'ঈদযাত্রায় ১৩৫ দুর্ঘটনায় নিহত ১৮৫'

‘নিরাপদ সড়ক চাই’–এর (নিসচা) এক প্রতিবেদন বলছে, এবারে পবিত্র ঈদুল আজহার ছুটিতে নয় দিনে সারা দেশে দুর্ঘটনা ঘটেছে ১৩৫টি। এতে নিহত হয়েছে ১৮৫ জন এবং আহত হয়েছে ৩৫৫ জন। এর মধ্যে শুধু সড়কেই ১৩০টি দুর্ঘটনায় ১৮০ জন নিহত ও ৩৪৪ জন আহত হয়েছে।

আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের মাওলানা আকরাম খাঁ হলে এক সংবাদ সম্মেলনে নিসচা এই প্রতিবেদন তুলে ধরে।

এ বছরে ঈদুল ফিতরে সড়কপথে ঈদযাত্রা যতটা স্বস্তিদায়ক ছিল, ঈদুল আজহাতে এসে সেই ঈদযাত্রা ভোগান্তিতে পরিণত হয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনের পর্যবেক্ষণে এসেছে, ঈদযাত্রায় দেশের উত্তরাঞ্চলের মানুষের বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। দীর্ঘ সময় ধরে এই এলাকাগামী যানবাহনগুলো সড়কে আটকে থাকার খবর প্রকাশিত হয়েছে। উত্তরবঙ্গে সড়ক দুর্ঘটনাও বেড়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে তিনটি সেতু খুলে দেওয়ায় পূর্ববঙ্গের জেলাগুলোয় যানজট হয়নি বললেই চলে। সড়ক দুর্ঘটনাও এসব অঞ্চলে তুলনামূলক কম হয়েছে। খুলনা ও যশোর অঞ্চলে সড়ক দুর্ঘটনা কমেনি, বরং বেড়েছে।

নিসচার পর্যবেক্ষণে এসেছে, রেলপথে শিডিউল বিপর্যয় ও টিকিট কালোবাজারির কারণে যাত্রী হয়রানি বেড়েছে। অনলাইনে রেলের টিকিট বিক্রিতে এবারও প্রযুক্তিগত সমস্যা হয়েছে। এসব কারণে রেলের যাত্রীদের বিড়ম্বনা পোহাতে হয়েছে। নৌপথে দু-একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া ঈদযাত্রা ছিল স্বস্তিদায়ক। নৌপথে বেশ কিছু নতুন লঞ্চ যুক্ত হয়েছে। তবে ঈদের আগের দিন সদরঘাট টার্মিনালে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ সামলাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথোরিটির সাবেক চেয়ারম্যান ও নিসচার উপদেষ্টা আইয়ুবুর রহমান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ঈদের আগে সড়ক ব্যবস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করা হলেও ঈদের পরে তা ঝিমিয়ে পড়ে। এ কারণে চালকেরা বেপরোয়া হয়ে যান। আরেকটি বড় সমস্যা হলো সড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল। বিআরটিএ হাইকোর্টে দেওয়া এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চার লাখের বেশি ফিটনেসবিহীন যান সড়কে চলাচল করছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। চালকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে যেমন কর্মসংস্থান বাড়বে, তেমনি সড়ক দুর্ঘটনাও কমবে।

বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো ও ওভারটেক করার প্রবণতাকে সড়ক দুর্ঘটনার মূল কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে নিসচা। এ ছাড়া সংগঠনটির পর্যবেক্ষণ বলছে, ফিটনেসবিহীন যানবাহন ও পণ্যবাহী বাহনে যাত্রী পরিবহন, অদক্ষ চালক ও চালকের সহকারী, বিরামহীনভাবে যানবাহন চালানো, ঈদের পরে যাতায়াতে মনিটরিং ব্যবস্থা না থাকা বা মনিটরিংয়ে শিথিলতা, মহাসড়কে অটোরিকশা, ব্যাটারিচালিত রিকশা, নছিমন ও করিমন চলাচল, মোটরসাইকেলের অবাধ চলাচল সড়কে দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।

নিসচার প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন সংগঠনটির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব লিটন এরশাদ। তিনি বলেন, চালক, সহকারীসহ পরিবহনশ্রমিকদের কর্মঘণ্টা ও বেতন নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনা বন্ধ করা যাবে না। এটি নির্ধারিত না থাকায় তাঁদের মধ্যে একটি প্রতিযোগিতা তৈরি হয়। তা ছাড়া যানবাহন বিরতিহীনভাবে চললে যান্ত্রিক গোলযোগের আশঙ্কা থাকে।

নিসচার প্রতিবেদনটি ১০ থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত নয় দিনের সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা, পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ, অনলাইন নিউজ পোর্টাল, সংবাদ সংস্থা ও টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশিত খবর থেকে তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়েছ। এ ছাড়া নিসচার সারা দেশের ১২০টি শাখা সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমেও সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য-উপাত্ত নেওয়া হয়।