একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস এবং...

‘হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলা মৎস্য অফিসে পোনা মাছ অবমুক্তকরণ কর্মসূচিতে ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে। ৩৩৪ কেজির স্থলে মাত্র ৩০ কেজি পোনা অবমুক্ত করে কর্মসূচি সমাপ্ত করেছে মৎস্য অফিস।’ গতকাল শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় নিজের ফেসবুক আইডিতে এ রকম একটি স্ট্যাটাস দেন বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান। আজ শনিবার সকালে আবার সেই স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নেন তিনি।

উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা চেয়ারম্যান সূত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার জন্য মৎস্য পোনা অবমুক্ত করার জন্য সম্প্রতি এক লাখ টাকা বরাদ্দ আসে। এ টাকা দিয়ে গত শুক্রবার ৩৩৪ কেজি পোনা অবমুক্ত করার জন্য দিন ধার্য করা হয়। হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনের সাংসদ শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী প্রধান অতিথি হিসেবে ওই দিন উপজেলার দীননাথ সরকারি মডেল স্কুলের পুকুরে এ পোনা মাছ অবমুক্তকরণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।

বাহুবল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ খলিলুর রহমান ওই দিন উপজেলা মৎস্য অফিসের এ পোনা অবমুক্তকরণ কর্মসূচি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। বর্জন করেন উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।

এরপর রাতে সৈয়দ খলিলুর রহমান তাঁর ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি থেকে মৎস্য অফিসের ‘অনিয়মের চিত্র’ তুলে ধরেন। তাতে তিনি লেখেন, উপজেলার কালাপুর সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের পুকুরের জন্য ৩০ কেজি পোনা পাঠালে তা ওজন করে ১৫ কেজি পাওয়া যায়। কোন প্রতিষ্ঠানে কত কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে, তার হিসাব তুলে ধরেন তিনি। তাঁর হিসাবে ৩৩৪ কেজির স্থলে মাত্র ৩০ কেজি পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ফেসবুকে উপজেলা চেয়ারম্যানের ওই স্ট্যাটাস দেওয়ার পর রাত সাড়ে ১২টার দিকে বাহুবল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আয়শা হক তাঁর সরকারি বাসভবনে জরুরি সভা ডাকেন। এতে উপজেলা প্রশাসনের সব ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। এ সভা চলে ভোর সোয়া চারটা পর্যন্ত। সভা শেষে উপজেলা চেয়ারম্যানকে ফোন করে তাঁর ফেসবুক বক্তব্য তুলে নিতে বলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা।

সৈয়দ খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মৎস্য অফিসের অনিয়মের প্রমাণ পাওয়ায় নিজের দায়বদ্ধতা থেকেই তিনি তা ফেসবুকে তুলে ধরেন। ইউএনও আয়শা হক ভোর সোয়া চারটায় তাঁকে মুঠোফোনে ঘুম থেকে জাগিয়ে আলটিমেটাম দেন ওই ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য। তাঁরা এখন এ স্ট্যাটাসকে সরকারবিরোধী মন্তব্য হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন। যে কারণে তিনি আজ শনিবার সকালে তাঁর ফেসবুক স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নেন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আয়েশা হক প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান প্রশাসনের অংশ। তিনি যদি কোনো অনিয়ম দেখতে পান তাহলে তিনি পরিষদের সভা ডেকে তুলে ধরতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা না করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে সরকারবিরোধী মন্তব্য করেছেন। প্রশাসনের অনেকেই তাঁর সঙ্গে কাজ করতে অনীহা প্রকাশ করেন, যে কারণে ভোর সোয়া চারটায় তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানকে মোবাইল ফোনে বলে দেন তিনি যেন তাঁর স্ট্যাটাস প্রত্যাহার করে নেন। ইউএনও বলেন, এটা কোনো আলটিমেটাম নয়, তিনি তাঁকে অনুরোধ করেই বলেছেন।