টাঙ্গাইলে ৪২ চিকিৎসক প্রেষণে শহরে

নিয়োগ পেয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র মাঠপর্যায়ের প্রতিষ্ঠানে। তবে তাঁদের প্রেষণে পাঠানো হয়েছে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা শহরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে। টাঙ্গাইলের ৪২ জন চিকিৎসক এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রেষণে থাকায় ব্যাহত হচ্ছে গ্রামাঞ্চলের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা।

৪২ জনের মধ্যে ১৮ জনই প্রেষণে গেছেন ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে। আরও তিনজন চলে গেছেন অন্য জেলায়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, এসব চিকিৎসকের প্রেষণ বাতিলের জন্য বারবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে বলা হলেও কোনো কাজ হয়নি।

ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেষণে যাওয়া ১৮ জন হলেন সিভিল সার্জন কার্যালয়ের চিকিৎসা কর্মকর্তা রেহেনা নাসরিন, ঘাটাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা শাহানা পারভীন, ঘাটাইলের সন্ধানপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সাদিয়া নুর আফরোজ, মধুপুরের আউশনারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন অরুণাংশু রাহা, ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন সাঈদ হোসেন, ওই উপজেলার নিকরাই উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফৌজিয়া আক্তার, বীরহাটি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফাহমিদা হাসান, সখীপুরের বড়চওনা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা আশরাফি সারমিন, হাতীবান্ধা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সুশান্ত কুমার সাহা, ধনবাড়ী উপজেলার ধোপাখালী ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন নাশাত জাবীন, পাইশকা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সারেফা সুলতানা, বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সহকারী সার্জন সুলতানা রাজিয়া খান, নাসরিন তাহমিনা, বাসাইল উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা মাকসুদা জামান মহুয়া, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সুমন সাহা, গোপালপুর উপজেলার ঝাউয়াইল উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা নগদা শিমল অবন্তি ঘোষ ও মির্জাপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সুদীপ্ত কুণ্ডু।

এ ছাড়া সখীপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন ফেরদৌসী সুলতানা জামালপুরে শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে, মির্জাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা (হোমিও) মো. রোকনুজ্জামান ময়মনসিংহে, টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ঘারিন্দা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন মামুনুর রশীদ মানিকগঞ্জে প্রেষণে কাজ করছেন।

একই ভাবে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে কর্মরত ২১ জন টাঙ্গাইল শহরের শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজ, টাঙ্গাইল ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল ও টাঙ্গাইল পুলিশ হাসপাতালে প্রেষণে চলে এসেছেন। তাঁরা হচ্ছেন ঘাটাইলের দিঘলকান্দি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন শ্রাবন্তী ভূঁইয়া, কালিহাতীর বল্লা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের সহকারী সার্জন শিবলি চৌধুরী, মধুপুরের আলোকদিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা তানজিনা আফরিন খান, ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাজিয়া আফরিন, ওই উপজেলার অর্জুনা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন চৌধুরী, শিয়ালখোল উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা ফরহাদ হোসেন, সখীপুরের উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল রতন, নাগরপুরের পাকুটিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা সৌমিত্র চক্রবর্তী, ভাদ্রা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা পিয়া রায়, মোকনা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন সৃজন সাহা, দেলদুয়ার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ (গাইনি) ফরিদা ইয়াসমিন, চিকিৎসা কর্মকর্তা সোনিয়া পারভীন, ইসরাত জাহান, দেউজান উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা আবিবুর রহমান, ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনিষ্ঠ বিশেষজ্ঞ (গাইনি) নাজমা খলিল, বীরতারা ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন অপর্ণা সরকার, মির্জাপুরের ছাওয়ালি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা জিনাত রহমান, মির্জাপুর ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন রাহাত চৌধুরী, বাসাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসা কর্মকর্তা মো. জাহিদুজ্জামান, ময়থা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসা কর্মকর্তা আশরাফি খান ও কাউলজানি ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহকারী সার্জন তাসমিন সুলতানা।

স্বাস্থ্য বিভাগের একটি সূত্র বলছে, এই চিকিৎসকেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে বেতন-ভাতা নিচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা প্রেষণে অন্যত্র কাজ করায় সংশ্লিষ্ট এলাকার মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছেন না। চিকিৎসকদের প্রেষণ বাতিল করে নিজ নিজ পদায়নকৃত জায়গায় ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বলেও কোনো ফল পাচ্ছেন না জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা।

টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন মো. শরীফ হোসেন খান বলেন, প্রেষণে চিকিৎসকেরা শহরমুখী হওয়ায় উপজেলা ও গ্রাম পর্যায়ে মানুষ চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন, এটা সত্য। বিষয়টি নিয়ে তাঁরাও সমস্যায় আছেন। প্রেষণ বাতিলের জন্য তিনি একাধিকবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।