বাড়িতে নবজাতক এলেই দুটি গাছ উপহার

ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া তেঘুরি গ্রামের দিপু সরকারের বাড়িতে গাছ লাগাচ্ছেন।
ইউপি চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া তেঘুরি গ্রামের দিপু সরকারের বাড়িতে গাছ লাগাচ্ছেন।

‘আগে একটি করে গাছ লাগিয়ে শুরু করেছিলাম। কিন্তু যখন দেখলাম গাছ লাগানোর জায়গা আছে, তখন থেকে দুটি করে লাগানো ধরলাম। ছোট শিশুদের সঙ্গে গাছও বেড়ে উঠবে। পর্যায়ক্রমে সবুজে ভরা গাছে ছেয়ে যাবে পুরো এলাকা। এ যে কেমন অনুভূতি, ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।’
খুবই আবেগপ্রবণ হয়ে কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার মহেড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান বাদশা মিয়া। তাঁর এলাকায় নতুন শিশুর জন্ম হলেই দুটি করে গাছ লাগাচ্ছেন তিনি।
চলতি মাসের প্রথম দিন ‘একটি শিশু, একটি গাছ’ স্লোগানে ব্যক্তি উদ্যোগে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মসূচিটি হাতে নিলেও ১৫ দিন ধরে ভূমিষ্ঠ হওয়া প্রত্যেক নবজাতকের জন্য দুটি করে গাছ লাগাচ্ছেন। এখন স্লোগান দিয়েছেন ‘একটি শিশু, দুটি গাছ’। গত ২৩ দিনে তিনি ১৭ নবজাতকের জন্য ৩৫টি গাছ লাগিয়েছেন।
২০১৬ সালের ২৮ মে ইউপি নির্বাচনে বাদশা মিয়া চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। দায়িত্ব নেন ৭ আগস্ট। তিনি জানান, দায়িত্ব নেওয়ার পর মানুষ মনে রাখার মতো তেমন কোনো কাজ করতে পারেনি। পুনরায় চেয়ারম্যান না হতে পারলেও মানুষ তাঁকে কীভাবে মনে রাখবে, সে জন্য একটি পদ্ধতি খোঁজেন। চলতি আগস্ট মাসের প্রথম দিন থেকে শুরু করেন কর্মসূচিটি। এর আগে তিনি ইউপির বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত সভা কিংবা উঠান বৈঠকে তাঁর উদ্যোগের কথা প্রচার করেন।
বাদশা মিয়া জানান, তিনি খবর পান, ইউনিয়নের তেঘুরি গ্রামের দিপু সরকারের স্ত্রী দীপ্তি সরকার একসঙ্গে তিন সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। ১ আগস্ট তিনি ওই বাড়িতে গিয়ে তিন নবজাতক অঙ্কন সরকার, অর্পণ সরকার ও অরিত্রি সরকারের নামে বাড়ির পাশে তিনটি আমগাছের চারা লাগান।
দীপ্তি বলেন, ‘বাবুরা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে গাছও বড় হবে। গাছে আম আসবে, বড় হয়ে ওরা খাবে, সঙ্গে আমরাও। সত্যিই ভালো লাগছে।’
স্বল্প মহেড়া গ্রামের প্রবাসী ফিরোজ মিয়ার স্ত্রী আরিফা আক্তার বলেন, ‘এক সপ্তাহ আগে আমার ছেলে হয়েছে। চেয়ারম্যান সাব খবর পেয়ে গাছ লাগাইছেন। একটা আম, আরেকটা কাঠ (ইউক্যালিপটাস) গাছ। কী যে আনন্দ লাগতাছে! বলা পারুম না।’
বিল মহেড়া গ্রামের জুলহাস মিয়া বলেন, ‘মেয়ে হওয়ার খবরে চেয়ারম্যান বাড়িতে আম ও ইউক্যালিপটাস গাছ লাগিয়ে দিয়েছেন। এটি নিঃসন্দেহে ভালো উদ্যোগ। কারণ, গাছের দয়ায় অক্সিজেন নিয়ে আমরা বাঁচি।’
ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য আগাছাওয়ালী গ্রামের বাসিন্দা দেওয়ান পারভেজ বলেন, কর্মসূচিটি গ্রহণের আগে চেয়ারম্যান পরিষদের সবাইকে নিয়ে আলোচনা করেছেন। সবাই তাঁকে সাহায্য করছেন। তাঁদের গ্রামগঞ্জে নতুন বাচ্চা হলে বাচ্চার হাতে টাকা দেওয়ার রেওয়াজ আছে। চেয়ারম্যান গাছ লাগানোর পর বাচ্চার হাতে কিছু টাকাও দেন। এই টাকা বিশেষ করে যারা দরিদ্র, তাদের বেশি উপকারে আসে। এ ছাড়া তিনি বাচ্চা হওয়ার পর মায়েরা কীভাবে নিজেদের ও বাচ্চার যত্ন নেবেন, তা-ও বলে আসেন, যা খুবই উপকারী।
এ বিসয়ে বাদশা মিয়া বলেন, ‘অস্বীকারের কিছুই নেই। কাজটি করার মাধ্যমে আমার এলাকার জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা হচ্ছে। আমি বিভিন্ন স্কুল পরিদর্শনে গিয়েও বাচ্চা হলে আমাকে জানানোর কথা বলছি। এতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সঙ্গেও যোগাযোগ করতে পারছি। আমি চাই কাজটির মাধ্যমে প্রত্যেক নবজাতক গাছের সবুজ শ্যামল ছায়ায় বেড়ে উঠুক। আমার ক্ষুদ্র এ প্রয়াসের ভেতর মানুষ আমাকে মনে রাখুক।’