বিজিএমইএ ভবন ভাঙায় কোনো অগ্রগতি নেই

ভবনে তালা ঝোলানো হয়েছে গত এপ্রিলে। িকন্তু এখনো হাতিরঝিলের মধ্যে থাকা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজউক।  ছবি: প্রথম আলো
ভবনে তালা ঝোলানো হয়েছে গত এপ্রিলে। িকন্তু এখনো হাতিরঝিলের মধ্যে থাকা বিজিএমইএ ভবন ভাঙতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি রাজউক। ছবি: প্রথম আলো

আদালতের নির্দেশনার পর হাতিরঝিলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর ভবনটি খালি করা হয়েছে। তবে ভবন ভাঙার ব্যাপারে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। এই নিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হলেও কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে এখনো চুক্তি করা হয়নি।

হাতিরঝিলে (জলাশয়ে) আড়াআড়িভাবে গড়ে ওঠা বিজিএমইএ ভবনের নির্মাণকাজ শুরু হয় গত শতকের নব্বইয়ের দশকে। ২০০৬ সালের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। জলাশয়ে ভবনটি নির্মাণ করায় শুরু থেকেই এর বিরোধিতা করে আসছিলেন পরিবেশবাদীরা। পরে বিষয়টি আদালতে গড়ায়।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল হাইকোর্ট এক রায়ে বিজিএমইএর বর্তমান ভবনটিকে ‘হাতিরঝিল প্রকল্পে একটি ক্যানসারের মতো’ উল্লেখ করে রায় প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেন। এর বিরুদ্ধে বিজিএমইএ লিভ টু আপিল করে, যা ২০১৬ সালের ২ জুন আপিল বিভাগে খারিজ হয়। রায়ে ভবনটি নিজ খরচে অবিলম্বে ভাঙতে বিজিএমইএকে নির্দেশ দেওয়া হয়। এতে ব্যর্থ হলে রায়ের কপি হাতে পাওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে রাজউককে ভবনটি ভেঙে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়। পরে ভবন ছাড়তে উচ্চ আদালতের কাছে সময় চায় বিজিএমইএ। প্রথমে ছয় মাস এবং পরে সাত মাস সময়ও পায় তারা। সর্বশেষ গত বছর নতুন করে এক বছর সময় পায় সংগঠনটি। সে সময় তারা মুচলেকা দেয়, ভবিষ্যতে আর সময় চাওয়া হবে না। মুচলেকা দিয়ে পাওয়া সময়ও গত ১২ এপ্রিল শেষ হয়। এরপর ১৬ এপ্রিল সন্ধ্যায় ভবনটিতে তালা ঝুলিয়ে দেয় রাজউক।

ওই সময় রাজউকের কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরণের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙা হবে। এ জন্য চীনের একটি বিশেষজ্ঞ দল দিয়ে সমীক্ষাও করা হয়েছে। কিন্তু পরদিনই গণমাধ্যমে ভবনটি ভাঙার দরপত্র আহ্বান করে রাজউক। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, ভবনটি সনাতন পদ্ধতিতে ভাঙা হবে। ২৫ এপ্রিল দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল। এ সময়ে পাঁচটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দরপত্র জমা দেয়। দরপত্র জমা দেওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে পিঅ্যান্ডএস এন্টারপ্রাইজ, চন্দ্রপুরী এন্টারপ্রাইজ, সামিয়া এন্টারপ্রাইজ, সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স ও ফোরস্টার এন্টারপ্রাইজ। পরে সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে সালাম অ্যান্ড ব্রাদার্স প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হয়। কিন্তু এরপর আর কোনো অগ্রগতি নেই।

এমন অবস্থায় ভবনটি আদৌ ভাঙা হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন রাজউকেরই একাধিক কর্মকর্তা। তাঁদের একজন নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, আদালতের নির্দেশনার কারণে বাধ্য হয়ে রাজউক ভবনটিতে তালা ঝুলিয়েছে।কিন্তু ভবনটি ভাঙতে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রস্তুতি নেই সংস্থাটির।

ভবনটি ভাঙার ব্যাপারে গত জুন মাসে এক অনুষ্ঠানে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের জানান, দরপত্রে সর্বোচ্চ দরদাতা প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়ার আগে একটি চুক্তি করা হবে। চুক্তিতে নিরাপত্তার বিষয়টি উল্লেখ থাকবে। যাতে ভবন ভাঙার সময় হতাহতের কোনো ঘটনা না ঘটে। ওই মাসে রাজউকের সঙ্গে চুক্তিটি চূড়ান্ত হওয়ার কথা ছিল।

 এ সম্পর্কে জানতে চাইলে ভবনটি ভাঙাসংক্রান্ত রাজউকের কমিটির প্রধান ও সংস্থাটির প্রধান প্রকৌশলী এ এস এম রায়হানুল প্রথম আলোকে বলেন, এখনো ওই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রাজউকের কোনো চুক্তি হয়নি। দরপত্র দেওয়ার বিষয়টিও চূড়ান্ত করা হয়নি। ভবনটি না ভেঙে অন্য কোনোভাবে ব্যবহারের পরিকল্পনা রাজউকের আছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, অন্য কোনো পরিকল্পনা নেই। ভবনটি অবশ্যই ভাঙা হবে। শিগগিরই পদক্ষেপ নেওয়া হবে।