হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া নবজাতক উদ্ধার

হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল থেকে চুরি হওয়া এক নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। বুধবার রাতে হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফী আবাসিক এলাকা থেকে ওই নবজাতককে উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ আধুনিক জেলা সদর হাসপাতালের গাইনি বিভাগে ১৮ আগস্ট এক ছেলে সন্তান জন্ম দেন হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা মোর্শেদ কামালের স্ত্রী ফাতেমা বেগম। চার দিনের নবজাতকসহ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তিনি। 

বুধবার বিকেল পাঁচটার দিকে ফাতেমা তাঁর ছেলে সন্তানকে হাসপাতালের শয্যায় রেখে শৌচাগারে যান। ফিরে এসে দেখেন শয্যায় তাঁর ছেলে নেই। পরে তিনি কান্নাকাটি করে বাচ্চাটিকে চারপাশে খুঁজতে থাকেন। এ নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে লোকজনের জটলা বাধে। ফাতেমার কান্না ও জটলা দেখে এগিয়ে আসেন হবিগঞ্জ শহরের টমটমচালক ‍আফসার আলী। তিনি ঘটনাস্থলে এসে জানতে পারেন শিশু নিখোঁজের বিষয়টি। তখন তিনি শিশুর মা-বাবাকে আশ্বস্ত করেন, শিশুটিকে যে চুরি করেছে, তাকে তিনি চেনেন। পরে সন্ধ্যা সাতটার দিকে তাঁরা হবিগঞ্জ শহরের পুরান মুন্সেফী আবাসিক এলাকায় একটি বাসায় গিয়ে শিশুটির সন্ধান পান। তাঁরা সেখানে গিয়ে দেখেন ওই বাসার লোকজন মিষ্টিমুখ করছেন। আশপাশে প্রচার করা হয়েছে তাঁদের এক ছেলে সন্তান হয়েছে। যখন ফাতেমা বেগম শিশুটি তাঁর দাবি করেন, তখন প্রতিবাদ করে বাসার গৃহিণী ইসরাত আরা ওরফে লোপা শিশুটি তাঁর বলে দাবি করেন। এ নিয়ে চলে দুই মায়ের ঝগড়া। এমন পরিস্থিতিতে খবর দেওয়া হয় হবিগঞ্জ থানা-পুলিশকে।

পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শিশুটিকে তাদের হেফাজতে নেয়। তখন পুলিশের সামনেও ইসরাত আরা লোপা শিশুটি তাঁর বলে দাবি করেন। তিনি ওই এলাকার রিপন আহমেদের স্ত্রী। এরই মধ্যে শিশুটি কান্নাকাটি শুরু করলে পুলিশ শিশুটিকে মায়ের দুধ খাওয়াতে বলেন। তখন লোপা পিছু হটেন। ফাতেমা যখন শিশুটিকে দুধ খাওয়ান, শিশুটি নীরবে দুধ পান করছিল। একপর্যায়ে ঘুমিয়ে পড়ে মায়ের কোলেই। পরে টমটমচালকের কথা ও হাসপাতালের কাগজপত্র দেখে শিশুটিকে ফাতেমা বেগমের কাছে তুলে দেয় পুলিশ।

টমটম চালক আফসর আলী পুলিশকে জানান, বুধবার বিকেলে হাসপাতালের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন, এমন সময় অভিযুক্ত ওই নারী (লোপা) পুরান মুন্সেফী এলাকার বাড়িতে যাওয়ার জন্য ৮০ টাকা ভাড়া চুক্তিতে তাঁর টমটমে ওঠেন। ওই মুহূর্তে শিশুটি তার কোলেই কান্নাকাটি করছিল।

হবিগঞ্জ সদর থানার পরিদর্শক জিয়াউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিয়ের দীর্ঘদিনেও বাচ্চা না হওয়ার কারণে লোপা অনেকটা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। সম্প্রতি তিনি সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। কিন্তু ডাক্তারি পরীক্ষার পর তাঁর পেটের বাচ্চার অবস্থা ভালো নেই বলে জানতে পারেন। এ কারণে তিনি হাসপাতাল থেকে বাচ্চা চুরি করেন।

এ ঘটনায় নবজাতকের বাবা মোর্শেদ কামাল বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জ থানায় মামলা করেন। এ মামলায় লোপাকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।