সাবেক মন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের 'গণসাক্ষাৎ'

গণসাক্ষাতের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ছবি: প্রথম আলো
গণসাক্ষাতের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। ছবি: প্রথম আলো

অনুষ্ঠানের নাম ‘গণসাক্ষাৎ’। যাঁরা উপস্থিত, সবাই সাধারণ মানুষ। তাঁরা নিজেদের সমস্যা থেকে শুরু করে এলাকার সমস্যার কথা বললেন। একান্তে এসব সমস্যার কথা শুনে তাৎক্ষণিক মিলল প্রতিশ্রুতিও।

সিলেট-৬ নির্বাচনী এলাকার বিয়ানীবাজারে আজ শনিবার এ রকম একটি অনুষ্ঠানে মিলিত হয়ে এলাকাবাসীর কথা শুনেছেন স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি গণসাক্ষাৎকারীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার কথায় এবং কাজে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অগ্রগতিই প্রমাণ করছে, উন্নয়নবান্ধব আওয়ামী লীগ সরকার দেশকে কতটুকু এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই সুস্থ রাজনীতি করে দেশপ্রেমের মাধ্যমে জনগণের কল্যাণে কাজ করতে।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে গতকাল সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চলে গণসাক্ষাৎ শীর্ষক অনুষ্ঠান। বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগ এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। সাংসদ নাহিদ এ রকম আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের উপস্থিতি দেখে আপ্লুত হন। তিনি দলীয় নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনারা আমাকে যে ভালোবাসা দেখিয়েছেন, এ জন্য সবার প্রতি অকৃত্রিম শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জ্ঞাপন করছি। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শেখ হাসিনাকে তাঁর অবস্থানে আরও শক্তিশালী রাখতে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যেতে হবে।’

বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল হাছিবের সভাপতিত্বে গণসাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে বিয়ানীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. আবদুস শুকুর, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, সহদপ্তর সম্পাদক দেওয়ান মাকসুদুল ইসলাম আউয়াল, সদস্য আবদুল খালিকসহ তৃণমূল পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

গণসাক্ষাতে মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষকসহ সুশীল সমাজের ব্যক্তিবর্গ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের প্রতিনিধিত্বশীল ব্যক্তিরা ছাড়াও প্রত্যন্ত গ্রাম এলাকার মানুষ উপস্থিত হন। নুরুল ইসলাম নাহিদকে নিয়ে টানা তিন ঘণ্টার এই গণসাক্ষাৎ বিয়ানীবাজারে প্রথম হয়েছে জানিয়ে বিয়ানীবাজার পৌর মেয়র আবদুস শুকুর প্রথম আলোকে বলেন, স্থানীয় সাংসদ হিসেবে মন্ত্রী সবার কথা শুনেছেন। যেখানে সমস্যা, সেই সব লিখে নিয়েছেন। পাশাপাশি উপস্থিত ব্যক্তিদের পারিবারিক ও সামাজিক অবস্থারও একান্তে খোঁজখবর নিয়েছেন। এতে করে গণসাক্ষাতে উপস্থিত সবাই খুশি হয়েছেন। এ রকম অনুষ্ঠানের ধারাবাহিকতা আমরা রক্ষা করব।’

‘গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করলেন কি না, আমি দেখা হলো জানতে চাইব’
‘এখন বর্ষাকাল। গাছ লাগানোর সময়। কিন্তু গাছ লাগিয়েই দায়িত্ব শেষ করি আমরা। আজ বন বিভাগ থেকে ১১ জাতের ২৫ হাজার চারা আমি আপনাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। এগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আঙিনায় লাগাবেন। গাছ লাগিয়ে পরিচর্যা করলেন কি না, আমি দেখা হলে জানতে চাইব।’

আজ গণসাক্ষাতের পরপরই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গাছের চারা বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি শিক্ষকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের জনসংখ্যা বেশি। কিন্তু সেই তুলনায় গাছপালা, বনজ সম্পদ খুবই কম। বিষয়টি শিক্ষার্থীদের জানার মধ্যে থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরাই আগামীর ভবিষ্যৎ। এ জন্য গাছের প্রতি নজর দিতে হবে শিক্ষার্থীদের। জগতের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক বনাঞ্চল আমাজন। সেখানে দাবানল জ্বলছে। নেভানোর জন্য দুনিয়াব্যাপী উৎকণ্ঠা। কেননা, জগতের সবচেয়ে বেশি অক্সিজেন সৃষ্টি করে আমাজন জঙ্গল। ওইটা যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে অস্তিত্ব ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা কামনা করি দাবানল নিভুক।’

গাছপালা আমাদের একটি অঙ্গ উল্লেখ করে সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ আরও বলেন, নিজের শরীরের অঙ্গ যেভাবে আমরা যত্ন করি, গাছ নামের এই অঙ্গের সেভাবে যত্ন নিতে হবে। এখন বর্ষাকাল, তাই গাছপালা লাগাতে হবে। ১১ প্রজাতির আড়াই হাজার গাছের চারা দিয়েছে বন বিভাগ। উপজেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের এই গাছ রোপণ করার আহ্বান জানাই।

সিলেট বন বিভাগ, টাউন রেঞ্জের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানে বিয়ানীবাজার উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিল।

বিয়ানীবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাজী আরিফুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাসুম মিয়া। অনুষ্ঠানে বিয়ানীবাজার পৌর মেয়র মো. আবদুস শুকুরসহ আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকসহ উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।