ঢাকা উত্তরে মশকনিধনে অনভিজ্ঞ কর্মী নিয়োগ

এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ডিএনসিসির ‘চিরুনি অভিযান’ শুরুর আগে মশকনিধনকর্মীরা। গত মঙ্গলবার গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বী পার্কে।  ছবি: প্রথম আলো
এডিস মশার প্রজননস্থল ধ্বংসে ডিএনসিসির ‘চিরুনি অভিযান’ শুরুর আগে মশকনিধনকর্মীরা। গত মঙ্গলবার গুলশানের শহীদ ডা. ফজলে রাব্বী পার্কে। ছবি: প্রথম আলো

ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে মশকনিধন এবং পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালানোর জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে নতুন কর্মী নিয়োগ করা হয়েছে। এসব কর্মীর বেশির ভাগেরই কাজ করার পূর্বাভিজ্ঞতা নেই। জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু করায় তাঁদের আলাদা করে প্রশিক্ষণেরও কোনো ব্যবস্থা করতে পারেনি সংস্থাটি। এতে মশকনিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমের পুরোপুরি সুফল না পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ৫৪টি ওয়ার্ডের প্রতিটিতে ৩০ জন করে নতুন কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়। এ জন্য সংস্থাটির স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিঠি পাঠানো হয়েছে ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের কাছে। এক মাস ধরে এই কর্মীরা দৈনিক হাজিরার ভিত্তিতে কাজ করবেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন কর্মী পরিচ্ছন্নতা অভিযান চালাবেন, ১০ জন বাড়ি বাড়ি গিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করবেন এবং বাকি ১০ জন কচুরিপানা পরিষ্কারের কাজ করবেন। 

সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারা বলছেন, এই ৩০ জনের মধ্যে কেউ কেউ আগে দৈনিক মজুরিতে বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাজ করেছেন। সেই অভিজ্ঞতার পাশাপাশি পুরোনো কর্মীদের সঙ্গে থেকে কাজ শিখবেন তাঁরা। 

 দেখা গেছে, প্রশিক্ষণ ও পূর্বাভিজ্ঞতা না থাকায় মশকনিধনকর্মীই জানেন না লার্ভা ধ্বংস ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান কীভাবে করবেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসের কাজে যুক্ত কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাঁদের কেউ আগে রাস্তা ঝাড়ু দিতেন, কেউ বাসাবাড়ি থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করতেন। এখন তাঁরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ ও মশার লার্ভা ধ্বংস করবেন। 

গত মঙ্গলবার ১৯ নম্বর ওয়ার্ডে বাসাবাড়িতে লার্ভা ধ্বংসের অভিযান শুরুর আগে নতুন কর্মীদের কাজের নির্দেশনা দিচ্ছিলেন একটি দলের নেতা মো. কালাম। তিনি বলেন, ‘আমরা যখন কাজ করব, তখন তাঁরা (অনভিজ্ঞ কর্মীরা) দেখবেন, পরে তাঁরাও করবেন।’ 

এ বিষয়ে ডিএনসিসির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এত কম সময়ের মধ্যে দেড় হাজারের বেশি কর্মী পাওয়া সহজ নয়। এখানে যাঁদের দৈনিক কাজের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে, তাঁদের অনেকেই বিভিন্ন সময়ে কাজ করেছেন। তবে সবার পরিচ্ছন্নতা ও এডিসের লার্ভা ধ্বংস করার অভিজ্ঞতা নেই। 

ডিএনসিসিতে ৫৪টি ওয়ার্ডে ৩০ জন করে ১ হাজার ৬২০ জন নতুন কর্মী নিয়োগ দেওয়ার কথা। এসব কর্মীর দৈনিক হাজিরা হবে ৪৭৫ টাকা করে। তবে এখনো সব কর্মী নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হয়নি বলে জানা গেছে সিটি করপোরেশন সূত্রে। কাউন্সিলররা যে কয়জন কর্মী পাচ্ছেন, তাঁদের নিয়োগ দিচ্ছেন। প্রত্যেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর নিজ নিজ ওয়ার্ডে কর্মী সংগ্রহ করছেন। 

কয়েকজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, দৈনিক হাজিরার মজুরি কম। তাই প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মী পাওয়া যাচ্ছে না। অনেকে আবার দু-এক দিন করে ছেড়ে দিচ্ছেন। পরিচ্ছন্নতা অভিযানে সম্পৃক্ত হওয়া কয়েকজন কর্মী অবশ্য জানান, ভবিষ্যতে মাস্টাররোলে ও স্থায়ী চাকরি পাবেন—এই আশায় তাঁরা অনেকে কাজ শুরু করেন। দৈনিক হাজিরার মজুরি পরিশ্রমের তুলনায় কম হলেও কাজ অব্যাহত রাখবেন। 

২২ নম্বর ওয়ার্ডে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করা মশার ওষুধের স্প্রেম্যান শরীফুল ইসলাম বলেন, দৈনিক ৪৭৫ টাকার বিনিময়ে ঝিলের নোংরা পানিতে নেমে কচুরিপানার কাজ করতে চান না অনেকে। এ জন্য কর্মী পাওয়া যায় না। বেশির ভাগেরই কাজ করার জন্য প্রশিক্ষণ নেই, কাজ করতে করতে শেখেন। তিনি বলেন, তাঁদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে, কারণ এ ধরনের কাজ আগে এভাবে করা হয়নি। তবে ধারাবাহিকভাবে কাজ চলতে থাকলে ভবিষ্যতে তাঁরা ভালোভাবে কাজ শিখতে পারবেন বলে মনে করছেন ডিএনসিসির মশকনিধনের কাজে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। 

ডিএনসিসির ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মশকনিধনের কাজের তত্ত্বাবধায়ক মো. শামীম হোসেন বলেন, এই ওয়ার্ডে ২৫ জনের মতো কর্মী পাওয়া গেছে। অনেকে ময়লা পরিষ্কারের কাজ করতে চান না। কেউ কেউ আবার কয়েক দিন কাজ করে চলে যান। তখন আবার নতুন লোক নিতে হয়। এ কারণে যেসব কর্মী আছেন, তাঁদের দিয়েই কাজ করানো হয়।

এডিস মশা নিধনে পার্শ্ববর্তী দেশের অভিজ্ঞতা থেকে ডিএনসিসি জানতে পারে, তারা ১০ বছর ধরে এডিস মশা নির্মূলে ধারাবাহিকভাবে কাজ করেছে। কলকাতা পৌরসভায় এডিস মশা নিধন ও পরিচ্ছন্নতার কাজে চার হাজারের বেশি কর্মী কাজ করছেন। 

অপ্রশিক্ষিত কর্মীর বিষয়ে ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘নতুন করে যাঁরা কাজ শুরু করেছেন, তাঁদের পর্যায়ক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তবে দ্রুত এ কাজ শেষ করা যাবে না। প্রথমে প্রতিটি ওয়ার্ডে কর্মী কম থাকায় ২০ জন করে নিতে বলেছিলাম। তাঁদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে প্রশিক্ষিত কর্মী নিতে বলেছি। প্রয়োজনে ১০ দিন ট্রেনিং দিয়ে মাঠের কাজে নামাতে বলেছি। লোকও নেওয়া হবে, আবার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। কারণ, যাঁরা কাজ করবেন, তাঁদের সেই কাজ না জানা থাকলে ভালোভাবে করতে পারবেন না।’