কিশোরগঞ্জে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ডেঙ্গু-আতঙ্কে

কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকা। এখানে রয়েছে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সরকারি কার্যালয়। এমন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে জলাবদ্ধতা। গতকাল বৃহস্পতিবার তোলা ছবি।  প্রথম আলো
কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকা। এখানে রয়েছে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমসহ গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সরকারি কার্যালয়। এমন স্থানে দীর্ঘদিন ধরে রয়েছে জলাবদ্ধতা। গতকাল বৃহস্পতিবার তোলা ছবি। প্রথম আলো

কিশোরগঞ্জ শহরের পুরাতন কোর্ট এলাকায় রয়েছে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুম, জেলা তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়, মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরের কার্যালয়, জেলা শিশু একাডেমি কার্যালয়, পুলিশের যানবাহন নিয়ন্ত্রণ কার্যালয় ও বিআরটিএর কার্যালয় এবং একটি বড় মসজিদ। তা ছাড়া আছে শতাধিক আবাসিক ঘরবাড়ি।

কিন্তু প্রায় আট বছর ধরে সামান্য বৃষ্টি হলেই এসব কার্যালয়ের সামনে ও আশপাশে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি না থাকলে কয়েক দিনে আশপাশের পানি সরলেও পুরো বর্ষাকালে কার্যালয়গুলোর সামনের অংশে পানি জমে থাকে। এমনকি গত কয়েক দিনের কড়া রোদে শহরের আনাচকানাচে ও অনেকের বাসার ছাদে জমে থাকা বৃষ্টির পানি শুকিয়ে গেছে। কিন্তু এই পুরাতন কোর্ট এলাকায় সরকারি কার্যালয়ের সামনে এখনো হাঁটুপানি জমে আছে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুম ও জেলা তথ্য কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে প্রায় হাঁটুপানি জমে আছে। আগে যে পানিতে ময়লা-আবর্জনা ছিল, সেখান থেকে কিছু ময়লা-আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তবে পানি নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় এখন আটকে আছে স্বচ্ছ পানি। এমন জমাটবদ্ধ স্বচ্ছ পানিতে এডিস মশা বংশবিস্তার করে। এলাকার অনেকেই এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে। এ কারণে এখানে ছয়টি সরকারি কার্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং এই জেলার দূরদূরান্ত থেকে সেবা নিতে আসা অসংখ্য মানুষ ডেঙ্গু–আতঙ্কে রয়েছে।

আবদুল্লাহ আল মামুন, মারুফ আহমেদসহ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, এটা শহরের ভিআইপি এলাকা। এই পুরাতন কোর্ট এলাকার পাশেই জেলা প্রশাসক, জেলা জজ, পুলিশ সুপারের বাসভবনসহ রয়েছে বিভিন্ন সরকারি কার্যালয়। আছে মহিলা কলেজ ও বিয়াম ল্যাবরেটরি ইংলিশ ভার্সন স্কুলসহ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু বৃষ্টি হলে এখানেই সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। সবচেয়ে বড় আতঙ্কের বিষয়, বর্তমানে সারা দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপের সঙ্গে কিশোরগঞ্জেও প্রতিদিন স্থানীয়ভাবে কোনো না কোনো মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। জেলা সদর হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীতে ঠাসা। এরপরও কর্তৃপক্ষ এডিস মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযুক্ত জায়গাটি থেকে দীর্ঘদিন ধরে জমে থাকা পানি সরানোর কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এ কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা আতঙ্কের মধ্যে আছে।

এখানে অবস্থিত জেলা তথ্য কার্যালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মো. শামছুল হক বলেন, ‘সারা দেশের মতো স্থানীয়ভাবেও যখন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর কথা শুনি, তখন খুবই আতঙ্কে থাকি। কিন্তু অফিস তো আর কামাই দেওয়া যায় না। ফলে অনেক ভয়ভীতির মধ্যে নিয়মিত কার্যালয়ে এসে দাপ্তরিক কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের নিজেদের উদ্যোগে কিছুটা ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করতেও পারলেও পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে পানি সরানো যাচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে এখানে অনেক পানি আটকে আছে। বলা চলে, আমরা সবাই এখানে ডেঙ্গুর সঙ্গে বসবাস করছি। এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ পৌরসভা কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। তারাও এসে আমাদের দুর্ভোগের এই চিত্র দেখে গেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।’

স্থানীয়ভাবে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত এই পুরাতন কোর্ট এলাকার বাসিন্দা শহরের এসভি সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক ইসরাত জাহানও বলেন, তিনি এক বছর ধরে ঢাকায় যাননি। কিন্তু তিনি ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বর্ষা এলে পুরাতন কোর্ট প্রাঙ্গণে সব সময় পানি আটকে থাকে। তা ছাড়া বৃষ্টি হলেই এলাকার নালা-নর্দমাসহ রাস্তাগুলোও ময়লা-আবর্জনায় ভর্তি হয়ে যায়। যা থেকে মশার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া বলেন, পুরো পৌরসভায় মশার ওষুধ ছিটানোর মহাযজ্ঞ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই পুরাতন কোর্ট এলাকায়ও দুই দিন ওষুধ ছিটানো হয়েছে। আরও ছিটানো হবে। তা ছাড়া শহরের অনেক জায়গায় বড় নালা নির্মাণ করে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকেও পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

গুরুদয়াল সরকারি কলেজের স্নাতক প্রথম বর্ষের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মারুফা আক্তার স্থানীয়ভাবে এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন।জেলায় এ পর্যন্ত মোট ৯৫০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. হাবিবুর রহমান বলেন, এখন ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় কোথাও পানি আটকে থাকা বিপজ্জনক। আর সেটা যদি হয় স্বচ্ছ পানি, তাহলে আরও ভয়ংকর উদ্বেগ ও আতঙ্কের বিষয়।