এক রাতে বাল্যবিবাহ থেকে রক্ষা পেল ৩ ছাত্রী

বেশ জোরেশোরেই চলছিল বিয়ের আয়োজন। বর প্রাপ্তবয়স্ক হলেও কনের বয়স একেবারেই কম। স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাত্র তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। বাল্যবিবাহ আয়োজনের এই খবর পেয়ে রাতেই সেখানে হাজির হয় প্রশাসন। পরে মুচলেকা দিয়ে কনের বাবা বিয়ে বন্ধ করতে বাধ্য হন। গতকাল শুক্রবার রাত নয়টার দিকে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার একটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। প্রশাসনের তৎপরতায় ওই রাতে একই উপজেলায় আরও দুটি বাল্যবিবাহ বন্ধ করা সম্ভব হয়।

তৃতীয় শ্রেণির ওই ছাত্রীর সঙ্গে বিয়ে ঠিক করা হয়েছিল উপজেলার চরবনবাড়িয়া গ্রামের ইমান আলীর ছেলে মনিরুল ইসলামের (২৫)। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিয়েবাড়িতে উপস্থিত হন সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. আনিসুর রহমান। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ সময় কনের বাবার কাছ থেকে কনে প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা নেওয়া হয়। আইন অমান্য করে বাল্যবিবাহের আয়োজন করায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কনের বাবাকে ১০ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন।

গতকাল রাতে খবর পেয়ে উপজেলার আরেকটি গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিযান পরিচালনা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপ্রাপ্তবয়স্ক কনের (১৬) সঙ্গে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার কালীবাড়ি ঘোষপাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় একটি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র বায়েজিদ বোস্তামীর (২১) বিয়ের আয়োজন চলছিল। প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে কাজি কৌশলে পালিয়ে যান। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় বিয়ের আয়োজন বন্ধ করে দেওয়া হয়।।পরে ভ্রাম্যমাণ আদালত কনের বাবাকে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করেন এবং কনের বাবার কাছ থেকে কনের ১৮ বছর না হওয়া পর্যন্ত বিয়ে দেবেন না বলে মুচলেকা নেন।

একই রাতে উপজেলার আরেকটি গ্রামে বাল্যবিবাহ বন্ধে অভিযান চালান ভ্রাম্যমাণ আদালত। কনে স্থানীয় একটি উচ্চবিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী (১৪)। বর সিরাজগঞ্জ পৌরসভার বাসিন্দা হীরা মণ্ডল (৩২)। কনে অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বাল্যবিবাহ বন্ধ করে দেন এবং কনের বাবার কাছ থেকে মুচলেকা নেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত কনের বাবা ও বর হীরা মণ্ডলকে পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করেন।

তিনটি অভিযানেই ভ্রাম্যমাণ আদালতকে সহায়তা করেন পৌর ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম ও আনসার ব্যাটালিয়নের সদস্যরা।

আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী হাকিম মো. আনিসুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বাবা-মায়ের সচেতনতার অভাবে বাল্যবিবাহ আয়োজন চলছেই। তবে সামাজিক সচেতনতার কারণে বিষয়টি প্রশাসন জেনে যাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। উপজেলায় বাল্যবিবাহ রোধ করতে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।