নিজ গ্রামে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মোজাফফর আহমদ

মোজাফফর আহমদের জানাজায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। ছবি: প্রথম আলো
মোজাফফর আহমদের জানাজায় অংশ নেন বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ। ছবি: প্রথম আলো

বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার এলাহাবাদ গ্রামের নিজ বাড়িতে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয়েছে। আজ রোববার বাদ জোহর এলাহাবাদ গ্রামে চতুর্থ জানাজা শেষে ‘চেতনায় মুক্তিযুদ্ধ’ কার্যালয়ের দক্ষিণ পাশে তাঁর দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে সকাল ১০টায় কুমিল্লা টাউন হল মাঠে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে কুমিল্লার সর্বস্তরের মানুষ, রাজনৈতিক নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, সরকারি কর্মকর্তা, শিক্ষক ও বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার মানুষ অংশ নেন। এলাহাবাদের জন্মভূমির মাটিতেই তাঁকে চিরনিদ্রায় শায়িত করার সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর রাজনৈতিক অনুজ সহযোদ্ধা ও ন্যাপের নেতা–কর্মীরা।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্সাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। ১৯২২ সালের ১৪ এপ্রিল কুমিল্লার দেবীদ্বারের এলাহাবাদ গ্রামের স্কুলশিক্ষক কেয়াম উদ্দিন ভূঁইয়া ও আফজারুন্নেছার ঘরে জন্ম নেন এই কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের বোনের ছেলে কুমিল্লার ইতিহাসবিদ ও আইনজীবী গোলাম ফারুক জানান, আজ সকাল ১০টায় কুমিল্লা টাউন হলে মোজাফফর আহমদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন কুমিল্লা-৬ আসনের সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন, কুমিল্লার জেলা প্রশাসক আবুল ফজল মীর, জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম, ন্যাপের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোহাম্মদ আলী, ন্যাপ কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি জাকির হোসেন, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি প্রবীণ নেতা মফিজুর রহমান, কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের সহসভাপতি ওমর ফারুক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা নাজমুল হাসান, কুমিল্লা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার সফিউল আহমেদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পাটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুল্লাহ আল কাফী, কুমিল্লা শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন, যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের সাবেক হাইকমিশনার আবদুল হান্নান ও কুমিল্লা জেলা বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক সমিতির সভাপতি হাসান ইমাম মজুমদার।

জানাজায় সাংসদ আ ক ম বাহাউদ্দিন বলেন, ‘বাংলাদেশের একজন আত্মত্যাগী মানুষ ছিলেন অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। তিনি সদালাপী মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। বাংলাদেশ এক বিশাল হৃদয়ের মানুষকে হারাল।’

কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ন্যাপপ্রধান ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কফিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ছবি: প্রথম আলো
কুমিল্লা টাউন হল মাঠে ন্যাপপ্রধান ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের কফিনে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান বিশিষ্ট ব্যক্তিরা। ছবি: প্রথম আলো

পরে কুমিল্লা টাউন হল মাঠে কুমিল্লার বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, পেশাজীবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠন তাঁর কফিনে ফুলেল শুভেচ্ছা দেয়।

এদিকে আজ বাদ জোহর অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের গ্রামের বাড়ি এলাহাবাদে শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, কুমিল্লা-৪ (দেবীদ্বার) আসনের সাংসদ রাজী মো. ফখরুল, সাবেক সাংসদ মঞ্জুরুল আহসান মুন্সী, জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ইকবাল হোসেন, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কেন্দ্রীয় সভাপতি হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি কুমিল্লা জেলার সভাপতি এ বি এম আতিকুর রহমান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জয়নুল আবেদীন, ন্যাপ উপজেলা সভাপতি অনিলচন্দ্র ঠাকুর, সাধারণ সম্পাদক মমিনুর রহমান, যুব ইউনিয়ন কুমিল্লা জেলা সভাপতি এ কে এম মিজানুর রহমান ও গ্রামবাসীর পক্ষে মুরাদনগরের শ্রীকাইল সরকারি কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক আক্তার হোসেন সরকার।

জানাজা শুরুর আগে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর পরে একজন মানুষই ছিলেন সম্মান করার মতো। তিনি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। এখন তিনিও চলে গেলেন। এখন আর সম্মান করার মতো কেউ রইল না।’
দেবীদ্বারের এলাহাবাদেও প্রয়াত নেতাকে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান সর্বস্তরের মানুষ।