উদ্বিগ্ন স্থানীয়রা, রোহিঙ্গারা খুশি

রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি
রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির। ফাইল ছবি

দ্বিতীয় দফা প্রত্যাবাসন স্থগিত হওয়ায় কক্সবাজারের আশ্রয়শিবিরগুলোতে থাকা রোহিঙ্গারা খুশি। তাদের দাবি, নাগরিকত্বসহ পাঁচ দফা দাবি পূরণ না হলে কেউ মিয়ানমারে ফিরে যাবে না। তবে রোহিঙ্গারা খুশি হলেও উদ্বিগ্ন স্থানীয় মানুষ। তারা বলছে, দেশি-বিদেশি সংস্থার কিছু লোক রোহিঙ্গাদের ফেরত না যেতে উসকানি দিচ্ছে।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন গতকাল সিলেট এম এ জি ওসমানী বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত করা পরও আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে পারিনি। তবে রোহিঙ্গাদের ফিরে যেতেই হবে। তাদের আর বসিয়ে বসিয়ে আমরা খাওয়াতে পারব না।’

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে প্রায় ১১ লাখ নিবন্ধিত রোহিঙ্গা আছে। ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে তারা এসে কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়। তাদের ফেরত পাঠাতে ২২ আগস্ট সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়। কিন্তু তারা যেতে না চাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি। এর আগে গত বছরের ১৫ নভেম্বরও আরেক দফা প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বিক্ষোভ-সমাবেশের কারণে সে দফাতেও প্রত্যাবাসন ভন্ডুল হয়ে যায়।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেটে বলেন, ‘মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব হওয়ায় তারা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে রাজি হয়েছিল। আমরা এখন মিয়ানমারকে বলব, রোহিঙ্গাদের ১০০ জন নেতাকে সেখানে নিয়ে যেতে। তাঁদের প্রত্যাবর্তনের জন্য সেখানে কী কী করা হয়েছে, সেগুলো দেখে এসে তাঁরা অন্যদের বোঝাবেন। রোহিঙ্গাদের জন্য সে দেশে চায়না ও ভারত বাড়ি করে দিয়েছে। সেগুলো দেখে এসে তাঁরা যখন অন্য রোহিঙ্গাদের বলবেন, তখন তারা আশ্বস্ত হবে। কিন্তু মিয়ানমার সেটা করেনি। তাই প্রত্যাবর্তনের ব্যর্থতার দায় তাদেরই।’

রোহিঙ্গাদের দাবি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেসব দাবি জানাচ্ছে, সেটা মানতে আমরা বাধ্য নই। এটা তাদের দেশে গিয়ে অর্জন করতে হবে।’ রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে রাজি করাতে না পারা কূটনৈতিক ব্যর্থতা—বিএনপির এমন মন্তব্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা রোহিঙ্গাদের ফেরাতে পারিনি, এটা সত্য। তবে এদের ফেরানো হবে।’

গতকাল শুক্রবার সকালে টেকনাফের জাদিমোরা শালবাগান শিবিরে গিয়ে দেখা গেছে, অলিগলিতে, দোকানের সামনে এবং পথের ধারে জড়ো হয়ে রোহিঙ্গারা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা করছে। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তারা বিজয়সূচক চিহ্ন দেখাতে শুরু করে।

সূত্র জানায়, মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি ১ হাজার ৩৭ পরিবারের  ৩ হাজার ৫৪০ জনের নামের তালিকা বাংলাদেশকে দেয়। এর মধ্যে ৯৩৩ পরিবারে ৩ হাজার ৯১ জন রোহিঙ্গা শালবাগান শিবিরের বাসিন্দা। গত তিন দিনে এই শিবিরের ৩৩৯ পরিবারের প্রায় আড়াই হাজার রোহিঙ্গার সাক্ষাৎকার নেন জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ‘ইউএনএইচসিআর’ এবং শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন (আরআরআরসি) প্রতিনিধিরা। কিন্তু কেউ শর্ত ছাড়া রাখাইনে ফিরে যেতে রাজি না হওয়ায় প্রত্যাবাসন স্থগিত করা হয়। যদিও প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য টেনাফের নাফ নদীর কেরুনতলীর ঘাটে একটি ‘প্রত্যাবাসন কেন্দ্র’ এবং নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্তে আরেকটি পৃথক প্রত্যাবাসন কেন্দ্র খোলা হয়েছিল।

গতকাল সকালে শালবাগান শিবিরের ‘সাক্ষাৎকার কেন্দ্রে’ গিয়ে দেখা গেছে, সেটি তালাবদ্ধ। সেখানে কোনো লোকজন নেই। আরআরআরসির সহকারী ও ক্যাম্প ইনচার্জ বলেন, তিন দিনে ৩৩৯ রোহিঙ্গা পরিবারের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। শর্ত ছাড়া তারা কেউ মিয়ানমারে ফিরে যেতে রাজি হয়নি।

তবে দ্বিতীয় দফার প্রত্যাবাসন স্থগিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ কক্সবাজারের মানুষ। তারা বলছে, রোহিঙ্গাদের ভিড়ে এলাকার শ্রমজীবী মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। হাটবাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। 

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আয়াছুর রহমান বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এলাকার শান্তিশৃঙ্খলা, পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। মানুষ এ নিয়ে উদ্বিগ্ন। অনেকে ভুল পরিচয়ে পাসপোর্ট বানিয়ে বিদেশে চলে যাচ্ছেন। 

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম বলেন, প্রত্যাবাসন না হওয়ার ব্যর্থতা বাংলাদেশের নয়। সমস্যাটি মিয়ানমারের। তাই সমাধানের উদ্যোগও তাদের নিতে হবে।