ চিহ্নিত করে তা বন্ধে সুনির্দিষ্ট সুপারিশ করে প্রতিবেদন সরকারের নিকট পেশ করছে। দুর্নীতি প্রতিরোধে কমিশন বিজনেস প্রসেস রি-ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করছে।

কমিশনের বাস্তবায়িত গণশুনানি সম্পর্কে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, স্থানীয় পর্যায়ে সরকারের কল্যাণমূলক কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির একটি অন্যতম কৌশল হচ্ছে গণশুনানি। গণশুনানিকে সরকারি সেবাপ্রত্যাশী জনগণ এবং সেবা প্রদানে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের মধ্যে প্রত্যক্ষ সংযোগের একটি প্রক্রিয়াও বলা যেতে পারে। এতে স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতে কাজ করছে। এ ছাড়া সততা স্টোরসহ অন্যান্য প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমও তিনি তাঁদের অবহিত করেন।

তদন্তের ক্ষেত্রে কমিশনের সক্ষমতা এখনো কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি, উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এই সক্ষমতা বৃদ্ধিতে গত তিন বছরে প্রায় তিন হাজার কর্মকর্তাকে (একই কর্মকর্তাকে একাধিক বিষয়ে একাধিকবার) প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে ইউএনডিপিসহ বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কারিগরি সহযোগিতার সুযোগ রয়েছে।

ফিলিয়াট ম্যাটসেজা দুদকের কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, দুর্নীতি বৈশ্বিক সমস্যা। দুর্নীতি দমন কমিশনের সঙ্গে দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কাজে ইউএনডিপির সহযোগিতার ক্ষেত্র রয়েছে।