একটি রুগ্ণ ডাকঘরের গল্প

জীর্ণ ঘরে চলছে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। গতকাল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি বাজারে।  ছবি: সাজেদুল আলম
জীর্ণ ঘরে চলছে পোস্ট অফিসের কার্যক্রম। গতকাল সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি বাজারে। ছবি: সাজেদুল আলম

বুধবার সকাল পৌনে ১০টা। সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিমগাছি বাজারের সিএনজি অটোরিকশাস্ট্যান্ডে নামতেই চোখে পড়ল একটি সাইনবোর্ড। জীর্ণ-শীর্ণ অবস্থায় সেটিতে লেখা আছে পোস্ট অফিস, কোড নম্বর ৬৭২০। ঘরের দিকে তাকাতেই দেখা গেল বেহাল দশা, মরচে পড়া টিনগুলো। সামনে ঝুলছে একটি ডাকবাক্স।

ভেতরে ঢুকে পাওয়া গেল তিনজনকে। টেবিলের সামনে চেয়ারে বসে আছেন পোস্টমাস্টার জাকির হোসেন। স্থানীয়ভাবে তিনি দুলাল নামে পরিচিত। অপরদিকে বসে আছেন পোস্টম্যান মঞ্জুরুল আলম ও রানার সাইদুর রহমান। পুরোনো কাঠের বড় একটি বাক্স রয়েছে ঘরটিতে। এটিই শাখা পোস্ট অফিসটির সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। বৃষ্টি হলে প্রায় সারা ঘরের চাল দিয়েই পানি পড়ে। তাই চিঠিপত্রসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্রের ঠাঁই হয় ওই বাক্সে। অফিসের সিলমোহরও আগের মতোই আছে। এখনো তাতে ইংরেজিতে লেখা, নিমগাছি ব্রাঞ্চ অফিস, পাবনা ডিস্ট্রিক্ট। জানতে চাইলে পোস্টমাস্টার বললেন, এসবের কোনো পরিবর্তন হয়নি।

সাবেক পোস্টমাস্টার বীরেন্দ্রনাথ সরকারের সঙ্গে কথা হয় মুঠোফোনে। তিনি বললেন, ১৮৬২ সালে শাখা পোস্ট অফিস হিসেবে ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আঙিনায় এটি গড়ে ওঠে। সামান্য সম্মানী নিয়ে দীর্ঘদিন তিনি এখানে দায়িত্ব পালন করেছেন বলে জানান। এলাকার দুজন বাসিন্দা বলেন, এ ইউনিয়নের মানুষের চিঠিপত্র, মানি অর্ডারসহ বিভিন্ন দরকারি কাগজ এখনো পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আসে। কিন্তু এটির জীর্ণদশা কাটল না। দেশ স্বাধীনের পর বর্তমান ঘরটি নির্মাণ করা হয়েছিল জানিয়ে তাঁরা বলেন, এখনো সেই ঘরেই কার্যক্রম চলছে।

পোস্টমাস্টার বলেন, প্রতি মাসে শতাধিক রেজিস্ট্রি চিঠিসহ ‍তিন শতাধিক চিঠি বিলি হয়। এ ছাড়া অনেক মানি অর্ডারও আসে। পোস্ট অফিসের এমন বেহাল দশার কথা বিভিন্ন সময়ে সংশ্লিষ্টদের জানানো হয়েছে বলে তিনি জানান। 

সোনাখাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হেনা মোস্তফা কামাল বিষয়টি অবগত আছেন জানিয়ে বলেন, তাঁরা চাইলে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীমুর রহমান বলেন, পোস্ট অফিসটির সার্বিক অবস্থা পরিবর্তনে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হবে।