উত্তরপত্র মূল্যায়নে ভুলের পরিমাণ কমছে না

চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম

এইচএসসি পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে নম্বর গণনা ও নম্বর বসানোতে ভুলের পরিমাণ কমছে না। এবার উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের সুযোগ নিয়ে অকৃতকার্য থেকে পাস করেছেন ৪৭ শিক্ষার্থী, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪ জন। আগের বছরগুলোতেও প্রায় কাছাকাছি ছিল এ সংখ্যা।

তবে উত্তরপত্র পুনর্মূল্যায়নের সুযোগ থাকলে ভুলের হিসাবটি আরও বড় দেখাত বলে মনে করছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও পরীক্ষার্থীরা। তাঁরা বলেন, পরীক্ষকদের গাফিলতির কারণে ভুলের শিকার হচ্ছেন পরীক্ষার্থীরা। এর ফলে অনেক শিক্ষার্থীর ফল অকৃতকার্য চলে আসে। এ কারণে ওই সব শিক্ষার্থীকে পুনর্নিরীক্ষণের ফল বের হওয়া পর্যন্ত নানা উৎকণ্ঠা, উদ্বেগ ও মানসিক যন্ত্রণায় সময় কাটাতে হয়।

শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, উত্তরপত্র মূল্যায়নে তিন ধরনের ভুল করছেন পরীক্ষকেরা। তাঁরা কিছু উত্তরপত্রে নম্বরের যোগফল সঠিক করেননি। আবার কিছু উত্তরের নম্বর যোগ করেননি। এর বাইরে ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও ভুল করেছেন কেউ কেউ। উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণ করতে গিয়ে ধরা       পড়ছে তা।

আগের বছরগুলোর চিত্র

চলতি বছর ১৬ হাজার ৬৭৬ জন পরীক্ষার্থী ৫৪ হাজার ২৭৫টি উত্তরপত্র পুনর্নিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেন। তাঁদের মধ্যে আগের ফলে অকৃতকার্য হওয়া ৪৭ শিক্ষার্থী পাস করেছেন। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪ জন। সব মিলিয়ে গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ২৯৭ জন শিক্ষার্থীর।

এ ছাড়া ২০১৮ সালে পুনর্নিরীক্ষণের আবেদন করে অকৃতকার্য থেকে পাস করেছিলেন ৫৪ শিক্ষার্থী। ওই বছর নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২০ জন। সব মিলিয়ে ৪০৯ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছিল। এর আগের বছর ২০১৭ সালে অকৃতকার্য থেকে পাস করেছিলেন ৫০ শিক্ষার্থী, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছিলেন ২৩ জন। গ্রেড পরিবর্তন হয় সব মিলিয়ে ৮৬ শিক্ষার্থীর। সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছিল ২০১৬ সালে। সে বছর অকৃতকার্য থেকে পাস করেছিলেন ৮৬ শিক্ষার্থী। নতুন করে জিপিএ-৫ পান ৩৯ জন। গ্রেড পরিবর্তন হয় ৩২৯ জনের।

সময় বেশি পেয়েও ভুল বেশি

এবার সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে ইংরেজি প্রথমপত্র বিষয়ে। এ বিষয়ে ৭ হাজার ১৬৬টি আবেদন জমা পড়ে। ইংরেজি দ্বিতীয় পত্র বিষয়ে আবেদন জমা পড়ে ৫ হাজার ৮৪৯টি। এ ছাড়া বাংলা প্রথমপত্রে ৩ হাজার ৪৮৭টি, বাংলা দ্বিতীয়পত্রে ৩ হাজার ১০০, ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রে ৫ হাজার ৮৪৯, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৩১৪টি। অন্য বিষয়ের পরীক্ষকেরা যেখানে উত্তরপত্র মূল্যায়নের জন্য ১৫ দিনের মতো সময় পেয়েছেন সেখানে এই পাঁচটি বিষয়ের পরীক্ষকেরা পেয়েছেন ৪০ থেকে ৪৫ দিন। কিন্তু শিক্ষা বোর্ড সূত্র জানায়, এই পাঁচটি বিষয়েই সবচেয়ে বেশি ভুলের শিকার হয়েছেন শিক্ষার্থীরা। সময় বেশি পেলেও পরীক্ষকেরা তাড়াহুড়ো করে ভুল করেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

শাস্তি দিয়েও কমছে না ভুলের পরিমাণ

উত্তরপত্র মূল্যায়নে ‘অবহেলা ও অমার্জনীয় ভুলের’ জন্য গত বছর ২৫০ জন পরীক্ষকের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছিল শিক্ষা বোর্ড। ভুলের মাত্রা অনুযায়ী তাঁদের এক থেকে তিন বছর পর্যন্ত পাবলিক পরীক্ষার উত্তরপত্র মূল্যায়নের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এ ছাড়া উত্তরপত্র পরীক্ষকদের হাতে তুলে দেওয়ার আগে শিক্ষা বোর্ডের উদ্যোগে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে প্রধান পরীক্ষকেরা নিয়মাবলি সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি পরীক্ষকদের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে অবহেলা ও গাফিলতি না করার জন্য সতর্ক করে দেন। কিন্তু এসবের পরেও কমছে না ভুলের পরিমাণ।

যাঁরা উত্তরপত্র মূল্যায়নে অমার্জনীয় ভুল করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মোহাম্মদ মাহবুব হাসান।

তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ইচ্ছাকৃত ও অনিচ্ছাকৃত—দুভাবেই ভুল হচ্ছে। যাঁরা ইচ্ছাকৃত ভুল করেছেন তাঁদের বিরুদ্ধে আগেও ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল। এবারও একই রকম সিদ্ধান্ত হবে।